নগরে দুটি আন্তর্জাতিকমানের স্টেডিয়াম ছাড়াও বেশ কয়েকটি বড় মাঠ রয়েছে। কিন্তু এসব মাঠে বছরের অনেকটা সময় খেলার সুযোগ থাকে না। কারণ ওই সময় কর্তৃপক্ষও আয়োজন করে মেলার!
এদিকে খেলার মাঠে নিয়মিত মেলা আয়োজন করায় অপরাধ বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশিষ্টজনরা। তাঁদের মতে, তরুণরা যখন নিয়মিত খেলাধুলা করতে পারেন না তখন তারা বিভিন্ন নেশার দিকে হাত বাড়ায়। নেশাগ্রস্ত হয়ে তারা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
নগরের ছোট-বড় মাঠগুলোর মধ্যে অন্যতম আউটার স্টেডিয়াম, হালিশহরের আবাহনী মাঠ, লালদীঘি মাঠ ও বাওয়া স্কুলমাঠ। বছরজুড়ে এসব মাঠে বিভিন্ন সময়ে আয়োজন হয় মেলার। কখনো বাণিজ্যমেলা, আবার কখনো বস্ত্রমেলা। এছাড়া চলে বৃক্ষমেলা, বিজয় মেলা, স্বাধীনতা মেলা, বৈশাখী মেলা, পিঠা উৎসব, পাখি মেলা, গাড়ি মেলা ও ফুড উৎসবসহ নানা আয়োজন।
এদিকে মাঠে খেলা না হওয়ায় ক্ষুব্ধ সচেতন মানুষরা। হালিশহরের বাসিন্দা ইব্রাহিম মোল্লা জয়নিউজকে বলেন, আমরা ভুলেই গেছি আবহানী মাঠ খেলার জন্য রাখা হয়েছে। এখানে খেলা হয় না ৫-৬ বছর। তবে প্রতিবছর বাণিজ্যমেলা ঠিকই হয়।
তিনি ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, এখানে মাঠে খেলা না হলেও রুমের মধ্যে খেলা হয়, আর তা জুয়া খেলা। খেলাধুলা না থাকাতে এলাকার ছেলেরা নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
চট্টগ্রামের ক্রীড়াবিদদের অভিযোগ, চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরেই খেলার মাঠের তীব্র সংকট রয়েছে। এ কারণে পাইওনিয়ার ফুটবল টুর্নামেন্টসহ অনেক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যায় না। খেলার জন্য মাঠ চাইলে পাওয়া যায় না। কিন্তু বাণিজ্যের লোভে মাঠগুলো দেওয়া হয় মেলা আয়োজনে। আর মেলার পর খেলার উপযোগী থাকে না মাঠগুলো।
চট্টগ্রামের হাতেগোনা দু’একটি ক্লাবের নিজস্ব মাঠ রয়েছে। সেই ক্লাবগুলোর মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড। কিন্ত হালিশহরের চট্টগ্রাম আবাহনী মাঠে দেখা যায়, খেলার মাঠের কোনো চিহ্ন এখানে নেই। পুরো মাঠজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে মেলায় ব্যবহৃত ইট, বাঁশ ও কংক্রিট। বছরজুডে আগাছায় পরিপূর্ণ থাকে পুরো মাঠ। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, যেন ছোট কোনো বির্স্তীণ বন। ফুটবল খেলার মাঠ হলেও নেই কোনো গোলপোস্ট।
মাঠ ও ক্লাব রক্ষাণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, মাঠে খেলা হয় না বললেই চলে। বছরের শেষে খেলার মৌসুম থাকে, কিন্তু ওই সময় মেলা হয়। আর মেলা শেষে খেলা হওয়ার কোনো অবস্থা থাকে না। মাঠে মেলার জন্য ব্যবহৃত ইট, বাঁশ ও কংক্রিটসহ অন্যনা সরঞ্জাম ছডিয়ে-ছিটিয়ে থাকে। সারাবছর এগুলো এভাবেই পড়ে থাকে।
