সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণা শনিবার (১২ অক্টোবর) মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ। সাতকানিয়ায় এবারই প্রথম ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে। নির্বাচন উপলক্ষে শনিবার মধ্যরাত থেকেই উপজেলা জুড়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী টহল ব্যবস্থা জোরদার করেছে। এর মধ্যে নির্বাচনী ইভিএম সহ নির্বাচনি সব সরঞ্জাম মাঠ পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ, বিএনপির প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট ৩জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শনিবার রাত ১২টা থেকে সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত বাস, ট্রাক, টেম্পো, সিএনজি, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, অটোরিকশা ইত্যাদি যানবাহনের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে বিজিবি, র্যা ব, পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এর মধ্যে ৪ প্লাটুন বিজিবি, র্যা বের ৬টি টিম, পুলিশের ৪টি টিম স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে কাজ করবে। এছাড়া নির্বাচনি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে দুইজন করে সেনাবাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। অতিরিক্ত প্রয়োজনে ৪জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ৯ জন ম্যাজিস্ট্রেট ও ১ প্লাটুন বিজিবি থাকবে। এছাড়া প্রতি কেন্দ্রে ৩জন পুলিশ, আনসারসহ একজন করে গ্রাম পুলিশ দায়িত্বে থাকবেন।
রোববার (১৩ অক্টোবর) থেকে নির্বাচনের দিন ১৪ অক্টোবর এবং পরের দিন ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৬জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সমন্বয়ে গঠিত ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে কাজ করবেন। এছাড়া সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাচনে নির্বাচনি অপরাধের ক্ষেত্রে ১জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনে উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা সমন্বয়ক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, ‘সুষ্ঠু ভাবে ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসারদের কঠোর বার্তা দেয়া হয়েছে।
সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জ্যামান মোল্যা বলেন, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া নির্বাচন সম্পন্ন করতে যা যা দরকার এর সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
নির্বাচনে কারা লড়ছেন
সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী এম এ মোতালেব সিআইপি (নৌকা), বিএনপি মনোনীত আবদুল গাফফার চৌধুরী (ধানের শীষ) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মোনায়েম চৌধুরী মুন্না (মোটর সাইকেল) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাতকানিয়া উপজেলা বঙ্গবন্ধু সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি সালাউদ্দিন হাসান চৌধুরী (বই), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান (তালা), জসিম উদ্দিন (চশমা), বিএনপি সমর্থিত বশির উদ্দিন (ধানের শীষ) এবং মো. আসিফুর রহমান সিকদার (মাইক) এবং মোহাম্মদ ওমর ফারুক (টিওবওয়েল) প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এছাড়া উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারান্নুম আয়েশা (প্রজাপতি) ও আঞ্জুমান আরা বেগম (কলস)। শেষ মুহুর্তে হাইকোর্টে রিট করে প্রার্থীতা ফিরে পেয়েছেন বিএনপি সমর্থিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জান্নাতুন নাইম চৌধুরী রিকু। তিনি ধানের শীষ প্রতীকে লড়ছেন।
এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একজন অংশ নিলেও মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এম এ মোতালেব সিআইপি (নৌকা) ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবদুল গাফফার চৌধুরীর (ধানের শীষের) মধ্যে। সাধারণ মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হলো কারা পরবর্তী উপজেলা পরিষদ পরিচালনার দায়িত্বে আসছে।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এম এ মোতালেব সবাইকে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, সাতকানিয়ার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছি। নির্বাচিত হলে আমরা দল, মত নির্বিশেষে সাতকানিয়াকে একটি মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলব।
অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবদুল গাফফার চৌধুরী বলেছেন, কোন ধরনের কারচুপি না হলে তারাই জিতবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকার আহবান জানিয়েছেন।
নির্বাচন প্রস্তুতির হালচাল
উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে ১২৫টি কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ ৭০১টি। নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা সমন্বয়ক হিসেবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন প্রিজাইডিং অফিসার এবং প্রতিটি ভোটকক্ষে একজন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও দুজন পোলিং অফিসার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। সে হিসেবে ১২৫জন প্রিসাইডিং অফিসার, ৭০১জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, ১হাজার ৪০২জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন।
র্বাচনি ১২৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯৩টি কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভোটকেন্দ্র, ৩২টি সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৭টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ভোট হবে। মোট ভোটার ২ লাখ ৮৩ হাজার ৩৮০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১লাখ ৫০হাজার ২৮৬ জন এবং নারী ভোটার ১লাখ ৩৩হাজার ৯৪জন।
সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হবে বলে আশা প্রকাশ করে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। যেহেতু সব কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হবে সেহেতু কোনো ধরনের কারচুপির সুযোগ নেই। তিনি ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার আহবান জানান।
প্রসঙ্গত, গত ৩ সেপ্টেম্বর সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের তফসিল ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ২৩ মার্চ সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে চেয়ারম্যান, ভাইস- চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াত সমর্থিতরা নির্বাচিত হন। আগামী ২১ অক্টোবর এ পরিষদের মেয়াদ শেষ হবে।