চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদের (সিবিএ) নির্বাচন নিয়ে ফের জটিলতা তৈরি হয়েছে। একপক্ষের অভিযোগ, ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে নানা বাহানায় নির্বাচন বিলম্বিত করছে কমিটি। আবার সংশ্লিষ্টদের দাবি, তারা নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছেন। ঝামেলা এড়াতেই নির্বাচন বিলম্বিত হচ্ছে।
সিবিএ সংবিধানের ২৪ ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে, প্রতি দুই বছর পর নির্বাচন করতে হবে। তবে এ সংগঠনের নির্বাচনের ইতিহাস খুব একটা সুখকর নয়। সিবিএ নির্বাচন চেয়ে দু’বার উচ্চ আদালতের গেছেন শ্রমিক নেতারা।
২০১০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সিবিএ নির্বাচনে জয়ী হন মমতাজ উদ্দিন আহমদ ও ওয়াহিদুল্লাহ সরকার। দুই বছরের জন্য নির্বাচিত হলেও নানা টালবাহনায় তাঁরা কাটান ২০১৬ সাল পর্যন্ত। একই কমিটি ভারপ্রাপ্ত নেতাদের দিয়ে সময় পার করেন আরো এক বছর।
পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১৭ সালের ২৪ আগস্টের নির্বাচনে মো. আবুল মনছুর ও রফি উদ্দিন খান প্যানেল নির্বাচিত হয়। তাদের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৯ সালের ২৩ আগস্ট। এবারও সময়মতো নির্বাচন না হওয়ায় আবারো উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন। দ্রুত নির্বাচন করতে গতবছরের ২ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত রুল জারি করেন।
নির্বাচন চেয়ে হাইকোর্টে রিটটি করেছিলেন বন্দর সিবিএর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. ফকরুল ইসলাম। যোগাযোগ করা হলে তিনি জয়নিউজকে বলেন, কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের সংগঠন সিবিএ। সংবিধান অনুযায়ী দুই বছর পর অবশ্যই নির্বাচন করতে হবে। এতে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটবে। এজন্যই আমি কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের জন্য উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।
এদিকে কমিটির মেয়াদ চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়নি। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক কাজি আবদুস ছাদেক নান্না জয়নিউজকে বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচন চাই। এতে নেতৃত্বের গুনাবলী বাড়বে।
তিনি অভিযোগ করেন, বন্দরে শ্রমিকদের কল্যাণে সিবিএ কাজ করছে না।বর্তমানে এখানে ট্রেড ইউনিয়ন নেই, আছে নেতাদের ট্রেড।
অভিযোগ অস্বীকার
নির্বাচন বিলম্বিত করার অভিযোগ অস্বীকার করেন বন্দর সিবিএর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নায়েবুল ইসলাম ফটিক। তিনি জয়নিউজকে বলেন, আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছি। চট্টগ্রাম বন্দর একটি আর্ন্তজাতিক বন্দর। ইতোমধ্যে আইএসপিএস টিম বন্দর পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করে কিছু শর্ত দিয়েছে।আগামী মার্চে তারা আবার বন্দর পরিদর্শনে আসবেন। এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কোনো ঝামেলা হলে বন্দর তথা দেশের জন্য অশনিসংকেত ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বজুড়ে।মূলত এজন্যই সি্বিএ নির্বাচন বিলম্বিত হচ্ছে।
একই প্রসঙ্গে সভাপতি মো. আবুল মনছুর বলেন, সিবিএ চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মচারীদের মঙ্গলের জন্য সর্বোচ্চ কাজ করেছে। যেজন্য গত দুই বছরে কোনো শ্রমিক অসন্তোষের কারণে এক মিনিটের জন্যও বন্দর বন্ধ হয়নি।
তিনি বলেন, আমরাও নির্বাচন চাই। বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুরোধেই আপাতত সিবিএ নির্বাচন হচ্ছে না। তবে ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া চলমান আছে।
তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের বন্দরের জন্য দু’হাত ভরে দিয়েছেন। বন্দর এলাকায় কোনো অনাখাঙ্খিত ঘটনায় বিদেশিদের কাছে চট্টগ্রাম বন্দরকে হেয় করা মানে প্রধানমন্ত্রী তথা দেশকে হেয় করা। আমরা চাই চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বের বুকে আরো উন্নত বন্দরের তালিকায় স্থান করে নিক।
কর্তৃপক্ষ বলছে…
নির্বাচনের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জয়নিউজকে বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদ নির্বাচনের ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহী। বন্দরে বর্তমানে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। দেশের একমাত্র সমুদ্রবন্দরটি একটি ক শ্রেণীর কেপিআই এবং আইএমও-এর আইএসপিএস কোড অনুসরণকারী আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর। গতবছরের ১৭ ডিসেম্বর আমেরিকার কোস্টগার্ড বন্দর পরিদর্শনে সন্তোষ প্রকাশ করলেও কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা তা কতটুকু বাস্তবায়ন করেছি তা দেখতে আবারো আইএসপিএস টিম দেখতে আসবেন। এরমধ্যে যদি সিবিএ নির্বাচন নিয়ে কোনো গোলযোগ সৃষ্টি হয় তা সামাল দেওয়া আমাদের জন্য কঠিন হবে। মূলত এ কারণেই কর্মচারীদের মার্চের পরে সিবিএ নির্বাচন করার অনুরোধ করেছি।
জয়নিউজ