ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো চট্টগ্রাম ওয়াসাতেও জবাবদিহিতার পরিধি বাড়াতে চাইছে সরকার। চলতি বছরের জুনে চট্টগ্রাম ওয়াসার বিলে অব্যবস্থাপনা ও বিড়ম্বনা কমাতে সব কার্যক্রম অটোমেশনের (স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি) আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।এরই ধারাবাহিকতায় ওয়াসায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে কমপ্লেইন ট্রেকিং সিস্টেম (সিটিএস) প্রকল্প।
এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে ওয়াসার গ্রাহকদের দুর্ভোগ যেমন কমবে, তেমনি কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়বদ্ধতার পরিধি আরো বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ওয়াসাকে আরো গ্রাহকবান্ধব ও সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় সিটিএস প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এখন থেকে গ্রাহকরা যেকোনো সমস্যার বিষয়ে ওয়াসার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে জানাতে পারবেন।
কমপ্লেইন অপশনে গিয়ে অভিযোগ ccts.cwsa.info লিখে সেন্ট করলেই ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার মোবাইলে এসএমএস/ইমেইল আকারে ম্যাসেজটি যাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সমস্যা সমাধান করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কাজটি ওয়েবসাইটে সাবমিট না করবেন, ততক্ষণ সবার নজরে থাকবে গ্রাহকের অভিযোগটি। সমস্যা সমাধান করার পর সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তার ম্যাসেজটি যেমন সবাই দেখতে পারবেন, তেমনি অনুরূপ একটি ম্যাসেজ পাবেন অভিযোগকারী গ্রাহক।
এছাড়া ওয়াসার হেল্পলাইন ০৯৬১২৫০০৮০০ নম্বরে যেকোনো গ্রাহক ফোন করে তাদের অভিযোগ জানাতে পারছেন। সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহক সেবাকেন্দ্র থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে টেলিফোন/ইমেইল করে অভিযোগটি জানিয়ে দেওয়া হয়। অনুরূপ একটি ম্যাসেজ অভিযোগকারী গ্রাহকও পাবেন। মূলত এই ম্যাসেজটি ও সিটিএস সংযুক্ত হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেখতে পাবেন।
মেইলটির সফট কপি ছাড়াও হার্ড কপি পরদিন (তাগাদা/অবগত করণের জন্য) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। ওয়াসার আইটি বিভাগের প্রকৌশলী লুৎফিজাহান জয়নিউজকে বলেন, সিটিএস এখনো পাইলটিং পর্যায়ে আছে। এখানে আরো কিছু বিষয় সংযুক্ত করা হচ্ছে। আপাতত গ্রাহকদের অভিযোগ উর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেখতে পারছেন। আগামীতে সর্বোচ্চ কর্মকর্তারা যেমন দেখতে পাবেন, তেমনি এই তালিকা আরো প্রসারিত করে দায়িত্বপ্রাপ্ত সব কর্মকর্তা-কর্মচারী দেখার অপশন থাকবে।
এদিকে ওয়াসার নতুন সেবার কথা অনেক গ্রাহক জানেন না। ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ জানাতে আসা পশ্চিম রামপুরার গ্রাহক আশরাফ হোসেন জয়নিউজকে বলেন, আমি পর্যাপ্ত পানি পাচ্ছি না। অফিসারদের সেই অভিযোগ দিতে এসেই আজ অর্ধেক দিন শেষ।
সিটিএস সিস্টেমের বিষয়ে আগে জানলে এতদূর আসতে হতো না। কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে আরো প্রচারণা চালানো দরকার। জানতে চাইলে ওয়াসার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মাহমুদুল হক জয়নিউজকে বলেন, সিটিএস সিস্টেমের কারণে অতি সহসাই গ্রাহকদের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে। গ্রাহকরা যদি আরো সচেতন হয়ে আমাদের কাছে সমস্যার সমাধান চান, তবে আমরাও আরো দ্রুত সেবা দিতে পারবো। এতে আগামীতে ওয়াসার রাজস্ব আরো অনেক বাড়বে।
ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যাবস্থাপক ড.পীযুষ দত্ত জয়নিউজকে বলেন, ইতোমধ্যে ওয়াসাতে ই-ফাইলিং, ই-টেন্ডার, ই-বিলিংসহ অনেক কাজ অনলাইনে হচ্ছে। সিটিএস সিস্টেমের কারণে আমরা এবং গ্রাহক আরো কাছাকাছি চলে এসেছি। গ্রাহকরা এখন ঘরে বসেই যেকোনো সমস্যা আমাদের জানাতে পারছেন, আমরাও সঙ্গে সঙ্গে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করছি।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ জয়নিউজকে বলেন, জনগণের সন্তুষ্টিই আমাদের প্রাপ্য। গ্রাহকরা যেকোনো সমস্যা এখন থেকে সরাসরি আমাদের জানাতে পারবেন। সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানে আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার মানসিকতা নিয়েই এসেছি। চট্টগ্রাম ওয়াসাকে প্রধানমন্ত্রী অনেক দিয়েছেন। তাই গ্রাহক সন্তুষ্টির মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার সোনার বাংলা বিনির্মাণে আমরাও সহযোগী হতে চাই।