চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) স্টেশন চত্বরে বেশ দাপটের সঙ্গে ঘুরে বেড়াত সে। খুব সহজেই ভাব জমিয়ে ফেলত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। আর তাই অনেক সময় ছাত্র-ছাত্রীরা নিজের নাশতাও ভাগ করত তার সঙ্গে।
বলছি চবি ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের প্রিয় কুকুরটির কথা। আদর করে দেশি জাতের কুকুরটির নাম রাখা হয়েছিল ‘জনি’। শুধু স্টেশনই না, পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে ঘুরে বেড়াত সে। কখনও তাকে দেখা যেত স্টেশন কিংবা জিরো পয়েন্টের সামনে। আবার আবাসিক হলের ছাত্রদের মধ্যরাতের সঙ্গী হিসেবেও খ্যাতি ছিল তার।
ছিল বলা এ কারণে, জনি মারা গেছে মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাতে। তার মৃত্যুতে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন অনেকে। তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করছেন নানা স্মৃতিচারণ।
রাতে চবির স্টেশন চত্বরে সবার অজ্ঞাতে মারা যায় জনি। রাত ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে তার নিথর দেহ দেখে প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন একজন। এরপর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে খবর। ক্যাম্পাসের প্রিয় পশুটির মৃত্যুতে অনেকেই মুহ্যমান হয়ে পড়েন।
কয়েক বছর আগে জনির ভক্তরা খুলেছিলেন ‘জনি- দ্য লিজেন্ড অব সিইউ স্টেশন’নামের ফেসবুক পেজ।
সে পেজ থেকে তার মৃত্যুর পর স্ট্যাটাস দেওয়া হয় ‘অবশেষে আমি হারিয়ে গেলাম…।’
এভাবে ফেসবুকে তাকে নিয়ে ফেসবুকে শোকগাথা লিখেছেন অনেকেই।
তামজিদ কামরান নামে এক ছাত্র ফেসবুকে লিখেছেন, ‘প্রভুবিহীন কুকুর হয়েও যে এত অনুগত হয় তা জনিকে না দেখলে জানতাম না। মানুষ বেঈমান হয়, কুকুর না।’
রফিকুল ইসলাম নামে আরেক ছাত্র লিখেন, ‘জনি বলে ডাক দিলে আর দৌঁড়াই আসবে না কোনদিন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার প্রিয়, বন্ধুত্বপূর্ণ, দাপুটে জনি। জনি ভালো থাকিস, চবি স্টেশন তোকে মিস করবে।’
এত ভালোবাসার জনির মরদেহটি অন্য আর দশটা রাস্তার কুকুরের মতো ভাগাড়ে যায়নি। জনির ভক্তরা তার মৃতদেহটি অশ্রুসিক্ত নয়নে কবর দিয়েছেন।
বুধবার (২৮ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে স্মৃতিবিজড়িত স্টেশন চত্বরেই জনির কবর দেওয়া হয়।
পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষের এ যুগে ‘জনি’র জন্য এ শোকগাথা মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বটে।