বিশ্বকর্মার ঘুড়ির ‘ভোঁ কাট্টা’ শব্দে
একটা কিছু ভুলে গেছো তুমি।
-‘কী?’
-‘আমায় বলছো?’
হ্যাঁ, তুমি বাঙালী জাতি।
তুমি পদাবলী কে আস্বাদন করে,
বর্জন করো ‘শ্রী কৃষ্ণ কীর্তনের’ ‘দান খন্ড’,
সেই তোমাকেই বলছি।
আজ কেউ জন্মেছিল জানো?
সেই যার যৌবনের লীলা নিয়ে
আজও বিবৃত হয় কাহিনী।
যার কলঙ্কের গান
আমার-তোমার মুখে মুখে ফেরে,
যার শৈশবের ধার ধারিনি কখনও,
যাকে স্বীকৃতি দেননি মৎস্যগন্ধ্যা-পুত্র,
মহাকাব্যের ‘সুচাগ্র মেদিনীও’ জোটেনি ভালে।
তবে , মিথিলার কোন এক কবির কলম
জানিয়েছিল সে মেয়ের প্রেমের গাথা-
তবে ওই ‘বাংলা অনার্স’ ক্লাসেই!
তার চার দেয়ালের বেড়া টপকাতে অপারগ
পরকীয়া প্রেমিকার আর্তি।
গোপালের অষ্টমীর দিন জন্ম হ’ল,
মা দুগ্গাও ওই অষ্টমীতেই পুষ্পপুটে
আপামর বঙ্গবাসীর ‘দেহি দেহি’ ডাকে ব্যাকুল!
আজও একটা অষ্টমী জানো?
আজ একটা নপুংসকের স্ত্রীর জন্মদিন।
শব্দচয়ন খানা বড্ড বিঁধল, তাই না বাঙালী?
স্বাভাবিক,
উলু বন আর মুক্তের সম্পর্ক তো সেই কবে কার বলো. . .
নিজের হৃদ স্পন্দন শুনতে পেয়েছো কখনো?
বুকের ভেতর এই অবাধ্য যন্ত্রটা-
বড্ড বেশি স্বাধীন।
ওই মেয়েটারও মরণ দশার কাল এসেছিল এভাবেই,
ভালোবেসে এক বাঁকা হাসির মানুষকে,
বাঁশি বাজিয়ে মন চুরি করত যে জন।
প্রেমে মাতাল হয়ে বিকিয়েছে
রাত-দিন-মাস-বছরের হিসেব,
বিকিয়েছে নিজেকে ঘাট পারাবার বিনিময়ে,
কুল-মান-লাজ বিকিয়েছে ‘কালো’র প্রেমের আলোয়।
আজ ওই মেয়েটার জন্মদিন,
বুড়ি সে বড়াই, মন্ত্রণা দিয়ে যাকে
মাঝ রাতে বের হয় কলসী কাঁকে যমুনার পথে-
জটিলা-কুটিলা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত
থাকে নিত্যদিন।
যন্ত্রনায় দিন কাটে – বুক ফাটে
কৃষ্ণ নামের মালা জপে ।
অত্যাচার কী কম স’য়েছে সে?
তবু তুমি ধারণ করনা সেই নাম আজও
বত্রিশ অক্ষর ষোল নামের মাঝে একবারও!
স্মরণ করে বৃন্দাবনের ভূমি,
যার পবিত্র মাটি ভালোবেসে আগলেছিল
ও মেয়ের যুগান্তরের প্রেম কাহিনীকে।
মথুরার নিষ্ঠুর রাজার মৃত্যুর
আকাশবাণী মনে পড়ে?
যাকে রূপ দিতে চলে যায় রাখাল রাজা,
আর বিরহ আগুনে ঝলসাতে থাকে সে মেয়ে,
যেন আমৃত্যু কারাদণ্ডের জীবন।
যোগিনী বেশেই অতিবাহিত
শ্রেষ্ঠা সুন্দরীর অবশিষ্টাংশ!
সেই অভাগিনীর আজ জন্মদিন,
যার অনুমতি ছাড়া নাকি দুয়ার খোলে না
শ্রী বিষ্ণুর পূর্ণাবতার –
কুরুক্ষেত্রের নিয়ন্তা, বাসুদেব-মাধব।
তবু দেখ, এই এত ঘুড়ি, এত যন্ত্র পুজোর মাঝে
তুমি কেমন ভুলে গেলে !
হ্যাঁ। পত্নী নয় সে – প্রেমিকা পরকীয়া ,
জানি।
তবুও, মনে কী পরে না সন্ধিনীর সার,
সম্বিৎ এর আদি – হ্লাদিনীর আধারকে?
দেবী নামের আড়ে আজও উপেক্ষিতা সে!
আজ একবারও আসেনি কানে-
‘জয় বৃষভানু-কীর্তিদা নন্দিনী’
“সর্বকান্তা শিরোমণি শ্রী রাধা ঠাকুরানী”।
অরিত্রা মুখোপাধ্যায়: কলকাতার কবি, নৃত্যশিল্পী ও সাহিত্যকর্মী।