দীর্ঘ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের জন্য বেতন বৃদ্ধি, ২০ শতাংশ হারে বৈশাখী ভাতা প্রবর্তনসহ নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড রোয়েদাদের গেজেট প্রকাশ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)।
এদিকে ঘোষিত ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদের যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে তা সংশোধনের দাবিতে রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) সিইউজের সমাবেশ। এছাড়া ৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।
এ উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে বিশেষ সাধারণ সভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরপরও ঘোষিত ওয়েজ বোর্ড গেজেট সংশোধন করা না হলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে নির্বাহী পরিষদের সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সিইউজের সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নির্বাহী পরিষদের সভায় বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস, সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী, যুগ্ম সম্পাদক সবুর শুভ, অর্থ সম্পাদক কাশেম শাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম ইফতেখারুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক আহমেদ কুতুব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাহী কমিটির সদস্য রুবেল খান, দৈনিক আজাদী ইউনিটপ্রধান খোরশেদ আলম, দৈনিক পূর্বদেশ ইউনিটপ্রধান রতন কান্তি দেবাশীষ, টেলিভিশন ইউনিটপ্রধান অনিন্দ্য টিটো, দৈনিক পূর্বকোণ ইউনিটপ্রধান মিনহাজ উদ্দিন রায়হান ও দৈনিক কর্নফুলী ইউনিটপ্রধান মোহাম্মদ আলী পাশা।
সভায় নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড সংক্রান্ত ঘোষিত প্রজ্ঞাপনে সাংবাদিককের স্বার্থহানিকর বিষয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়।
সভায় ঘোষিত নবম ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরা হয়।
সভায় বলা হয়, সাংবাদিকদের দীর্ঘ আন্দোলনরে পর ১২ সেপ্টেম্বর নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের প্রজ্ঞাপন জারী করা হয়। এসব অসঙ্গতি হলো-
(১) সংবাদপত্রের আয়ের ভিত্তিত্বে অষ্টম ওয়জে বোর্ডে ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা হয়েছিল।
সাংবাদিকদের স্বার্থহানিকর হওয়ায় সাংবাদিকরা তা বাতিল করে পূর্বতন ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী ক, খ, গ এই তিনটি ক্যাটাগরিতে সংবাদপত্রের শ্রেণি করার দাবি জানিয়ে আসলেও নবম ওয়েজ বোর্ডে তা বহাল থাকায় সাংবাদিকদের স্বার্থহানি হয়েছে বলে মনে করে সিইউজে।
(২) ৮ম ওয়েজ বোর্ডের সুপারিশে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার জন্য আলদা ওয়েজবোর্ড গঠনের সুপারিশ করা হয়। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের বিশাল অংশ বাদ রেখে একইভাবে নবম ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদে সুপারিশ করায় তীব্র ক্ষোভ জানানো হয় এবং শ্রম আইন ও শ্রম বিধিমালা অনুসরণ করে নবম ওয়েজ বোর্ডে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
(৩) ৮ম ওয়জে র্বোডে ২টি করে গ্র্যাচুয়েটি থাকলেও নবম ওয়েজ বোর্ডে একটি করে গ্র্যাচুয়িটি নির্ধারণ করায় সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।
সভায় বলা হয়, এর ফলে যেসব সাংবাদিক দীর্ঘদিন ধরে গণমাধ্যমে কাজ করে আসছিল তাদের বেনিফিট অর্ধেক হয়ে যাবে এবং মালিকপক্ষ সাংবাদিকদের চাকুরিচ্যুতে উৎসাহিত হবে।
(৪) প্রতিবছর দেশের ১০ শতাংশ হারে মুদ্রাস্ফীতি হলেও ৮ম ওয়েজ বোর্ডের ন্যায় চিকিৎসাভাতা ১ হাজার ৫০০ টাকা বহাল রাখায় সভায় অসন্তোষ প্রকাশ করে মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে চিকিৎসাভাতা বাড়ানোর দাবি জানানো হয়।
(৫) পত্রিকা প্রকাশনার ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৪০ জন সাংবাদিক বাধ্যতামূলক রাখার জন্য সাংবাদিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করার পরও আইনি মারপ্যাচে যেভাবে জনবল নির্ধারণ করা হয়েছে তা অযৌক্তিক বলে মনে করে সিইউজে।
(৬) মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম এবং অষ্টম ওয়েজ বোর্ডে এতদিন মালিক পক্ষ আয়কর পরিশোধ করে আসছিলেন। সুপ্রীম কোর্টে মালিকদের পক্ষ থেকে আপীল করার পর মামলাটি আদালতে বিচারাধীন আছে। আদালতে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় একতরফাভাবে সাংবাদিকদের ওপর আয়কর চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আদালত অবমাননা হয়েছে বলে মনে করে সিইউজে। একইসঙ্গে মালিকদের পর্যায়ক্রমে নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের সুযোগ দিয়ে সাংবাদিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলেও মনে করে সিইউজে।
সভায় নবম ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ প্রজ্ঞাপন দ্রুত সংশোধন করে পুনঃপ্রকাশের পাশাপাশি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের নবম ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
সভায় সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমের জন্য দু’জন সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
সভায় নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড রোয়েদাদ প্রজ্ঞাপন সংশোধনের দাবিতে সিইউজে ঘোষিত কর্মসূচি সফল করে তুলতে সংগঠনের সদস্যদের প্রতি আহ্বন জানানো হয়।