হালদা নদী দূষণের দায়ে চট্টগ্রাম এশিয়ান পেপার মিলস (প্রা.) লিমিটেড কারখানার উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
রোববার (১৮ আগস্ট) দুপুরে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহানগরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক তার কার্যালয়ে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এতে প্রায় ১২ বছরের দূষণের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পেল হালদা নদী।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সংযুক্তা দাশগুপ্তা। তিনি বলেন, এর আগে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ আরোপ ও সতর্ক করা হলেও তারা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির ছেড়ে দেওয়া বর্জ্য ও বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সংগৃহীত পানির নমুনা সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করে যে মান-মাত্রা পাওয়া যায় তা পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭ এর মান মাত্রাবহির্ভূত, বলেন তিনি।
এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জয়নিউজকে বলেন, আমাদের ইটিপি স্থাপনের যে পরিকল্পনা সে অনুযায়ী দ্রুত কাজ শেষ করতে বলেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। ওই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপাতত উৎপাদন বন্ধ রাখতে বলেছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের ২৫ মে রাতে হালদা নদীতে ডিম ছাড়ে রুই জাতীয় (রুই, কাতাল, মৃগেল ও কালিবাউশ) মা মাছ। সে রাত থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত ডিমসংগ্রহ করেন ডিম আহরণকারীরা। ২৬ মে সকালে মাদারি খালের লালচে’ পানি দেখতে পেয়ে এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে লিখিত প্রতিবেদন জমা দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুহুল আমীন।
তাছাড়া ও ৩০মে রাউজান উপজেলায় সত্তারঘাট এলাকায় হালদা নদীর পাড়ে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার স্থানীয় বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে এশিয়ান পেপার মিলের বিরুদ্ধে মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
এরপর ১০ জুনই একই অপরাধে এশিয়ান পেপার মিলকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। তখন এক মাসের মধ্যেই ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) কার্যকর করার নির্দেশ দেয় অধিদপ্তর। তবে দুই মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও পেপার মিল কর্তৃপক্ষ সে কাজ শেষ করতে পারেনি বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগের সহকারী পরিচালক মুক্তাদির হাসান।
তিনি আরও জানান, এরমধ্যে ওই ঘটনার দুই মাসের মাথায় এশিয়ান পেপার মিলের বিরুদ্ধে আবার হালদা নদী দূষণের অভিযোগ উঠে। শনিবার (১০ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টায় মিল সংলগ্ন মরাছড়া (একুতি ছড়া) ও পার্শ্ববর্তী খালে অপরিশোধিত তরল বিষাক্ত বর্জ্য ছাড়ার প্রমাণ পেয়েছেন ইউএনও রুহুল আমিন।
পরদিন ১১ আগস্ট কারখানাটি ফের পরিদর্শন করেন ইউএনও এবং হালদা গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া।
এরমধ্যে ১৪ আগস্ট পরিদর্শনে যান পরিবেশ অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তা। এসময় ওই পরিদর্শকদলের সদস্যদের কাছে প্রতিষ্ঠানটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই নাজুক মনে হয়।
এদিকে শুনানির পর জরুরিভিত্তিতে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ত্রুটি সংশোধন করে ইটিপি সার্বক্ষণিক চালু রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ ও পরিবেশসম্মত স্লাজ অপসারণের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এসব ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত কারখানার উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শুনানিতে এশিয়ান পেপার মিলস লিমিটেডের পক্ষে অংশ নেন প্রতিষ্ঠানটির চিফ কেমিস্ট মোরশেদ আলম চৌধুরী, জেনারেল ম্যানেজার রঘুনাথ চৌধুরী এবং প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. শফিউল আলম।
প্রসঙ্গত, ১৭ জুলাই এর আগে বর্জ্য তেল নিঃসরণ করে হালদা দূষণের অভিযোগে ‘ইটিপি নির্মাণ ও অয়েল সেপারেটর কার্যকর না করা পর্যন্ত’ হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টটি বন্ধ রাখারও নির্দেশ দিয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর।