রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০০৯ সালে নগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আবদুচ ছালামকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। এ পদে ১০ বছর দায়িত্ব পালনের পর গত বছরের এপ্রিলে সংস্থাটির চেয়ারম্যান পদ থেকে বিদায় নেন তিনি।
ছালামের মেয়াদে চট্টগ্রামে শুরু হওয়া নানা প্রকল্প, বিশেষ করে ফ্লাইওভার প্রকল্প নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহল থেকে রাজনৈতিক মহল পর্যন্ত সবর্ত্রই প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি।
এবার তার কর্ণপাত না করার ফসল গুনল সিডিএ। এ সংস্থার বিরুদ্ধে আইন না মেনে পাহাড় কাটার অভিযোগে ১০ কোটি ৩৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
এতে সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। একজন ব্যক্তির খামখেয়ালিপনার কারণে একটি সংস্থা কেন ক্ষতিগ্রস্থ হবে, এমনটিই প্রশ্ন করেছেন অনেকে।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উত্তর পাহাড়তলী মৌজার ৭৭৩-৭৭৪, ৩০১, ২০০, ১৯৮, ১৩৯, ১৯৫, ১৮৭ জঙ্গল সলিমপুর মৌজার ৩৬১, ৩৫৯, ৩৫৭-৩৫৮ এবং জঙ্গল লতিফপুর মৌজার ৬২, ৬০-৬২ ও ৩৪নং দাগের পাহাড় কেটে সড়ক তৈরি করেছে সিডিএ। প্রকল্প চলাকালে পরিবেশ অধিদপ্তর এটি নিয়ে একটি সরেজমিন প্রতিবেদন তৈরি করে। এ প্রতিবেদনে তখন বিভিন্ন মৌজার ৩৫৭, ৩৫৮ ও ৩৫৯ দাগের পাহাড় কাটার প্রমাণ পায়। সে সময় অনুমতি ছাড়া পাহাড় কাটায় সিডিএকে নোটিশ দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। তাদের নোটিশের জবাবে শুনানিতে অংশ নিয়ে পাহাড় কাটার কথা স্বীকার করলেও পাহাড় কাটা অব্যাহত রাখে প্রতিষ্ঠানটি।
নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ৬ কিলোমিটারের এই সড়ক তৈরি করতে কাটা হয়েছে ১৫টি পাহাড়। ছোট্ট একটি সড়ক করতে এত বেশি পাহাড় কাটার ঘটনা অতীতে কখনই ঘটেনি। পরিবেশ অধিদপ্তর বারবার জরিমানা করার পরও ফৌজদারহাট-বায়েজিদের এই সংযোগ সড়ক তৈরি থেকে পিছু হটেনি সিডিএ। আইনের তোয়াক্কা না করেই সরকারি সংস্থাটি প্রকল্পটি প্রায় শেষ করে ফেলেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা অমান্য করে ‘ঢাকা ট্রাংক রোড থেকে বায়েজিদ বোস্তামী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক’ (ডিটি-বায়েজিদ সংযোগ সড়ক) বাস্তবায়নে অনুমোদনের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি পাহাড় কাটার অভিযোগ উঠেছে সিডিএ’র বিরুদ্ধে। এতে পুরো এলাকার জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে।
জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. একেএম রফিক আহমদ গত শনিবার সিডিএ’র নির্মাণাধীন ‘ফৌজদারহাট-বায়েজিদ সংযোগ সড়ক’ প্রকল্পের বায়েজিদ অংশে কর্তনকৃত পাহাড় পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অনুমোদনের বাইরে পাহাড় কাটা হয়েছে কি-না, তা দেখে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়কে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আজ বুধবার (২৯ জানুয়ারি) ঢাকায় পরিবেশ অধিপ্তরে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক সংযুক্তা দাশ গুপ্তা জয়নিউজকে বলেন, বায়েজিদ বোস্তামী থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত যে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে প্রায় ১৫টি পাহাড় নির্বিচারে কেটে ফেলা হয়েছে। আজ এ ঘটনায় ঢাকায় শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে সিডিএকে ১০ কোটি ৩৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সিডিএ সূত্রে জানা যায়, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের বহিঃসীমানা দিয়ে লুপরোড নির্মাণসহ ঢাকা ট্রাংক রোড থেকে বায়েজিদ বোস্তামী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর একনেকে পাস হয়। প্রশাসনিক অনুমোদন হয় ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। প্রকল্পটি প্রথম নেওয়া হয় ১৯৯৭ সালে। তখনকার ৩৩ কোটি টাকার প্রকল্পটি এখন ৩২০ কোটি তিন লাখ ৭৮ হাজার টাকায় বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রকল্পের ঠিকাদারি সংস্থা স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং। প্রকল্পটির বর্তমান মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত।