নাহিদা-মুরাদ ভালোবেসে ঘর বেঁধেছিলেন দূরদেশে। বন্ধু-স্বজনের উপস্থিতি ছিল না সেই আয়োজনে। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টেছে, পার হয়েছে সময়। দেশে ফেরাও হয়েছে তাদের। তবে এই দম্পতিকে বরণ করতে হয়নি কোনো সাড়ম্বর আয়োজন।
নাহিদার ভাই ফরহাদ তাই নিলেন অন্যরকম এক উদ্যোগ। এই দম্পতিকে বরণ করে নেওয়া হবে ব্যতিক্রমী এক আয়োজনে। লন্ডনপ্রবাসী নাহিদা আকতার টিটু ও আবদুল ওয়াহেদ মুরাদ সাজলেন বর-কনে। রীতিমতো বিয়ের জমকালো আয়োজন।
তবে অনুষ্ঠানটির মূল আকর্ষণ কিন্তু নাহিদা-মুরাদ নন। আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল শতাধিক প্রতিবন্ধী শিশু!
‘বর-কনে’ বসেছিলেন মঞ্চে। তাদের পাশে প্রতিবন্ধী শিশুরা মেতে উঠেছিল আনন্দ উল্লাসে। নাচ-গান খেলাধুলার পর তাদের জন্য ছিল উপহার। পরে তারা অংশ নেয় প্রীতিভোজেও।
শনিবার (২৪ আগস্ট) নগরের স্মরণিকা কমিউনিটি সেন্টারে মিনহাজ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
জানা যায়, মিনহাজ ফাউন্ডেশনের এমন উদ্যোগের পিছনে ছিল চাপা এক কষ্টের কাহিনি। প্রবাসী নাহিদা-মুরাদ দম্পতি সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধী সন্তান মিনহাজকে নিয়ে গেলে পড়তেন নানা বিড়ম্বনায়।
এক বিয়েতে মিনহাজকে নিয়ে রীতিমতো অপমানজনক পরিস্থিতির সামনে পড়তে হয়। এরপর এই দম্পতি সিদ্ধান্ত নেন মিনহাজকে দেওয়া লন্ডন সরকারের সব অর্থ তারা ব্যয় করবেন দেশের অন্য প্রতিবন্ধী শিশুদের কল্যাণে।
সেই সূত্রেই শনিবার তাদের জীবনের স্মরণীয় এ আয়োজনে সামিল করা হয় প্রতিবন্ধী শিশুদের।
অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে এসেছিলেন সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, সৃষ্টিকর্তা যে কাউকে এমন সন্তান দিতে পারেন। আমাদের যাদের স্বাভাবিক সন্তান রয়েছে তাদের প্রতিবন্ধীদের জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তনয়া সায়মা ওয়াজেদ পুতুল সারাবিশ্বে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমান সরকারও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিভিন্ন কাজ করছে।
মিনহাজ ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তা ও মিনহাজের মামা মো. ফরহাদ উদ্দিন উল্লাস জয়নিউজকে বলেন, বাংলাদেশে প্রতি দশ হাজার শিশুর মাঝে ১৭ জন শিশু জন্ম নেয় প্রতিবন্ধী হয়ে। এরা যেন পরিবারের বোঝা না হয় সে লক্ষ্যে আমরা আমাদের অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিবছর বিভিন্ন এনজিও’র সহযোগিতায় আমরা এমন আয়োজন করে থাকি।
পুরো অনুষ্ঠানে ছিল হাজারো মিনহাজদের জন্য ভালোবাসা আর সহমর্মিতা। প্রতিবন্ধীরাও যে অন্যদের মতো পরিবার আর দেশের সম্পদ সেটাই যেন স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল স্মরণিকা ক্লাবের প্রতিটি চেয়ার। ব্যতিক্রমী এ আয়োজনে সঞ্চালনায় ছিলেন মিরাক্কেল তারকা ইয়াকুব রাসেল।