আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের মিল রাখতে পারছে না চট্টগ্রাম ওয়াসা। প্রতিদিন দীর্ঘ হচ্ছে অমিলের হিসাবটি। সঙ্গে আছে বিশাল অঙ্কের ঋণের বোঝা। এভাবে যদি চলতে থাকে আগামীতে যেকোনো সময় এই সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া হওয়ার শঙ্কা করছেন খোদ ওয়াসাপ্রধান।
নগরবাসীকে সুপেয় পানি সরবরাহ করার স্বপ্ন দেখে চট্টগ্রাম ওয়াসা। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সরকার ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে বাস্তবায়ন করছে একাধিক প্রকল্প। এসব প্রকল্পের বদৌলতে নগরবাসী পাচ্ছে দৈনিক ৩৬ কোটি লিটার পানি। এরপরও প্রতিদিন ঘাটতি ১৪ কোটি লিটার।
ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ওয়াসার প্রতি ১ হাজার লিটার পানির উৎপাদন খরচ হয় ১৫ টাকা ২২ পয়সা। ঋণের সুদসহ যোগ করলে পড়ে ২৯ টাকা ২২ পয়সা। প্রতিনিয়ত বাড়ছে পানির উৎপাদন খরচ। মোট খরচের প্রায় অর্ধেক ব্যয় হয় বিদ্যুৎখাতে। এছাড়া আছে জনবল, কেমিক্যাল, ঋণের সুদ, অপচয়সহ নানা খরচ। এসব খরচ পানির উৎপাদনের সঙ্গে সংযুক্ত।
চলতি বছরের মে থেকে জুলাই তিন মাসে বিভিন্ন প্রকল্পের বিদ্যুৎ বিল ১ হাজার ৩২৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা এবং বিভিন্ন অফিসের বিল ৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা। ৬৯০ জন স্থায়ী জনবলের পারিশ্রমিক বাবদ এই তিন মাসে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৯৬ লাখ ৭৩ হাজার ২৬৪ টাকা। আউট সোর্সিং বাবদ ব্যয় হয়েছে ৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকারও বেশি।
ওয়াসা হিসাব বিভাগের তথ্যমতে, ৭ হাজার ৬৫২ কোটি ২১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এরমধ্যে ৮৬০ কোটি ৮৮ লাখ ২২ হাজার টাকা সরকার ও বিশ্বব্যাংক, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে নিয়েছে ৬ হাজার ৭৯১ কোটি ৩৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা। ২০২২ সাল থেকে সুদে-আসলে বছরে ১০০ কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করতে হবে।
ওয়াসার বর্তমান আয় ১০৭ কোটি ৫৭ লাখ ৮০ হাজার ২৪৩ টাকা এবং বছরে ব্যয় ১২৫ কোটি টাকা। বৃহৎ চারটি প্রকল্প ও ৭৮টি গভীর নলকূপ ছাড়াও বিভিন্ন যন্ত্রংশের বাৎসরিক অপচয় ১০০ কোটি টাকা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ জয়নিউজকে বলেন, আমরা গ্রাহকদের কোনো কষ্ট দিচ্ছি না, শুধু প্রতিষ্ঠান যাতে দেউলিয়া না হয়, তা থেকে বাঁচাতেই পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা পানির উৎপাদন খরচের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই দাম বৃদ্ধি করছি।
তিনি আরো বলেন, এশিয়া, ইউরোপ আমেরিকা বিশ্বের কোনো দেশেই এত কম দামে পানি পাওয়া যায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াসাকে অনেক কিছু দিয়েছেন, আগামীতে ইনশাল্লাহ আরো দেবেন। আমরা সাহায্যের উপর আর কত দিন নির্ভর করবো? আমাদের সক্ষমতা না থাকলে কি করে নগরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি দেবো? সেই অবস্থান থেকে আমাদের আয় বাড়ানো ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।
ওয়াসার গ্রাহক রয়েছে ৭৬ হাজারের বেশি। এরমধ্যে ৮৮ শতাংশ আবাসিক গ্রাহক। বর্তমানে আবাসিকে প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম ৯ টাকা ৯২ পয়সা থেকে ১৬ টাকা এবং অনাবাসিকে ২৭ টাকা ৫৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করার প্রস্তাব গত ৯ আগস্ট ওয়াসার বোর্ড সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ মন্ত্রনালয়ে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়া হতে পারে বলে আশা করছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, গত জুনে ওয়াসা কার্যালয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছিলেন, ঋণ, ভর্তুকি এবং অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে বেশিদিন বাঁচা যায় না। কখনো কখনো অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যাঁরা দায়িত্বশীল পদে আছেন সাধারণ মানুষকে তাঁদের বোঝাতে হবে, পানির পয়সা দেবেন না, ভালো পানি পাবেন না।
একই অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদও পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন।