সবুজ প্রকৃতি। সমুদ্রের বিশালতা, থেমে থেমে গর্জন। দিগন্তজুড়ে রঙিনের ছোঁয়া। দৃষ্টিতে নয়নাভিরাম। প্রতিনিয়ত আভা ছড়াচ্ছে সৌন্দর্য। আলোয় ভরা বিস্মৃত আঙিনা। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সমারোহে প্রাণবন্ত বিচ।
এটি কোনো বিদেশি পর্যটনকেন্দ্রের বর্ণনা নয়। প্রাচ্যের রাণীখ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কাট্টলী সমুদ্রসৈকতের অপরূপ সৌন্দর্যের বর্ণনা এটি। এ সৈকত প্রথম দেখাতে যে কারো মন হরণ করে নিবে।
এ বিচে দেখা যায়, উড়ি ঘাসের সবুজ সৈকত, ম্যানগ্রোভ বন, ছোট ছোট খাল, অসংখ্য পাখি, জেলে নৌকা এবং অদূরে বঙ্গোপসাগরের বহিঃনোঙরে ভাসমান জাহাজের দৃশ্য। আর সন্ধ্যা হলে তারার মতো জ্বলে উঠে সমুদ্রে ভাসমান জাহাজগুলো। আর এ বিচের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এর শান্ত-সৌম্য সৌন্দর্য। নির্জন এ সৈকতে প্রতিদিন ভিড় জমে হাজার হাজার দর্শনার্থীর।
কিন্তু প্রচার ও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এ পর্যটন এলাকার বিকাশ ঘটেনি। বাংলাদেশ পর্যটন সংরক্ষিত অঞ্চল ও বিশেষ পর্যটন অঞ্চল আইন-২০১০ অনুযায়ী পর্যটন সম্ভাবনাময় যেকোনো স্থানকে সরকার পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত ও ঘোষণা করতে পারলেও কাট্টলী সমুদ্রসৈকতের উন্নয়নে নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ।
শহরের থেকে মাত্র আট কিলোমিটার দূরে পাহাড়তলী থানার সাগরিকা জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পাশে অবস্থিত এ সৈকত। ২০০৫ সাল থেকে সৈকতটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। মূলত বন্দর থেকে ফৌজদারহাট এবং সাগরিকার সঙ্গে এ সৈকতে যাওয়ার সংযোগ সড়ক স্থাপনের পরপরই পর্যটকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে।
পতেঙ্গা বা কক্সবাজারের চেয়েও এ সৈকতের বিশেষ আকর্ষণ হলো ম্যানগ্রোভ বন। এছাড়া অন্যান্য সৈকতের মতো এখানে ভাসমান হকারদের ঝামেলা নেই। পর্যটন সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে ব্যবসা করতে এখানে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি পার্ক। যেমন- নিঝুম পার্ক, নিরিবিলি নিরুপমা পার্ক ও শুকতারা পার্ক।
এ সৈকতকে নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা হলে পর্যটকের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সৈকতে বেড়াতে আসা নবদম্পতি আজিজুর রহমান জয়নিউজকে বলেন, ‘সমুদ্রের বিশালতা কিংবা মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখার জন্য কক্সবাজারের চেয়েও অনেক সুন্দর কাট্টলী সমুদ্রসৈকত। এখানে ম্যানগ্রোভ বন, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য সব একসঙ্গে দেখা যায়। আপনজনের সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটানোর জন্য এ বিচই সেরা। তবে এখানে আসার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব খারাপ।’
সমুদ্রসৈকতে কোমল পানীয় ব্যবসা করেন সাইফুল ইসলাম। তিনি জয়নিউজকে বলেন, প্রতিদিন কাট্টলী সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণ পিপাসুরা বেড়াতে আসেন। শুক্রবার ও শনিবার এখানে বেশি ভিড় থাকে। মূল সড়ক থেকে প্রায় ২ হাজার ফুট অংশ কাঁচা রাস্তা হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় দর্শনার্থীদের। সবসময় কাঁদা থাকে এ পথে।
তবে রাস্তা ঠিক থাকলে দর্শনার্থীদের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করেন এ ব্যবসায়ী।
এদিকে ২০১৫ সালে কাট্টলী সমুদ্রসৈকতকে পর্যটন এলাকা ঘোষণা করে এর উন্নয়নে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন পর্যটন করপোরেশনকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর আর কোনো উদোগ গ্রহণ করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পরে এ বিষয়ে কথা বলব।