সাতকানিয়া উপজেলায় অসংখ্য গরু ‘ল্যাম্পি স্কিন’ নামে ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। সদর ইউনিয়নে কয়েকটি একটি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে । এতে চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন খামারিরা। প্রতিষেধক না থাকায় উপজেলাজুড়ে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
তারা বলছেন, এ রোগের সুনির্দিষ্ট প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন না থাকায় প্রাদুর্ভাবের শঙ্কা আরো বাড়ছে। তবে শঙ্কিত না হয়ে খামারিদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানায়, লাম্পি স্কিন ডিজিজ গরু মহিষের চর্মরোগ। ১৯২৯ সালে প্রথম ধরা পড়ে জাম্বিয়ায়। পরে ছড়িয়ে পড়ে আফ্রিকা ইউরোপের অনেক দেশে। গত আগস্টে দেখা যায় ভারত ও চীনে। ১৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার গরুর ম্ধ্যে প্রথম এ রোগ দেখা দেয় শ। এখন উপজেলার সোনাকানিয়া, সাতকানিয়া, কালিয়াইশ, নলুয়া, আমিলাইশ, ছদাহা, ধর্মপুর, পুরানগড়, কালিয়াইশ, ঢেমশা, পশ্চিম ঢেমশা, খাগরিয়া সহ প্রায় সব ইউনিয়নে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। উপজেলার ৩০ শতাংশ গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তবে এ রোগে মৃত্যুর সংখ্যা খুবই কম। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে উপজেলার সাতকানিয়া সদর ইউনিয়নে শুধুমাত্র একটি গরুর মৃত্যু হয়েছে। লাম্পি আক্রান্ত হলে ডেঙ্গুর মতো শুরুতেই তীব্র জ্বর হয়। পরে ফুলে উঠে গরুর পুরো শরীর। সারতে সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ দিন।
খামারিরা জানিয়েছেন, ‘ল্যাম্পি স্কিন’ আক্রান্ত গরুর প্রথমে পা ফুলে যায়। এরপর জ্বর হয়ে ২-৩দিনের মধ্যে গোটা শরীর বসন্তের মতো ফোসকা দেখা দেয়। যা পরবর্তীতে ঘায়ে পরিণত হচ্ছে। এ সময় গরুর শরীরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা দেখা দেয় এবং গরু খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয়। সারাক্ষণ চুপচাপ থাকে। অনেক সময় গরুর বুকের নিচে পানি জমে ক্ষত সৃষ্টি হয়। ক্ষতস্থান পচে গিয়ে সেখান থেকে মাংস খসে পড়ে। এতে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে গরু খামারিদের মাঝে।
উপজেলা ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফেরদৌস রুবেল বলেন, আমার খামারে তিনটি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ঘরোয়া চিকিৎসায় দুটি গরু সুস্থ হয়েছে। তবে একটি গরুর এ রোগ প্রকোপ আকার ধারণ করেছে। গরুটির পুরো শরীর জুড়ে বসন্তের মতো ফোসকা পড়ে ঘায়ের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গরুগুলো পর্যবেক্ষণ করে পরীক্ষামূলক একটি ভ্যাকসিন দিয়েছেন।
মশা, মাছির মাধ্যমেই এ রোগ বিস্তার লাভ করছে জানিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবুল কালাম আজাদ জয়নিউজকে বলেন, লাম্পি রোগে আক্রান্ত গরুর গায়ে যাতে মশা, মাছি বা কোনো ধরনের পোকামাকড় বসতে না পারে সেজন্য মশারি টাঙানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া আক্রান্ত গরুর গায়ে বসা কোন মশা, মাছি বা পোকমাকড় সুস্থ কোন গরুর গায়ে বসতে না পাওে সেদিকেও নজর রাখতে হবে। তাহলে হয়তো রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী ল্যাম্পি স্কিন রোগে এ পর্যন্ত ৩০শতাংশ গরু আক্রান্ত হয়েছে। তবে এ রোগে শুধুমাত্র একটি গরু মারা গেছে। খামারিদের সচেতন করতে ইতিমধ্যে প্রচারপত্র বিতরণ ও সভা- সেমিনার করা হবে।
জয়নিউজ/পিডি