লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদ দিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে নীরব হোসেন নামে (১৬) এক কিশোরকে মারধর ও নির্যাতন করা হয়। পরে উৎসুক জনতার বিরুদ্ধে নির্যাতনের পর গলায় জুতার মালা ও ঝাড়ু পরিয়ে উল্লাস করার অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকালে ভুক্তভোগীর নানি আলেয়া বেগম থানায় এ অভিযোগ করেন।
এদিকে কিশোরকে ঝাড়ু ও গলায় জুতার মালা পড়ানো সে ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এলাকায় চাঞ্চল্য দেখা দেয়। এ ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান এলাকাবাসী।
জানা যায়, ছয়মাস ধরে স্থানীয় রাশেদের চামড়ার দোকানে কাজ করতেন মৃত কিরন হোসেনের ছেলে নীরব হোসেন। অনেক খোঁজাখুজির পরও দোকান মালিক রাশেদের কাছ থেকে মিলেনা তার পারিশ্রমিক। পরে শালিসী বৈঠকে স্থানীয় কাউন্সিলর ও মাতব্বররা তাকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। তবে কাউন্সিলর শিপন ও শালিসদার ইসমাইল ঝাড়ু ও জুতার মালা পরিয়ে দেয় তাকে।
সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নীরব হোসেন জয়নিউজকে বলেন, ছয়মাস ধরে স্থানীয় রাশেদের চামড়ার দোকানে শ্রমিকের কাজ করতো সে। দীর্ঘদিন দোকানে কাজ করা হলেও মাসিক শ্রমের টাকা পায়নি বলে অভিযোগ করেন নীরব হোসেন। এত কষ্ট করেও পারিশ্রামিক না পাওয়ায় মালিকের অগোচরে নিজের পাওনা টাকাই নিয়ে নেন বলে দাবি করেন নীরব।
এঘটনায় তার মালিক ক্ষিপ্ত হয়ে চুরির অপবাদ দিয়ে এ ঘটনা ঘটায়। পরে নানা অপপ্রচার করে নির্যাতন করা হয় তাকে। তবে এ ঘটনায় শালিসদারের বিচার দাবি করে সে।
কিশোরের নানি আলেয়া বেগম জয়নিউজকে বলেন, এ ঘটনায় সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে তাদের। তার নাতি নীরবকে ছাড়িয়ে এনে দোকান (চামড়ার দোকান) মালিক শালিশী বৈঠকের আয়োজন করেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শিপন, শালিসদার ইসমাইলসহ মাতব্বররা তার নাতিকে দোষী সাব্যস্ত করে তার (কিশোরের) ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এতো টাকা কোথায় থেকে দেওয়া হবে এ জন্য কিশোরের দায়িত্ব নিতে রাজি হননি তিনি। এতেই হট্টগোল শুরু হয়ে আবারো মারধর করা হয় নীরবকে। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। নীরব এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ঘটনা সম্পর্কে অবহিত নন বলে দায় এড়িয়ে যান লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর শিপন ও শালিসদার ইসমাইল। বিষয়টি সম্পর্কে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে বলেও জানান তারা।
তবে দোকান মালিক রাশেদ জয়নিউজকে বলেন, নীরব হোসেন তার ক্যাশ থেকে কিছু টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। এতে নিজেও এলাকাবাসী তাকে শাস্তি হিসেবে ঝাড়ু ও জুতার মালা পড়িয়ে দেন। এসময় শালিস বৈঠকে স্থানীয় কাউন্সিলর ও মাতব্বররা তার ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে।
এদিকে সদর হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. আনোয়ার হোসেন জয়নিউজকে বলেন, তাকে অমানবিকভাবে নির্যাতন ও মারধর করা হয়েছে। যা একজন মানুষের পক্ষে কাম্য নয়। ওই কিশোরের চিকিৎসা চলছে। তার ভালো হতে সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম আজিজুর রহমান মিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, কিশোর নীরব হোসেনকে নির্যাতনের ঘটনায় চারজনকে আসামি করে থানায় মামলা করা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।