শিক্ষকরাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষকরা পারেন পুরো জাতিকে বদলে দিতে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি শিক্ষকের প্রয়োজন শুধু সৎ ও নিষ্ঠাবান হওয়ার। তবে নিষ্ঠাবান শিক্ষকের পাশাপাশি রয়েছে ফাঁকিবাজ শিক্ষকও। বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক ফাঁকিবাজ প্রধান শিক্ষককে ধরে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখলেন এলাকাবাসী।
ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ার ঝালদার পুস্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। সোমবার (১৯ নভেম্বর)এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসেন না বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়। মিড-ডে মিলেও তিনি মানসম্পন্ন খাবার দিতেন না। কোনো অভিযোগ নিয়ে তার কক্ষে গেলে তাকে পাওয়া যেত না। দুই একজন অভিভাবক তাকে বিষয়টি বললেও তিনি নিজেকে বদলাননি।
এরপর তারা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও সুফল পাননি। প্রশাসনের কথাও তিনি অগ্রাহ্য করেছেন। এরপর অভিভাবকরা নিজেরাই পদক্ষেপ নেন। তারা একদিন বিদ্যালয়টিতে তালা মেরে দেন। প্রায় সপ্তাহখানেক ক্লাস বন্ধ রাখা হয়।
পরে বিকল্প হিসেবে পার্শ্ববর্তী দুর্গামন্দিরে ক্লাস নিতেন শিক্ষকরা। প্রধান শিক্ষক নিজের আচরণ না বদলালে এ বিদ্যালয় খোলা হবে না বলে জানান এলাকাবাসী। বিষয়টি মেটাতে ওই শিক্ষা দপ্তরের কর্তৃপক্ষ এলাকায় গেলে প্রধান শিক্ষক মুচলেকা দিয়ে বিদ্যালয়টি ফের চালু করেন।
কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই ফের আগের আচরণে ফিরে যান প্রধান শিক্ষক বিপ্লব। ফের আগস্ট মাসে মিড-ডে মিলে মুড়ি ও চানাচুর দিলে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এ ছাড়াও প্রধান শিক্ষক আগের মতোই দেরি করে বিদ্যালয়ে আসার পাশাপাশি অনেক দিন আসতেনই না। এভাবে টানা প্রায় তিন মাস চলার পর বেশ ক্ষুব্ধ হন অভিভাবকসহ এলাকাবাসী।
এরই জেরে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রধান শিক্ষক বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় বিদ্যালয়ে এলে তাকে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে ফেলেন এলাকাবাসী।
প্রধান শিক্ষককে বেঁধে ফেলার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসে ওই প্রধান শিক্ষককে মুক্ত করে। মুক্ত হয়েই স্থানীয় থানায় এ নিয়ে একটি মামলা দায়ের করেন বিপ্লব গঙ্গোপধ্যায়।
মামলায় পুস্তি গ্রামের চন্দ্র কুমার ও গুরুদাস প্রামাণিক নামের দুই ব্যক্তিকে প্রধান আসামি করেন তিনি। সোমবার রাতেই ওই দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আদালতেও চালান করেছে পুলিশ। বিচারে পুরুলিয়া জেলা মুখ্য বিচারক রিম্পা রায় প্রধান শিক্ষককে আটকে রাখার জন্য প্রধান দুই আসামিকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আদালত বিপ্লব গঙ্গোপধ্যায়ের পক্ষে রায় দিলেও পুরুলিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এই ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠন করেছে।
এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শুধু এই বিদ্যালয়েই নয় আগের দুই প্রতিষ্ঠানেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সেই কারণে তিনি তিনবার শাস্তিস্বরূপ বদলিও হয়েছেন। কিন্তু তবুও তার আচরণে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।