মানসিক ভারসাম্যহীন আয়েশার চিকিৎসা চলছে মানসিক ওয়ার্ডে। তার চিৎকার-চেঁচামেচিতে অস্থির ওয়ার্ডের অন্য রোগীরা। তাই বাধ্য হয়ে বেঁধে রেখে চলছে তার চিকিৎসা।
অপরদিকে শিশু ওয়ার্ডে চলছে আয়েশার নবজাতকের চিকিৎসা। মা ভারসাম্যহীন, তাই ওয়ার্ডের অন্য মায়েরা পালা করে দুই ঘণ্টা পরপর বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তাকে। মাকে ছাড়াই ইকিকিউবিটরে নিবিড় চিকিৎসা চলছে এই নবজাতকের।
সোমবার (২৬ আগস্ট) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র।
শিশু ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা জয়নিউজকে জানান, নবজাতকের ওজন মাত্র ১৭শ’ গ্রাম। ডাক্তার-নার্সদের অনুরোধে শিশুটিকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন অন্য মায়েরা। তবে সবসময় তা সম্ভব হচ্ছে না, তাই শিশুটির ওজনও বাড়ছে না। এ অবস্থায় তার সুস্থ থাকা নিয়ে শঙ্কিত চিকিৎসকরা।
অপরদিকে মানসিক ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা জানান, আয়েশার চিৎকার-চেঁচামেচির কারণে দিনের বেশিরভাগ সময় তাকে বেঁধে রাখতে হচ্ছে। সিটি স্ক্যানসহ সকল চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়েছে আয়েশার।
এর আগে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) ভোর ৫টায় আগ্রাবাদ সোনালী ব্যাংকের সামনে দায়িত্ব পালনকালে কুকুরের মুখ থেকে নবজাতকটিকে উদ্ধার করেন ডবলমুরিং থানার এসআই মোস্তাফিজুর রহমান (৫৫)। আর নবজাতকের মাকে পাওয়া যায় আরেকটু এগিয়ে জনতা ব্যাংকের সামনে। এরপর তিনি স্থানীয় শাহিনুর আক্তারের সহায়তায় তাদের চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
এদিকে নবজাতককে দত্তক নিতে চাইছেন অনেকেই। তবে এ প্রক্রিয়াটি কোর্টের মাধ্যমে করতে হওয়ায় পিছিয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ। তবে শিশুটি পরিপূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাকে হস্তান্তর করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. জগদীশ চন্দ্র দাশ।
তিনি জয়নিউজকে বলেন, শিশুটিরতো মায়ের কাছেই থাকার কথা। কিন্তু মা মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে তার পর্যাপ্ত বুকের দুধ মিলছে না। এ কারণে শিশুটির ওজন ১৭ গ্রাম থেকে বাড়ছে না। যেটি চিন্তার বিষয়। আমাদের ওয়ার্ডে ১৫৭ জন শিশু আছে। অন্য সবার মতো শিশুটিকেও বিশেষ পরিচর্যায় রাখা হয়েছে। এখানে কেউ আসলে সুস্থ নয়। তাই নির্দিষ্ট করে বলা ঠিক হবে না কতদিনের মধ্যে সে সুস্থ হবে। তবে যত সময়ই লাগুক তাকে আমরা এখানে রাখবো।
শিশুটির নিরাপত্তায় হাসাপাতালে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন ডবলমুরিং থানার নারী কনস্টেবল লাখি আক্তার। আর আয়েশার সঙ্গে আছেন উদ্ধারের সময় থাকা স্থানীয় শাহিনুর আক্তার।
শাহিনুর জয়নিউজকে বলেন, এরমধ্যে আয়েশা একবার পালিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে পুলিশ তাকে ধরে আনে। শিশুটিকে কয়েকবার তার কাছে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবার বাচ্চাটিকে কাছে দিতেই সে মেরে ফেলতে চাইছে। শিশুটি যতদিন সুস্থ কোনো মায়ের কোল না পাচ্ছে ততদিন আমি হাসপাতালে থাকবো।
এসআই মোস্তাফিজুর রহমান জয়নিউজকে বলেন, দায়িত্ব শেষে আগ্রাবাদ মোড়ে দাঁড়িয়ছিলাম। হঠাৎ চোখের সামনে জীবন্ত একটা শিশুকে কুকুর টানাটানি করছে দেখে এগিয়ে গিয়ে উদ্ধার করি। স্থানীয় শাহীনুর আক্তারের সহযোগিতায় দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাই। বাচ্চাটিকে বাঁচাতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এখন মা ও মেয়ে দুজনেই সুস্থ আছে।
চিকিৎসার সব খরচ তিনিই বহন করছেন জানিয়ে বলেন, প্রতিদিন মা-শিশুর অনেকগুলো টেস্ট করতে হচ্ছে। এছাড়া শাহীনুর আক্তারকেও টাকা দিয়ে হাসপাতালে তাদের দেখভালের জন্য রেখে দিয়েছি।
এরমধ্যেই অনেকই শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিশুটি আরও সুস্থ হলে সব দিক বিবেচনা করে কোনো এক দম্পতির কাছে দায়িত্ব দেওয়া হবে। সেটা কোর্ট কিংবা থানায় জিডি মূলে হতে পারে।