পেকুয়ার মগনামা ইউনিয়নে কিশোর সায়েদুল হককে হত্যা করেছে তার তিন বন্ধু। ক্রিকেট খেলায় ঝগড়া ও একটি দোকান চুরির ঘটনার জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। হত্যায় সরাসরি জড়িত না থাকলেও পরিকল্পনায় ছিলেন আরো তিনজন।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব কুমার দেব’র আদালতে সায়েদের তিন বন্ধু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে সায়েদুলকে হত্যার বর্ণনা দেন তারা।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার তিনজন হলেন মগনামা ইউপির বাজারপাড়া এলাকার নুরুল হোসেনের ছেলে আব্দুর রহিম ওরফে এনা মিয়া, ফরিদুল আলমের ছেলে জিয়াউর রহমান ওরফে লালু ও গুরা মিয়ার ছেলে মো. বাপ্পি।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউপির ধারিয়াখালী এলাকার ভোলাখালে বসানো বিহিন্দি জালের ভেতর থেকে মগনামা ইউপির বাজারপাড়া এলাকার শহিদুল ইসলামের ছেলে মো. সায়েদুল হকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
শুক্রবার রাতে সায়েদুলের মা তসলিমা বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে শনিবার ভোর ৫টার দিকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
পেকুয়া থানার এসআই কাজী আব্দুল মালেক বলেন, মামলার পর অভিযান চালিয়ে তিন কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা শনিবার বিকেল ৩টার দিকে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
আদালতে তিন কিশোরের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ফুটবল ও ক্রিকেট খেলায় ঝগড়ার জের এবং দোকান চুরির ঘটনার জের ধরে ১৫ দিন আগে ছয়জন মিলে সায়েদুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মতে ঘটনার দিন সোমবার রাতে সায়েদুল, আব্দুর রহিম, জিয়াউর রহমান ও মো. বাপ্পি-এই চারজন মিলে বাজারপাড়া এলাকার লবণমাঠের একটি টংঘরে মদ পানের সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্তটি সায়েদুলকে জানানো হলে সে রাজি হয়।
সোমবার রাতে ছয়জনের মধ্যে তিনজন রাস্তায় পাহারা ও অন্য তিনজন সাঈদুলকে নিয়ে টংঘরের কাছে যায়। এ সময় আব্দুর রহিম সায়েদুলকে বলে যে, মদের দুটি বোতল টংঘরের পাশে কুয়ার ভেতরে গেড়ে রাখা হয়েছে। কুয়ায় হাঁটু সমান পানি ছিল। রহিম সায়েদুলকে মদের বোতল দুটি কুয়া থেকে কুড়িয়ে তুলতে বলে। এসময় সায়েদুল কুয়ায় নামলে রহিম ও জিয়াউর রহমানও কুয়ায় নামেন। একটি বোতল কুড়িয়ে নেওয়ার পর রহিম সায়েদুলকে পানিতে চুবিয়ে ধরেন।
এসময় জিয়াউর রহমানও তাকে ঘাড় ধরে চুবিয়ে রাখেন। ওই সময় বাপ্পি কুয়ার পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অন্য তিনজন রাস্তায় হাঁটাচলা করছিলেন। মৃত্যু নিশ্চিত হলে রহিম গলায় মাফলার পেঁচিয়ে এবং জিয়াউর রহমান ও বাপ্পি আড়াআড়িভাবে ধরে সায়েদুলের মরদেহ পাশের ভোলাখালে ফেলে দেন। এরপর তিনজন বাড়ি চলে যান এবং রাস্তায় পাহারারত অন্য তিনজনকেও মুঠোফোনে বাড়িতে চলে যেতে বলেন।
পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল আজম জয়নিউজকে বলেন, সায়েদুল হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্য যারা জড়িত তাদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।