চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড। সময় দুপুর সোয়া একটা। ওয়ার্ডের গেইটে তালা ঝুলছে। ভেতরে প্রবেশের জন্য দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকজন রোগীর স্বজন। কিন্তু কঠোর অবস্থানে সিকিউরিটি গার্ড। এখন ভেতরে যাওয়ার নিয়ম নেই- সাফ জানিয়ে দিলেন তিনি।
তবে কঠিন হৃদয়ের এই মানুষটাই কিছুক্ষণের মধ্যে হয়ে গেলেন একবারে সরল! পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তি তার হাতের মধ্যে কিছু টাকা গুজে দিয়েই ঢুকে গেলেন ভেতরে। বোঝার বাকি রইল না, তার এই কঠোরতা কিংবা নিয়মের বিষয়টি সবার জন্য নয়।
শুধু ২৮ নম্বর ওয়ার্ড নয়, প্রায় সব ওয়ার্ডেই চলছে এ অনিয়ম।
হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীর সঙ্গে দেখা করতে হলে স্বজনদের আসতে হয় নির্দিষ্ট সময়ে। এ সময়ের আগে-পরে স্বজনদের ওয়ার্ডে যাওয়ার নিয়ম নেই। আর এটিকেই পুঁজি করে রমরমা বাণিজ্য করছে ওয়ার্ডের গেইটে দায়িত্বরতরা।
বাণিজ্যের এখানেই শেষ নয়। হাসপাতালে রোগী আসা থেকে শুরু করে ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া পর্যন্ত সবখানেই চলে বাণিজ্য। এই বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ওয়ার্ড বয় ও আয়ারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, রোগীদের জরুরি বিভাগ থেকে ওয়ার্ডে পৌঁছে দিয়েই টাকা দাবি করেন আয়ারা। না দিলে দুর্ব্যবহার করেন। আবার কয়েকজন আয়াতো রোগী হুইলচেয়ারে বসতেই স্বজনদের জানিয়ে দেন- ৫০ টাকা দিতে হবে, ১০০ টাকা দিতে হবে!
শান্তি নেই ওয়ার্ডেও। এখানে কয়েকজন রোগী অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিনে চিকিৎসার অগ্রগতি না হওয়ার।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১৬নং ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন আমেনা বেগম। ১৫ দিন ধরে হাসপাতালের ২৯নং বেডে পড়ে থাকলেও তাঁর চিকিৎসার কোনো অগ্রগতি নেই।
আমেনার ছেলে হৃদয় সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বলেন, টাকা না দেওয়ায় দারোয়ান আমাকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। ডাক্তারের সঙ্গে কথাও বলতে পারছিনা। নার্সরা এসে আমার মাকে দেখে চলে গেছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, হাতেগোনা কয়েকটি ওয়ার্ড ছাড়া প্রায় সব ওয়ার্ডেই শয্যাসংখ্যার চেয়ে তিন-চার গুণ বেশি রোগী রয়েছেন। যাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের। এর মধ্যে নিউরোসার্জারি, কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিক বিভাগেও রোগীর ভীষণ চাপ। আবার বার্ন ইউনিটে রোগীরা অভিযোগ করেন, এখানে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব রয়েছে।
হাসপাতালের অনেক সিটের বেডের অবস্থা খুবই খারাপ। এসব বেড ছেঁড়া এবং অপরিচ্ছন্ন। প্রাপ্ত বয়স্ক রোগীর পাশাপাশি শিশুদেরও রাখা হচ্ছে এসব বেডে!
এদিকে হাসপাতালে প্যাথলজি বিভাগেও দেখা গেছে অনিয়ম। দুস্থ রোগীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। আর দায়িত্বে থাকা কর্মচারীদের হাতে টাকা দিয়ে লাইন ছাড়াই প্যাথলজি টেস্ট করানোর ছাড়পত্র পেয়ে যাচ্ছেন অন্যরা। তবে ডাক্তাদের অনুরোধে কয়েকজন রোগীকে দেখা গেল লাইনে দাঁড়ানো ছাড়া পরীক্ষা করাতে।
সবচেয়ে বাজে অবস্থা দেখা গেছে হাসপাতালের বাথরুমের। প্রায় সব বাথরুমই নোংরা, দুর্গন্ধময়। এখানে বেশি অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে নারী রোগীদের। কারণ খোলা বাথরুমেই তাদের সারতে হয় গোসল। আর এ স্থান দিয়ে নারীদের পাশাপাশি চলাফেরা করছে পুরুষ রোগীরাও!
এসব বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম জয়নিউজকে বলেন, যে বেডগুলো খারাপ আবস্থায় আছে সেগুলো আমরা পরিবর্তন করবো। একইসঙ্গে আরো যেসব সমস্যা আছে সেগুলোও আমরা দেখব। আর যারা রোগীদের থেকে টাকা নিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জয়নিউজ