চট্টগ্রাম আবাহনী মাঠে দায়িত্বরত আনসার সদস্য শিমুল শিকদার জয়নিউজকে বলেন, ক্লাবের সদস্যরা এখানে এসে প্রায় আড্ডা দেয়। আর মাঝে মাঝে হুইপ স্যার আসলে অনেক নেতাকর্মী আসে। ক্লাবে উনাদের খাওয়া-দাওয়ার জন্য রান্না হয়। খেলা কেন হয় না, এ বিষয়ে আমরা জানি না। আমদের দেখাশুনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমরা সে দায়িত্ব পালন করি।
মাঠে গোল পোস্ট নেই কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, খেলা হয় না তাই ক্লাবের এক সদস্য গোলপোস্ট বাসায় নিয়ে গেছেন। তবে বললে, তিনি নিয়ে আসবেন।
এদিকে নিয়মিত আয়োজন থাকে নগরের লালদিঘী মাঠেও। মেলার পাশাপাশি এখানে চলে সমাবেশ। তাই ইচ্ছে থাকলেও এখানে নিয়মিত খেলাধুলা করতে পারে না কিশোর-তরুণরা।
নগরের আউডার স্টেডিয়ামের অবস্থাও অভিন্ন। এখানে নিয়মিত আয়োজন করা হয় বিভিন্ন মেলা। কখনো বস্ত্র মেলা, আবার কখনো বৃক্ষমেলা।
খেলার মাঠ দখল করে এভাবে মেলা আয়োজন করায় ক্ষুব্ধ চট্টগ্রামের সন্তান বাংলাদেশ ক্রিকেটের কিংবদন্তী আকরাম খান। এজন্য তিনি দুঃখপ্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও কামনা করেন।
খেলার মাঠে মেলা কাম্য নয় মন্তব্য করে আকরাম খান জয়নিউজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে বলেন, অনেক সময় দেখা যায় নগরে যে খেলার মাঠগুলো আছে, সেগুলোতে মাসব্যাপী মেলা হয়। দেখা যায় পরে তা আর খেলার যোগ্য থাকে না। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম জয়নিউজকে বলেন, খেলাধুলা করার সুযোগ না থাকলে কিশোর-তরুণরা অপরাধ কার্যক্রমে জড়াবে এটাই স্বাভাবিক। নগরে এমনিতেই খেলার মাঠের সংকট আছে, তারওপর মাঠগুলোতে সারাবছর থাকে মেলা। কিশোর অপরাধ যে হারে বাড়ছে এর অন্যতম কারণ এটা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি জয়নিউজকে বলেন, সিজেকেএসের পক্ষ থেকে প্রায়সময় টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। সামনেও এম এ আজিজ স্টেড়িয়ামে শেখ কামাল ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে যাচ্ছি। তবে মাঠ দখল করে মেলার বিষয়টা ইদানিং তীব্র আকার ধারণ করেছে। আবাহনী মাঠের বিষয়টি নিয়ে আমরা কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলব।
এ বাপারে জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম আবাহনীর মহাসচিব সামশুল হক চৌধুরী জয়নিউজকে বলেন, হালিশহর এলাকাটি এমনিতে নিচু। হালকা বৃ্ষ্টিতে এলাকাটিতে পানি উঠে যায়। আমাদের মাঠটিতে বছরের বেশিরভাগ সময় পানি জমে থাকে। তাই খেলা আয়োজন করা যায় না।
খেলার মৌসুমে মেলা আয়োজনের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেম্বারের অনুরোধে দুইবার মেলার অনুমতি দিয়েছি। তবে গতবছর থেকে আমরা আর মেলা আয়োজন করতে দিচ্ছি না। আমরা অতিদ্রুত মাঠের উন্নয়নে কাজ শুরু করব। মাঠটি আরো ছয়ফুট উঁচু করা হবে। এখানে নির্মিত হবে শেখ কামাল কনভেশন হল।