চট্টগ্রামকে ক্লিন ও গ্রিন সিটিতে পরিণত করার লক্ষ্যে ৩৬ দফা প্রতিশ্রুতি ছিল তাঁর নির্বাচনি ইশতেহারে। এসব প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রেখেছিলেন নগরবাসী, মেয়র নির্বাচিত হলেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। দায়িত্ব নেওয়ার সাড়ে চার বছরে প্রতিশ্রুতির কতটা রক্ষা করেছেন তিনি?
মেয়রের সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে বিশেষ আয়োজন করেছে জয়নিউজ। ধারাবাহিক আয়োজনের প্রথমটি সাজানো হলো পরিচ্ছন্নতা নিয়ে-
একসময় নগরের অজস্র রাস্তার পাশে পড়ে থাকত ময়লা-আবর্জনা। এসব রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটার সময় নাকে রুমালচাপা দিতে হতো পথচারীদের।
তবে সাড়ে চার বছরে বদলে গেছে সেই চিত্র। নগরের অনেক খোলা ডাস্টবিনের স্থান হালে হয়ে গেছে ফুলের বাগান! গত সাড়ে চার বছরে অপসারণ করা হয়েছে ৮২৫টি খোলা ডাস্টবিন। ২০১৫ সালে যেখানে খোলা ডাস্টবিন ছিল ১ হাজার ৩৭৫টি, এখন সেই সংখ্যা মাত্র সাড়ে পাঁচশ’!
রাজপথের সঙ্গে সঙ্গে এখন নগরের অলি-গলিতেও খুব একটা ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায় না। কারণ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) পরিচ্ছন্নকর্মীরা যে ঘরে ঘরে গিয়ে নিয়ে আসে আবর্জনা!
চসিক সূত্রে জানা গেছে, মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহের কর্মসূচি নেন আ জ ম নাছির। কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাসা, ফ্ল্যাট, অফিস, মার্কেট, সুপারমল, হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিতরণ করা হয় প্যাডেলযুক্ত ৯ লাখ ছোট বিন এবং ৩ হাজার ৪৩০টি চাকাযুক্ত বড় বিন। বর্জ্য সংগ্রহে সংযোজন করা হয় ৭৫২টি ভ্যান গাড়ি। শুধু ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহের জন্য নতুন নিয়োগ দেওয়া হয় ১ হাজার ৯৭২ জন পরিচ্ছন্ন শ্রমিককে।
ইতোমধ্যে এর সুফল পাচ্ছেন নগরবাসী। ঘরে ঘরে গিয়ে বর্জ্য সংগ্রহ করছেন চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। চসিকের এ কর্মসূচিতে খুশি নগরবাসী। একইসঙ্গে শ্রমিকদের তদারকিতে পরিচ্ছন্ন বিভাগকে আরো তৎপর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে।
নিউ চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার নাছির তালুকদার জয়নিউজকে বলেন, ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহের কনসেপ্টা আসলেই প্রশংসনীয়। ঘরে ঘরে বিন দেওয়া এবং নিয়মিত সেগুলো সংগ্রহ করছে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। তবে মাঝে মাঝে পরিচ্ছন্নকর্মীরা আসতে দেরি করে।
সকাল হলেই সুন্দর শহর
দিনের বেলায় শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে গেলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো পরিচ্ছন্ন কর্মীদের। আ জ ম নাছির মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর দিনের পরিবর্তে রাতে ময়লা অপসারণের উদ্যোগ নেন। বর্তমানে প্রতি রাতে নগর পরিচ্ছন্ন করতে মাঠে নেমে পড়ে ১ হাজার ৯০০ জন সেবক।
চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, এখন চট্টগ্রাম শহর আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন।
পরিচ্ছন্ন বিভাগ সূত্র জানায়, রাতের বেলা পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত প্রত্যেক শ্রমিককে বিনামূল্যে রেডিয়ানযুক্ত হলুদ রঙের সেবক ইউনিফর্ম দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনা এড়াতে এবং পরিচ্ছন্ন কাজে ব্যাঘাত না ঘটতে শ্রমিকদের দেওয়া হয়েছে লাইটযুক্ত হেলমেট। এছাড়া পরিচ্ছন্নকর্মীদের জন্য উন্নতমানের রেইনকোট এবং পরিচ্ছন্ন কাজ তদারকি কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে সাইকেল।
৬ মোড়ে আধুনিক টয়লেট
চট্টগ্রামকে আধুনিক নগর হিসেবে গড়তে নগরের ৬টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে স্থাপন করা হয়েছে আধুনিক পাবলিক টয়লেট। লালদিঘীর পাড়সংলগ্ন জেল গেইট, কে সি দে রোড, অক্সিজেন মোড়, বিবিরহাট গরুর বাজার এবং কর্ণফুলী নতুন ব্রিজ এলাকায় আধুনিক এ টয়লেট স্থাপন করা হয়। অপর টয়লেটটি স্থাপন করা হচ্ছে কাপ্তাই রাস্তার মাথায়।
মেয়র বললেন…
নগরপিতা আ জ ম নাছির উদ্দীন জয়নিউজকে বলেন, গত সাড়ে বছর চট্টগ্রাম পরিচ্ছন্ন নগর হিসেবে পরিণত হয়েছে। এটি শুধু আমার মুখের কথা নয়। নগরবাসীই অকপটে স্বীকার করবেন। আমি নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিলাম চট্টগ্রামকে গ্রিন ও ক্লিন সিটিতে রূপান্তর করবো। এ ঘোষণা আমি বাস্তবায়ন করেছি। ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহে চসিক শতভাগ সফল।
মানুষ এখন আর নাকে রুমাল দিয়ে হাঁটে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, খোলা ডাস্টবিনগুলো এখন ফুলের বাগানে পরিণত হয়েছে। ফুলের সুগন্ধ নিয়ে পথচারীরা এখন চলাচল করেন। রাতের ময়লা পরিষ্কার হওয়ায় ঘুম থেকে উঠেই নগরবাসী দেখছে পরিচ্ছন্ন শহর। এটিই গ্রিন ও ক্লিন সিটির প্রমাণ।