কক্সবাজারের পেকুয়ায় পরিত্যক্ত একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দরজা-জানালা খুলে বিক্রি করে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক!
অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম মো. শামশুল আলম। তিনি পেকুয়ার মগনামা ইউনিয়নের দক্ষিণ মগনামা শেখ আবদুল আজিজ চৌধুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাগরের জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ ভাঙনের কবলে পড়ে। ফলে নতুন করে ওই বিদ্যালয়ের পাশে পাউবো বেড়িবাঁধ নির্মাণ করায় কয়েক বছর পূর্বে বিদ্যালয়ের একতলা ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। পরিত্যক্ত ঘোষণার পর বিদ্যালয়ের শ্রেণী কার্যক্রম অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।
অভিযোগ উঠেছে, পরিত্যক্ত ভবনটি সরকারি বিধি-বিধান/পরিপত্র অনুসরণ না করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শামশুল আলম কয়েক দিন পূর্বে ১৪টি লোহার জানালা ও চারটি দরজা খুলে বিক্রি করে দেয়।
এ বিষয়ে স্থানীয়দের মাধ্যমে অভিযোগ পেয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে এ প্রতিবেদক দেখেন, একতলা ওই বিদ্যালয়ের ভবনের ১৪টি লোহার জানালা ও চারটি দরজাও খুলে নেওয়া হয়েছে।
এসময় বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাকিব, মনির (ছদ্মনাম) বলেন, প্রধান শিক্ষক শামশুল আলম স্যার তিন দিন আগে দরজা-জানালাগুলো শ্রমিক নিয়োগ করে ভেঙে ভ্যানগাড়িতে করে কোথাও নিয়ে গেছে। তারা শুনেছেন, প্রধান শিক্ষক এগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক মো. শামশুল আলম জয়নিউজকে বলেন, তিনি বিদ্যালয়ের দরজা-জানালা বিক্রি করে দেননি। দরজা-জানালাগুলো খুলে স্থানীয় বাদশা নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে রাখা হয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ভবনটি বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বানের পূর্বেই পরিত্যক্ত সরকারি বিদ্যালয় ভবনের দরজা-জানালা খুলে কেন নিলেন এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
অভিভাবক রেজাউল করিম অভিযোগ করে বলেন, সরকারি বিধি-বিধান পরিপত্র অনুসরণ করে নিলামে পরিত্যক্ত বিদ্যালয় ভবন বিক্রি করার কথা। সরকারি বিধি মোতাবেক বিক্রি করলে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হতো। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামশুল আলম অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে পরিত্যক্ত ভবন নিলামে বিক্রির পূর্বেই বিদ্যালয়ের দরজা-জানালা ভেঙে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক।
জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুটি পরিপত্রে উল্লেখ রয়েছে, সরকারি অব্যবহৃত/অকেজো/ভবন/মালামাল বিক্রি করতে হলে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কনডেমনেশন কমিটির মাধ্যমে বিক্রি/নিলামের কথা উল্লেখ রয়েছে। পরিপত্র অনুযায়ী এ কনডেমনেশন কমিটির সভাপতি হবেন সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক। অথচ ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শামশুল আলম সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে বিদালয় ভবনের দরজা-জানালা বিক্রি করে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে পেকুয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ছালামত উল্লাহ খান বলেন, ‘ওই বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত একতলা ভবনটি নিলামে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য তার কার্যালয় প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। তার পূর্বেই কেউ বিদ্যালয়ের মালামাল বিক্রি করতে পারবেনা। এটা অন্যায়। তিনি বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।