নগরের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার কেন্দ্রস্থলে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের আনাগোনা থাকে। এখানকার ফুটপাতে বছরজুড়েই জমজমাট থাকে ব্যবসা। ব্যবসার পাশাপাশি এখানে জমজমাট চাঁদাবাজিও।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এখানের কয়েকশ’ দোকান থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে একদল যুবক। স্থানীয় এক রাজনৈতিক ব্যক্তির লোক পরিচয়ে তারা প্রতিদিন চাঁদা তুলে। চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত আছে ডবলমুরিং থানার কয়েকজন দুর্নীতিবাজ পুলিশও। প্রতিটি দোকান থেকে টহল পুলিশ ২০ টাকা করে এবং স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি নেয় ৩০ টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সুশৃঙ্খলভাবে চাঁদাবাজির জন্য পুরো আগ্রাবাদ এলাকার ফুটপাতকে ছয় ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
৮নং ইউনিট: আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোড়ের বাদামতলী মোড় থেকে বারেক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশের দোকান এই ইউনিটের অন্তর্ভুক্ত।
২১নং ইউনিট: বাদামতলী মোড় হতে লাকী প্লাজা হয়ে সোনালী ব্যাংকের দক্ষিণ পাশের রাস্তার ফুটপাত এই ইউনিটের অন্তর্ভুক্ত।
২৪নং ইউনিট: লাকী প্লাজার পর থেকে টিঅ্যান্ডটি কলোনি হয়ে এক্সেস রোডের ফুটপাত।
২৫নং ইউনিট: কমার্স কলেজ রোড় হয়ে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সামনে থেকে কমার্স কলেজের উভয় পাশের ফুটপাত।
২৬নং ইউনিট: সেন্টমার্টিন হোটেলের পেছনের রাস্তা ও সিলভার স্পোনের সামনের ফুটপাত।
২২নং ইউনিট: সাংগ্রিলা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট থেকে আগ্রাবাদ হোটেলের আগ পর্যন্ত সফদার আলী রোড়ের ফুটপাত।
প্রতিটি ইউনিটে দোকান রয়েছে ৯০ থেকে ১২০টি। সমিতিকে প্রতিদিন দিতে হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এছাড়া কেউ দোকান নিতে চাইলে সমিতিকে দিতে হয় ১ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা। প্রতি মাসে মেট্রোপলিটন হকার্স সমিতিকে দিতে হয় সর্বনিম্ন ৯০০ টাকা।
আরও পড়ুন: ৩ যুবকে জিম্মি আন্দরকিল্লা-সিরাজউদ্দৌলার ফুটপাত
যোগাযোগ করা হলে ২৫নং ইউনিটের সহসভাপতি মো. হুমায়ুন জয়নিউজকে বলেন, যুবলীগ নেতা খুরশীদ প্রতি দোকান থেকে ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা নিয়ে যেত। সমিতির নেতাদের দিতে হতো ৯শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। এখন আমাদের ইউনিটে দোকান নিতে হলে কম করে হলেও এককালীন ১ লাখ টাকা এবং প্রতি মাসে ৯০০ টাকা দিতে হবে। এছাড়া প্রতিদিন বিদ্যুৎ বাবদ ৪০ থেকে ৫০ টাকা দিতে হবে।
কোটি টাকার চাঁদার ভাগ কে পায়, জানতে চাইলে ২২নং ইউনিটের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নেতা জয়নিউজকে জানান, আগে যুবলীগ নেতা ও সন্ত্রাসী খুরশীদ আগ্রাবাদ এলাকার ফুটপাত থেকে মাসে ১৮ লাখ টাকা আদায় করত। তবে এখন আমাদের কম দিতে হয়। এর সিংহভাগ চলে যায় স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা এবং থানা পুলিশের কাছে।
তিনি আরো বলেন, তবে আমরা সরাসরি কাউকে টাকা দিই না। সমিতি থেকেই এসব ম্যানেজ করা হয়। তাদেরকে যদি টাকা না দিই তাহলে আমরা সব অবৈধ। এক মুহূর্তের জন্যও ফুটপাতে বসা যাবে না।
হকার নেতাদের তথ্যমতে, র্যাবের ক্রস ফায়ারে মারা যাওয়া খুরশীদ কখনো নিজে এসে ফুটপাত থেকে চাঁদা নিতেন না। আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের পুরো চাঁদা নিয়ন্ত্রণ করতেন ২৮নং ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর চৌধুরী।
খুরশীদের পতনের পর এলাকার একক নিয়ন্ত্রণ যায় ওই স্থানীয় রাজনৈতিকের হাতে। রাজনীতির মাঠে মিটিং-মিছিলসহ তাকে নানা কাজে সহায়তা করে হকাররা।
তবে চাঁদাবাজিতে পুলিশের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুদীপ কুমার দাশ। তিনি জয়নিউজকে বলেন, যারা এসব বলছেন, তাদের কোনো ভিত্তি নেই। আগ্রাবাদে রোড় ব্লক করে মেইন রোড়ের উপর কেউ ব্যবসা করতে পারবে না।
ওসি আরো বলেন, আগ্রাবাদ থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে কোনো হকার বসতে পারবে না। ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।