ওয়াসার উন্নয়নের জোয়ারে ধুলোয় উড়ছে নগর। দিনের বেশিরভাগ সময় নগরের বিভিন্ন সড়কে থাকে কুয়াশার মতো গাঢ় ধুলো। মূলত ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি আর ভাঙা সড়কের কারণেই বিষিয়ে উঠেছে জনজীবন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধুলোয় আচ্ছন্ন লাভলেইন বৌদ্ধ মন্দির, বহদ্দারহাট, রাহাত্তারপুল, কালামিয়া বাজার, শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত, বহদ্দারহাট থেকে বাস টার্মিনাল, সিঅ্যান্ডবি মোড়, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, মুরাদপুর মোড় থেকে অক্সিজেন, ষোলশহর ২ নম্বর গেট মোড়। ধুলোবালির ভয়াবহ অবস্থা দেখা গেছে আগ্রাবাদ এক্সেস রোড ও পোর্ট কানেক্টিং সড়কে। এসব সড়কে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে রাস্তাঘাটের অবস্থা শোচনীয়। একদিকে ভাঙা রাস্তা, অন্যদিকে ধুলো। এই দুইয়ের মাঝে পড়ে পথচারীসহ স্থানীয়দের ত্রাহি অবস্থা।
নন্দনকানন এলাকায় বসবাসকারী রাখি দাশ জয়নিউজকে বলেন, ‘আমার বাচ্চা ফুলকি স্কুলে পড়ে। প্রতিদিন আমাকে লাভ লেইন বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে দিয়ে যেতে হয়। কিছুদিন ধরে এ রাস্তার বেহাল অবস্থা। রাস্তায় ধুলো আর ধুলো। এটি বাচ্চাদের জন্য ক্ষতিকর। অথচ এখানে শিশুদের দুই-তিনটি স্কুল আছে। ওয়াসার অপরিকল্পিত উন্নয়নেই আমাদের এই ভোগান্তি।’
লাভ লেইন এলাকার ইস্তিয়াক কবির বলেন, ‘বেশ কয়েকদিন থেকে শহরের রাস্তা খোঁড়াখুড়ি করায় দিন দিন রাস্তায় চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এরকম ধুলাবালির কারণে শুধু ভোগান্তি নয়, মানুষ রোগাক্রান্তও হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাঙা্ রাস্তায় যানবাহন চলাচলের ফলে বাতাসে ধুলোর পরিমাণ বেড়েছে। ভোগান্তি বেড়েছে স্কুলগামী শিশু, সাধারণ পথচারী ও কর্মমুখী মানুষের। ধুলোবালি থেকে রেহাই নেই সড়কগুলোর আশপাশের বিভিন্ন স্থাপনাও। বাতাসে স্বাভাবিকের বেশি ধুলাবালির উপস্তিতির কারণে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তি (যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম) তারা তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জয়নিউজকে বলেন, ধুলোবালির কারণে চোখের রোগ, ব্রঙ্কাইটিস, যক্ষ্মা, পেট ফাঁপা, বদহজম, অ্যালার্জিসহ ভাইরাসজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধুলোবালির পরিবেশে থাকার ফলে ফুসফুসে ক্যান্সার ও কিডনিতে সমস্যা হতে পারে। একই কারণে ফুসফুসে রোগ দেখা দিতে পারে। এতে আক্রান্তরা দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভোগেন।
তিনি আরো বলেন, যাদের বাসাবাড়ি সড়কের আশপাশে, তাদের সবসময়ই দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হবে। এছাড়া বাইরে থেকে ঘরে আসার পর গরম পানি দিয়ে ভালো করে চোখ, মুখ ও নাকের ভেতর পরিষ্কার করতে হবে। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলা ও শিশুদের ধুলোবালি থেকে সাবধানে রাখতে হবে। আবার যানবাহনে চলাচলের সময় জানালা বন্ধ রাখা ও মুখে মাস্ক ব্যবহার করারও পরামর্শ দেন তিনি।