শাটল ট্রেনের দুর্ঘটনায় আঙুল হারিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শারমিন আক্তার নামে এক শিক্ষার্থীর| শারমিন চবির সমাজতত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। এ দুর্ঘটনায় থেতলে গেছে তার অন্য পা।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বর্তমানে শারমিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। একইসঙ্গে আরো বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে শাটলের বগি বৃদ্ধিতে প্রশাসনের অবহেলা, রেলওয়ের গাফিলতি আর নিজেদের অসচেতনতায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন চবি শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, আড়াইটার ট্রেন ষোলশহর স্টেশনে পৌঁছায় ৪টার দিকে। এটি মাঝের লাইন দিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তৃতীয় লাইনে গেলে দরজায় বসে থাকা শিক্ষার্থীরা নির্মাণাধীন প্লাটফর্মে আঘাত পায়। এতেই বিচ্ছিন্ন হয় শারমিনের আঙুল আর থেতলে যায় আরেক পা।
প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্র ইকরামুল ইসলাম রিমু বলেন, নতুন প্লাটফর্মের কাজ চলাকালীন সময়ে শাটল ট্রেন তিন নম্বর লাইনে ঢুকানোর ফলে তিন চারজনের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। আমি সামনের বগির দরজায় বসা ছিলাম। আমার পায়ের আঙুলের মধ্যে সামান্য ব্যথা পাই। কিন্তু আমার পিছনের বগির দরজার মধ্যে বসা ছিলেন দুইজন আপু, তাদের মধ্যে একজনের পায়ের আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারপর আমি সামনে গিয়ে সবাইকে বলেছি দরজা থেকে পা উঠানোর জন্য, না হলে আরো অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারত।
তিনি বলেন, শাটলের বগি সমস্যা সমাধান না হলে এর মতো আরো অনেক ঘটনা ঘটতে পারে ভবিষ্যতে।
ষোলশহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই জাকির হোসেন জয়নিউজকে জানান, মূল লাইনে তেলের ট্যাংকার আটকে লাইনটি দুমড়ে মুচড়ে যাওয়ায় বিকল্প লাইন হিসেবে সেটিকে ব্যবহার করি। ওই শিক্ষার্থী দরজায় বসে থাকার কারণে নির্মাণাধীন প্লাটফর্মে তার পা আটকে আহত হয়।
তিনি বলেন, আমরা বারবার শিক্ষার্থীদের নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা দরজায় বসা থেকে বিরত হচ্ছে না।
রেলের দীর্ঘদিনের সমস্যা
এদিকে নগর-বিশ্ববিদ্যালয় রুটের রেললাইন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। রোববারও ষোলশহরের কাছেই দুটি তেলের ট্যাংকার লাইনচ্যুত হয়েছে। আবার রেললাইন ঘেঁষে প্লাটফর্ম নির্মাণকেও দুষছেন ছাত্ররা।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মতে, ছাত্রছাত্রীদের একমাত্র পরিবহন শাটল। অথচ এর বগি ছাত্রদের তুলনায় অপ্রতুল। ভিতরে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ট্রেনের ছাদ ও দরজায় বসে ঝুঁকিপূর্ণভাবে যাতায়াত করছে শিক্ষার্থীরা। বগি বৃদ্ধির জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনও করে আসছে তারা। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না প্রশাসন।
দেখা যায় ট্রেনের দরজায় বসার ক্ষেত্রে বেশি আগ্রহ মেয়েদেরই। আর ছাদে ছেলেদের আগ্রহ বেশি হলেও পিছিয়ে নেই মেয়েরাও। তবে অনেক সময় ভিতরে বসার বা দাঁড়ানোর সুযোগ থাকলেও অনেকেই ‘রোমাঞ্চ’ এর জন্য বা ‘বীরত্ব’ দেখিয়ে ট্রেনের ছাদ, ইঞ্জিন ও দরজায় বসে যাতায়াত করেন বলে অভিযোগ রয়েছে প্রশাসন ও ছাত্রদের মধ্যেই।
বগি সংকটের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল জয়নিউজকে বলেন, বগি সংকটের কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময় নানান দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর ফলে বিভিন্ন সময় সংঘর্ষও হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ আন্দোলনের পরও কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমরা শীঘ্রই প্রশাসনের সঙ্গে বসব। আমাদের দাবি দাওয়াগুলো জানাব। যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে দাবিদাওয়া না মানা হয় তাহলে আন্দোলনের পথ খোলা আছে।
আর শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক গৌরচাঁদ ঠাকুর অপু বলেন, এটি সম্পূর্ণ প্রশাসনের গাফিলতি। গতবছরও একজন তার দুই পা হারিয়েছে। অথচ প্রশাসন সবসময় ছাত্রদের দোষ দিয়ে আসছে। পুলিশ দিয়ে তো শিক্ষার্থীদের ভিতরে নেওয়া যাবে না। সেখানে জায়গা না থাকলে শিক্ষার্থীরা কী করবে। প্রশাসনকে দ্রুত সময়ের মধ্যে রেলওয়ের সঙ্গে বসে শাটলের বগি বৃদ্ধি করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, শুনেছি ট্রেন থেকে নামতে গিয়ে আহত হয়েছে। শাটলের বগি বৃদ্ধির বিষয়টা আমরা দেখব।