দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত বিকিকিনিতে জমজমাট থাকে নগরের ব্যস্ত এলাকা আন্দরকিল্লা ও সিরাজউদ্দৌলা রোডের ফুটপাত। পথচারীর চলাচলের পথে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসলেও কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। অবশ্য যাদের মাথা ঘামানোর কথা সেই পুলিশও যে ফায়দা লুটে ফুটপাতের!
তবে পুলিশ নয়, আন্দরকিল্লা ও সিরাজউদ্দৌলা রোডের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তিন যুবকের হাতে। ওই তিন যুবকই মূলত ফুটপাতের দোকানগুলো থেকে প্রতিদিন চাঁদা তোলে। ক্ষমতাধর এই তিন যুবক হলো- বাবু, আসিফ ও লিটন।
আন্দরকিল্লা থেকে সিরাজউদ্দৌলা রোডের ফুটপাতে অবৈধ দোকান রয়েছে শতাধিক। এদের কেউ বিক্রি করে ফল কিংবা সবজি, আবার কেউ বিক্রি করে মাছ-মাংস কিংবা অন্য কিছু। তবে বিক্রি যাই করুক না কেন এ এলাকায় বসলেই দিতে হয় চাঁদা।
দোকান বুঝে চাঁদা নির্ধারণ করা হয়। দিনে কারো কাছ থেকে নেওয়া হয় ৫০ টাকা, আবার কারো কারো কাছ থেকে ১০০ টাকা। চাঁদা না দিয়ে কেউ যদি ফুটপাতে বসেছে তৎক্ষণাৎ তাকে উচ্ছেদ করা হয়।
আরও পড়ুন: নেতা আর পুলিশের প্রশ্রয়ে অলংকার মোড়ে যুবরাজের রাজত্ব
বেশ কয়েকজন ভ্রাম্যমাণ দোকানি জয়নিউজকে জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যায় তাদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করতে আসে বাবু ও আসিফ। আগে লিটনও আসত, তবে এখন সে আসে না। তবে প্রতিদিনের চাঁদার টাকা নিয়ে বাবু-আসিফ চলে যায় তার (লিটনের) কাছে।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি অভিযোগ করেন, তিন যুবকের কারণে আন্দরকিল্লা-সিরাউদ্দৌলা রোডের ফুটপাত দিনের পর দিন দখল হয়ে আছে। প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে বাবু, আসিফ ও লিটন।
তবে ভ্রাম্যমাণ দোকানদার কিংবা স্থানীয় কেউই ওই তিন যুবকের রাজনৈতিক পরিচিতি নিশ্চিত করতে পারেনি।
আন্দরকিল্লায় একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আহসান আলী। নিয়মিত এই ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যেতে হয় তাঁকে। তিনি জয়নিউজকে বলেন, সিরাজউদ্দৌলা রোডে সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য নির্মিত ফুটপাতে সারি সারি দোকান। তাই বাধ্য হয়ে পথচারীদের হাঁটতে হয় রাস্তা দিয়ে। ব্যস্ত এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে মাঝে মাঝে ঘটে দুর্ঘটনা। গতবছর দুর্ঘটনায় এখানে প্রাণ হারিয়েছে একটি মেয়ে। বছরের পর বছর ধরে দেখছি এ ফুটপাত দখল হয়ে আছে। কিন্তু কেউ দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেয় না।
ওই ফুটপাতের কয়েকজন দোকানি জয়নিউজকে জানান, তারা প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০ টাকা চাঁদা দেয়। বাবু ও আসিফ প্রতিদিন টাকা তুলতে আসে। শুনেছি সেই টাকার হিসাব নাকি রাখে লিটন।
তারা অভিযোগ করেন, পুলিশও আমাদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়। পুলিশ একটা ছেলেকে পাঠায় সে সব দোকান থেকে চাঁদা তুলে নিয়ে যায়। এরপরও মাঝে মাঝে পুলিশ এসে দোকান বন্ধ করে দেয়। মালপত্র রাস্তায় ফেলে দেয়।
পুলিশ কোন ছেলেকে পাঠায়, তার পরিচয় কী- এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে দোকানিরা কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
জয়নিউজ