সাপ্তাহিক ছুটিতে গ্রামের বাড়ি আনোয়ারা গিয়েছিলেন মেহাতাব উদ্দিন। তিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানির একাউন্টস ম্যানেজার। ছুটি শেষে বাড়ি থেকে ফেরার পথে তিনি অটোরিকশায় উঠেন। অটোরিকশা থেকে নগরের কোতোয়ালি নেমে ঢুকলেন একটি মিষ্টির দোকানে। হঠাৎ মনে পড়ল অটোরিকশায় ফেলে এসেছেন ব্যাগ।
দ্রুত ফিরে গেলেন অটোরিকশা যেখানে ছিল সেখানে। কিন্তু সেখানে অটোরকশা নেই! মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল মেহাতাবের। কারণ ওই ব্যাগে যে ছিল তাঁর দীর্ঘদিনের জমানো এক লাখ টাকা!
তৎক্ষণাৎ ছুটে গেলেন কোতোয়ালি থানায়। মেহাতাবের অভিযোগ পেয়ে পুলিশও নেমে পড়ল অভিযানে। পুলিশের সহায়তায় একদিনের মধ্যেই মেহাতাব ফিরে পেয়েছিলেন তাঁর সঞ্চিত লাখ টাকাসহ ব্যাগ।
মেহাতাব উদ্দিন জয়নিউজকে বলেন, অটোরিকশায় ব্যাগ ফেলে আসার পর আমি খুব ভেঙে পড়ছিলাম। খুব আশা নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়েছিলাম। কারণ এর আগেও একবার আইস ফ্যাক্টরি রোডে ছিনতাইকারীরা অস্ত্রের মুখে আমার ৪০ হাজার টাকাসহ মুঠোফোন ছিনিয়ে নিলে পুলিশ তা উদ্ধার করে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, সদরঘাট থানার ওসি নিজাম ভাই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে আমার অভিযোগটি আমলে নিয়েছিলেন। উনার সহায়তায়ই আমি টাকা ও মুঠোফোনটি পেয়েছিলাম।
অথচ ওই সময় পুলিশের কাছে যাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে ছিলাম। আমার আশাপাশের লোকজন তখন বলছিল- টাকাতো পাবে না পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে উল্টো হয়রানি বাড়বে। তারপরও আমি অভিযোগ করেছিলাম। পুলিশের আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ করলে ওসি মহসীন ভাই দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে টাকাসহ আমার ব্যাগটি উদ্ধার করে দেন- যোগ করেন মেহাতাব।
মেহাতাবের মতো এখন প্রায় সবাই নির্ভয়ে অভিযোগ দিতে চলে আসছেন থানায়। তাঁদের কেউ ছিনতাইয়ের শিকার, আবার কেউ পারিবারিক সহিংসতা, অপহরণ কিংবা অন্য সমস্যায় জর্জরিত। বিপদে পুলিশের সেবা পাওয়া তেমনই একজন তারেক।
গত শুক্রবার (১১ অক্টোবর) ইউএসটিসি থেকে অপহরণ করা হয় তারেক নামের যুবকটিকে। অপহরণকারীরা মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করে মোটা অঙ্কের টাকা। টাকা না পেলে তারেককে খুন করা হবে বলে তার পরিবারকে হুমকি দেয় অপহরণকারীরা। তবে মুক্তিপণ নিতে এসে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় অপহরণকারীরা।
প্রাণনাশের ভীতি থাকার পরও পুলিশের ওপর আস্থা রেখেছিল তারেকের পরিবার। এর প্রতিদানও তারা পেয়েছে। অভিযোগের তিন ঘণ্টার মধ্যেই অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার খুলশি থানা পুলিশ। একইসঙ্গে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় অপহৃত তারেককে।
অপহৃত যুবক মো. হাসান তারেক জয়নিউজকে বলেন, আমাকে অপহরণের পর তারা (অপহরণকারীরা) অনেক ভয়-ভীতি দেখায়। তাই আমি আমার বোনকে ফোন করে টাকা দিতে বলেছি। এমনকি পুলিশকে জানাতে নিষেধও করেছিলাম। তারপরও সাহস করে ঘটনাটি পুলিশকে জানিয়েছে আমার পরিবার। পুলিশ যেভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে আমার পরিবারকে সহায়তা করেছে আমি ও আমার পরিবার তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
নগরের কয়েকটি থানা ঘুরে দেখা গেছে, ছোট-বড় যেকোনো বিষয়ে এখন পুলিশের সাহায্য নিতে নির্ভয়ে থানায় ছুটে আসছে সাধারণ মানুষ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই থানার ওসি থেকে শুরু কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তারাও সাধ্যমতো সহায়তা করছেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান জয়নিউজকে বলেন, পুলিশ সবসময় জনগণের বন্ধু। জনগণের আস্থা অর্জন করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। যদি আমাদের কাজে জনগণ আস্থা পায় সেটা আমাদের জন্য স্বস্তির বিষয়। কাজ করার পর যদি স্বীকৃতি পাওয়া যায় সেটা আমাদের উৎসাহ দেয়, অণুপ্রেরণা দেয়।
তিনি আরো বলেন, জনগণের কাছে যাওয়ার জন্য ওসিদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। ওসিদেরকে বলা হয়েছে সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে তাদের বিদ্রুপ দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। জনগণ আসবে সে আশায় বসে না থেকে জনগণের কাছে যেতে হবে। তাই হ্যালো ওসি, ওপেন হাউজ, কমিউনিটিং পুলিশের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর চেষ্টা চলমান আছে।
জয়নিউজ