আফগানদের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশকে ছুঁড়ে দেওয়া ৩৪২ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমেই স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ করার আগেই ওপেনার সাদমান ইসলামকে ফিরিয়ে দিলেন আফগান পেসার ইয়ামিন আহমদজাই। শুরুতেই উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ তাই মধ্যাহ্নভোজের আগে ৪ ওভার ব্যাট করে তুলেছেন মাত্র এক রান। ক্রিজে আছেন সৌম্য সরকার ও লিটন দাস।
চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই আসগর আফগান আউট হয়ে যান সেঞ্চুরির আগেই। দিনের চতুর্থ ওভারের শেষ বলে তাইজুলকে স্লগ করতে যান আসগর। কিন্তু বল ব্যাটের উপরের কানায় লেগে উপরে উঠে গেলে ক্যাচটা সহজেই লুফে নেন মুশফিকুর রহিম।
১৭৪ বলে খেলা ৯২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেললেন আসগর। ৩টি বাউন্ডারির সঙ্গে ২টি ছক্কাও মেরেছিলেন আসগর। আফসার জাজাইয়ের সঙ্গে ৮১ রানের দারুণ একটি জুটি গড়েই বিদায় নেন তিনি।
৪১ রানে তাইজুলের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন আফসার জাজাই। অধিনায়ক রশিদ খান ৫১ রান দ্রুত তুললেও ধরা পড়েন মেহেদির তালুতে কড এন্ড বোল্ড হয়ে। এছাড়া কায়েস আহমেদ ৯ রানে আর আহামদজাই শূন্য রানে ফেরেন সাকিবের জাদুতে। সবমিলিয়ে ৩৪২ রানে থামে আফগানিস্তানের রানের চাকা।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম টেস্টে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় আফগান অধিনায়ক রশিদ খান। ইংসের শুরুতে তাইজুল ইসলামকে দিয়ে সূচনা করিয়ে। দ্বিতীয় ওভারে হাত ঘুরিয়েছিলেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান নিজেই। এর আগে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা বেশ ধীরে করলেও দ্বাদশ ওভারে বাংলাদেশের অপেক্ষার অবসান ঘটান তাইজুল।
আফগান ওপেনার ইব্রাহিম জাদরানকে সরাসরি বোল্ড করে নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের এ মাইলফলকে পৌঁছান বাংলাদেশের এই বাঁ-হাতি স্পিনার। সরাসরি বোল্ড হয়ে যান ইব্রাহিম, বনে যান তাইজুলের শততম শিকার।
এর মাধ্যমে ১০০ উইকেটে বাংলাদেশের দ্রুততম বোলার হয়ে যান তাইজুল। এরপর দ্বিতীয় উইকেটও আসে তাইজুলের হাত ধরেই। ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান খেলে যাচ্ছিলেন টেস্ট মেজাজে। কিন্তু ২৫তম ওভারে আর মনোযোগ ধরে রাখতে পারেননি ডানহাতি এ ওপেনার। উইকেট ছেড়ে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে বড় শট খেলতে গিয়ে তিনি ধরা পড়েন লংঅফে দাঁড়ানো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে। ৪৮ রানের মাথায় আউট হওয়ার আগে ৬৯ বল খেলে ৩ চারের মারে ২১ রান করেন ইব্রাহিম।
শুরুর ধীর গতির ব্যাটিং পাশ কাটিয়ে তৃতীয় উইকেটে সাবলীলভাবে খেলতে শুরু করেছিলেন রহমত শাহ এবং হাশমতউল্লাহ শহিদি। কিন্তু তাদের রণে ভঙ্গ করান ডানহাতি অফস্পিনার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। নিজের চতুর্থ বলেই সাজঘরে পাঠিয়ে দিয়েছেন চার নম্বরে নামা হাশমতউল্লাহকে। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে প্রথম স্লিপে থাকা সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
বাংলাদেশের স্পিনারদের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়ান রহমত শাহ। দলীয় ১৯ রানের মাথায় ক্রিজে আসা আফগান এই ব্যাটসম্যান ১৯৭ রান পর্যন্ত উইকেটেই কাটিয়ে দেন, গড়েন একের পর এক জুটি। সেই সঙ্গে তুলে নেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি।
শেষ পর্যন্ত রহমতের প্রতিরোধ ভাঙেন বাংলাদেশের তরুণ স্পিনার নাইম হাসান। আগের বলে দারুণ এক বাউন্ডারিতে সেঞ্চুরি পূরণ করেন রহমত, পরের বলেই তাকে ঘূর্ণিফাঁদে ফেলেন এই অফস্পিনার। স্লিপে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আফগান টেস্ট ইতিহাসের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান। ১৮৭ বলে গড়া তার ১০২ রানের ইনিংসটি ছিল ১০ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় সাজানো। নাইমের ঘূর্ণিতে এবার কুপোকাত মোহাম্মদ নবী (০), ফেরেন বোল্ড আউটে। তাতে দুশর আগেই (১৯৭ রানে) ৫ উইকেট হারিয়ে কিছুটা বিপদে পড়েছিল সফরকারীরা।
তবে ষষ্ঠ উইকেটে আবারও টাইগারদের বোলারদের হতাশা উপহার দেন দুই ব্যাটসম্যান আসঘর আফগান আর আফসার জাজাই। আফগান ৮৮ আর আফসার ৩৫ রানে দিয়ে প্রথমদিন অবিছিন্ন থেকে খেলা শেষ করেন।
জয়নিউজ/পিডি