কোরবানির ঈদের বাকি আর মাত্র দুইদিন। কামারপাড়ায় তাই রাজ্যের ব্যস্ততা। কামারের হাপরে আগুনের শিখায় শান দেওয়া হচ্ছে দা, বটি, ছুরি। হাতুরির টুংটাং শব্দে কামারদের সঙ্গে এ সময় কথা বলাই কঠিন।
নগরের সব কামারশালার চিত্রই এখন এমন। দোকান ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ দা-ছুরি শান কারিগরদের দেখা মিলছে নগরের অলিগলিতে।
নগরের জেল রোড, আকবর শাহ ও একে খান এলাকায় কামারের দোকানে গিয়ে দেখা গেছে প্রচণ্ড ভিড়। দোকানগুলোতে লোহার মানভেদে চামড়া ছাড়ানো ছুরি ৫০ থেকে ৩০০ টাকায়, দা ১৫০ থেকে ৮০০ টাকায়, পশু জবাইয়ের ছুরি ৩০০ থেকে ১৮০০ টাকায়, বটি ২৫০ থেকে ৬০০ টাকায় ও চাপাতি ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আকবর শাহ এলাকার কর্মকার বিল্লাল হোসেন জয়নিউজকে বলেন, বৃষ্টির কারণে ক্রেতা কিছু কম। লোহা ও কয়লার দামও বাড়তি। তাই আমাদের বাধ্য হয়েই বেশি দামে দা-ছুরি বিক্রি করতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সব দোকানেই কমবেশি ক্রেতা আসছে। ব্যস্ত কামাররা শান দিচ্ছেন কোরবানির পশু জবাইয়ের উপকরণ দা-ছুরি-চাপাতিতে।
ওয়্যারলেস এলাকা থেকে আকবর শাহে ছুরি ও দা বানাতে এসেছেন রনি। তিনি জয়নিউজকে বলেন, কোরবানির জন্য নতুন দা-বটির প্রয়োজন। দেড় হাজার টাকায় দুটি বড় দা বানালাম। ছোট ছুরিও নিয়েছি কয়েকটা। গতবারের চেয়ে এবার দাম অনেক বেশি বলেই জানালেন তিনি।
জেল রোডের কয়েকটি কামারের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, অনেকেই এসেছেন পুরানো দা, ছুরি ও বটিতে শান দিতে। শান কারিগর শুক্কুর জয়নিউজকে বলেন, এখন আগের মতো সারাবছর আর দা-বটি বিক্রি হয় না। সারাবছর বিভিন্ন মেলা হওয়ায় মানুষ সেখান থেকেই এসব গৃহস্থালি পণ্য কিনে নেয়। শুধু কোরবানের ঈদ আসলেই সবাই আমাদের দোকানে আসে। এই সময়টায় তাই বাড়তি কাজ করে কিছুটা লাভ করি।
ছুরি-চাপাতি শান দিতে আসা মাছুম জয়নিউজকে বলেন, গতবছর নতুন চাপাতি-ছুরি কিনেছিলাম। একবছরে সেগুলোতে জং ধরেছে ব্যবহার না হওয়ায়। তাই শান দিতে এসেছি।
তার অভিযোগ, দা-ছুরি শান দিতেও অনেক টাকা নিচ্ছে। আগে যেখানে শান দিতে ৪০ টাকা নেওয়া হতো, এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে নগরের বিভিন্ন অলিতে-গলিতে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, ‘ধার করাইবেন দা-ছুরি-বটি’ এমন ডাক। শান মেশিন কাঁধে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ এ কারিগররা চষে বেড়াচ্ছেন সারাশহর।
নোয়াখালী থেকে এসেছেন মামুন আর সুমন। সারাবছর অন্য কাজ করলেও কোরবানির ঈদে এই পেশায় আসেন। এতে নাকি বেশ লাভ হয় তাদের। জয়নিউজকে তারা বলেন, আকারভেদে প্রতিটি দা-ছুরি-চাপাতিতে শান দিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত নিই।