১৯৭৯ সালে মারা যান শিক্ষক এরফানুল হক। নিয়ম অনুযায়ী তাঁর পেনশনের টাকা তুলতে থাকেন স্ত্রী হোসনে আরা বেগম।
তবে ১৯৮২ সালে ফের বিয়ে করে বসেন হোসনে আরা। দ্বিতীয় বিয়ে করার পরও যথারীতি পেনশনের টাকা তুলতে থাকেন তিনি। আইনে না থাকলেও এভাবেই ৩৭ বছর ধরে পেনশনের টাকা তুলেছেন তিনি।
ঘটনার অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিক্ষক এরফানুল হক বাঁশখালীর পশ্চিম চাম্বল মুন্সিখীল মৌলভীপাড়ার বাসিন্দা এবং তিনি মিরসরাইয়ের নাহেরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষকতাকালীন সময়ে ১৯৭৯ সালে এরফানুল হক শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে মারা যান।
এরফানুল হক মারা যাওয়ার পর বিধিমোতাবেক তাঁর স্ত্রী হোসনে আরা বেগম মৃত স্বামীর পেনশনের টাকা উত্তোলন করে আসছেন। ওই সময় যাতায়াত অসুবিধার কারণে হোসনে আরা বেগম পেনশনের টাকা মিরসরাই উপজেলা থেকে স্থানান্তর করে বাঁশখালী উপজেলায় নিয়ে আসেন। ওই কারণে নিয়মিত পেনশনের টাকা বাঁশখালী উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে উত্তোলন করে আসছেন তিনি।
এরফানুল হকের তৈয়বুল্লাহ, মুজিবুল্লাহ, আতাউল্লাহ, কেফায়েতুল্লাহ নামে চার সন্তান রয়েছে। এর মধ্যে তৈয়বুল্লাহ মারা গেছেন।
এদিকে ১৯৮২ সালে হোসনে আরা আবার দ্বিতীয় বিয়ে করেন পশ্চিম চাম্বল মৌলভীপাড়ার মৃত আব্দুল মোতালেবের ছেলে শফিকুল হককে। ওই ঘরে খুরশিদা খানম রিনা, তাহমিনা খানম ডলি ও রোখসানা খানম রুবি নামের তিন মেয়ে রয়েছে। যাদের ইতোমধ্যে বিয়েও হয়ে গেছে।
এদিকে হোসনে আরা বেগম পুনরায় বিয়ে করার তথ্য বাঁশখালী উপজেলা হিসাবরক্ষণ দপ্তরে জানাননি। এ তথ্য গোপন করেই ৩৭ বছর ধরে নিয়মিত পেনশনের টাকা উত্তোলন করে আসছেন তিনি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে হোসনে আরা বেগম জয়নিউজকে বলেন, পুনরায় বিয়ে করলে পূর্বের মৃত স্বামীর পেনশনের টাকা উত্তোলন করা অন্যায়-এটি আমার জানা ছিল না। কেউ আমাকে বাধাও দেননি। গত কয়েকদিন ধরে লোকমুখে শুনে আমি জানতে পেরেছি। প্রশাসন আমাকে এখনও বাধা দেয়নি। আমি গত মাসেও পেনশনের টাকা উঠিয়েছি। আমার বয়স এখন ৬৫। বৃদ্ধ বয়সে আমি কি আর করব?
এদিকে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সুদর্শন দে জয়নিউজকে বলেন, হোসনে আরা বেগম যদি পুনরায় বিয়ে করে থাকেন তাহলে পেনশনের টাকা উত্তোলনের নিয়ম নেই। এটি প্রমাণ হলে ৩৭ বছর ধরে উত্তোলিত পেনশনের টাকা ফেরত দিতে হবে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
একই প্রসঙ্গে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জয়নিউজকে বলেন, মৃত ওই শিক্ষক বাঁশখালী উপজেলায় শিক্ষকতা করেননি। মিরসরাই উপজেলায় শিক্ষকতা করেছিলেন। যাতায়াত অসুবিধায় পেনশনের টাকা তাঁর স্ত্রী বাঁশখালী থেকে উত্তোলন করে আসছেন। বিষয়টি তদন্ত করা উপজেলা হিসাবরক্ষণ বিভাগের। আমাদের নয়।