দখল ও দূষণরোধ এবং কর্ণফুলী নদী রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে বলে জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।
শনিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে অভয়মিত্র ঘাটে ‘কর্ণফুলী নদী দখল-দূষণমুক্তসহ অবিলম্বে ক্যাপিটাল ড্রেজিং’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, গড গিফটেড এ বন্দরের ২ হাজার ১০০ বছরের বেশি বয়স। তাই কর্ণফুলী নদী রক্ষায় বন্দর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব বেশি। কর্ণফুলী নদী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটিকে ঘিরে সরকারের অনেক পরিকল্পনা আছে। তাই বন্দর কর্তৃপক্ষকে কর্ণফুলী নদী রক্ষায় স্থায়ী রূপরেখা তৈরি করতে হবে।
বন্দর চেয়ারম্যানের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, দখল ও দূষণ রোধ করা এবং এই নদীর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে আপনাকেই দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ বন্দরের প্রাণ হচ্ছে কর্ণফুলী নদী। নদী রক্ষায় দ্রুত যা যা করার করতে হবে। ড্রেজিং খুব প্রয়োজন। অ্যাগ্রেসিভলি কাজ করেন। আমরা তো আছি। আমি চাই আপনি থাকাবস্থায় একটি ম্যানুয়াল তৈরি করে যান। যাতে সাসটেইনেবল হয়। দরকার হলে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বসতে হবে। বন্দরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
মন্ত্রী জাবেদ বলেন, ‘অব্যাহত দখলের পর কর্ণফুলী নদী এখন যে অবস্থায় আছে, আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, এই নদীর আর কোনো ক্ষতি করার সুযোগ কাউকে দেওয়া যাবে না। আমি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর আরএস মূলে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে নদী উদ্ধারের কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু আইনের প্রতি সম্মান রেখে বলছি, মাঝপথে হাইকোর্টের নির্দেশনার কারণে সব বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আমি চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে প্রত্যাশা করছি যে, এ নদীর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তারা এগিয়ে আসবেন।’
কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট অংশে নতুন সেতু নির্মাণের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে কালুরঘাটে যে সেতুটা আছে, সেটা অনেক পুরানো। এখন যেহেতু ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন যাচ্ছে, আরেকটা সেতু অবশ্যই প্রয়োজন। বোয়ালখালীবাসীর দাবি আছে, সড়কসহ যেন সেতু হয়। সেটাও হতে পারে, কোনো সমস্যা দেখছি না। কিন্তু কথা একটাই, পিলারের কাছে যে পলি জমা হবে, সেগুলো নিয়মিত অপসারণ করে নেভিগেশন ঠিক রাখতে হবে।’
লাইটারেজ জাহাজের যত্রতত্র পার্কিং বন্ধের আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সাগরের সঙ্গে এ নদীর লিংক আছে। আমাদের বাণিজ্য বাড়ছে। লাইটারেজ জাহাজ বাড়ছে। আজ থেকে ১০ বছর আগেও এত জাহাজ ছিল না নদীতে। কেন?
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, কর্ণফুলী আমাদের অস্তিত্ব। কর্ণফুলীকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে। কর্ণফুলী নদী কেন, কী কারণে, কী জন্য দূষণ হচ্ছে এটি কমবেশি সবাই জানি। সবাই বুঝি। সবাই যার যার অবস্থান থেকে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করলে দখল-দূষণ থেকে নদী রক্ষা পাবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রতিজ্ঞা করা উচিত, নাগরিক দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করব। তাহলে বাসযোগ্য, সাসটেইনেবল সিটি ফিরে পাব। চার বছর মেয়রের দায়িত্ব পালনের তিক্ত ও ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা হচ্ছে নগরবাসীর সম্পৃক্ততা-সহযোগিতায় অনেক ঘাটতি আছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়াল অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীতে এক নম্বর জেটি অর্থাৎ নিচের দিকে নাব্যতা অনেক বেড়েছে। এখন ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ আসছে। কিন্তু উপরের দিকে নাব্যতা কমেছে। আমরা নিয়মিত ড্রেজিং করছি বলেই নাব্যতা বেড়েছে। উপরের দিকে পারছি না, সেখানে অনেক প্রতিবন্ধকতা। সেখানে নদীর তলদেশে মাটি নেই, সব আবর্জনা, পলিথিন। প্রতিদিন টনে টনে বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে। আমরাও একমত যে কর্ণফুলী নদীতে নিয়মিত ড্রেজিং করতে হবে, যত খরচই লাগুক।
চ্যানেল আই চট্টগ্রাম অফিসের প্রধান চৌধুরী ফরিদের সঞ্চালনায় আলোচনায় আরও অংশ নেন চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এমএ মালেক, সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনজুরুল কিবরিয়া, পরিবেশ গবেষক ইদ্রিস আলী, ব্যবসায়ী নেতা এসএম আবু তৈয়ব ও এমএ সালাম, স্থপতি আশিক ইমরান, সাইফ পাওয়ার টেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রহুল আমিন ও কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব।