১৪ ফেব্রুয়ারি অনলাইন পোর্টালে একটি সংবাদ প্রচার হয়। সংবাদটি ছিল- ‘বঙ্গবন্ধুর খুনীর পরিবারের সাথে ঘনিষ্টতা কাল হলো নাছিরের’। সংবাদটি পরিবেশন করে দেশরিভিউডটকম নামে একটি অনলাইন গণমাধ্যম। যার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক অমিত কুমার বসু। যিনি শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের এপিএস এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি।
সংবাদটির ছবিতে দুইজন ব্যক্তিকে গোল চিহ্নিত করা হয়। একজনকে বঙ্গবন্ধুর খুনি রশিদের ভাই বললেও তার কোনো পরিচয় বা নাম দেওয়া হয়নি। অপরদিকে আরো একজন ব্যক্তিকে গোল চিহ্ন দেওয়া হয়। তাকে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর খুনির আত্মীয়। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ছবিতে থাকা মো. আকরাম খান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি এবং আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কর্মী।
সংবাদটি প্রচারিত হওয়ার পরদিন (১৫ ফেব্রুয়ারি) ছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা। ওইদিন মেয়র নাছিরকে পুনরায় মেয়র পদে মনোনয়ন না দেওয়ার পর সংবাদটি দেশরিভিউডটকম থেকে মুছে দেওয়া হয়।
আরো পড়ুন: কারও মেয়র পদ লাগলে সরাসরি বলতে পারতো: মেয়র নাছির
আর মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সেই পোর্টালে প্রচারিত ছবির বিষয়ে মুখ খুলেন মেয়র নাছির। এদিন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে মেয়র নাছির বলেন, আমার মনোনয়ন ঠেকাতে অপপ্রচারকারীরা আমার সঙ্গে যে বঙ্গবন্ধুর খুনির ভাইয়ের ছবি দাবি করছে- তাকে আমি চিনিও না, কোনোদিন দেখিওনি। মেয়র পদের মনোনয়ন আটকে দেওয়ার জন্য এ ধরনের ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেওয়া খুবই দুঃখজনক। এরকম অপপ্রচার কিছুতেই কাম্য নয়। যার সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।
মেয়র আরো বলেন, যে ছবিটি দেখানো হয়েছে, সেখানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আমার দুঃসময়ে পাশে থাকা আকরাম খানের আহ্বানে অক্সিজেন এলাকায় একটি দোকান উদ্বোধনে গিয়েছিলাম।
আরো পড়ুন: রেজাউলকে বিজয়ী করতে সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করবেন মেয়র নাছির
চসিক মেয়র বলেন, মনের কষ্টের কথা যদি বলেন, একটা বিষয়ে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। যেখানে আমি বঙ্গবন্ধু হত্যার পর চট্টগ্রাম কলেজে প্রতিবাদ মিছিল করেছি, বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল ফারুকের সভা পণ্ড করেছি এবং এ শহরে তাদের কোথাও কোনো সভা-সমাবেশ করতে দিইনি, সেই জায়গায় খুনির কোনো এক ভাইয়ের ছবি ফেসবুকে দিয়ে চরম অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করা হয়েছে।
নাছির উদ্দীন বলেন, চরম দুঃসময়ে আমি রাজনীতি শুরু করেছিলাম। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড আমাকে নাড়া দিয়েছিল। ৭৫’ এরপর সর্বপ্রথম জানুয়ারি মাসে আমরা চার-পাঁচজন ছেলে একত্রিত হয়ে মিছিল করেছি। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে চন্দনপুরা দিয়ে চলে গিয়েছিলাম। ওইসময় সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনী এসে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলেছিল।
আরো পড়ুন: যেখানেই থাকি নগরবাসীকে বুকে ধারণ করব: মেয়র নাছির
‘আমার কোনো অভিমান, ক্ষোভ ও রাগ নেই। আমি রাজনৈতিক কর্মী, মাঠের কর্মী। মাঠ থেকে আজ এ পর্যায়ে এসেছি। অনেকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলাম। চট্টগ্রাম কলেজকে শিবিরমুক্ত করতে গিয়ে নির্মমভাবে আক্রান্ত হয়েছিলাম। নির্যাতন ছিল আমার নিত্যদিনের সঙ্গী। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী আমাকে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন। এরপর মেয়র পদে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একটি চক্র যারা মেয়র নাছিরের সময় কোনো অবৈধ সুযোগ নিতে পারেনি তারাই মূলত এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। অনেকেই বলছেন, যদি সংবাদটি সত্য হতো তবে সেটি মুছে দেওয়া হতো না। তবে এমন মিথ্যা সংবাদ কেন করা হয়েছে- তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অনেকে।
আরো পড়ুন: চসিক নির্বাচন ২৯ মার্চ, ভোটগ্রহণ ইভিএমে
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন কুতুবী জয়নিউজকে বলেন, আ জ ম নাছির উদ্দীন তৃণমূল থেকে উঠে এসেছেন। চট্টগ্রামে সকল জামায়াত-শিবির ও বিএনপিবিরোধী সংগ্রামে অগ্রগামী ছিলেন তিনি। কিন্তু ভুয়া ছবি ব্যবহার করে এ ধরণের সংবাদ তৈরি বোধগম্য নয়। এর পেছনে কি ষড়যন্ত্র রয়েছে তা খুঁজে বের করা দরকার।
কুতুবী আরো বলেন, নগর ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি সংবাদটি বিভিন্নভাবে ছড়িয়েছেন। তার সমর্থক গোষ্ঠী থেকে সংবাদটি শেয়ারও করা হয়। এ থেকে বুঝা যায় ষড়যন্ত্রটি কোন জায়গা থেকে করা হয়েছে এবং কেনো করা হয়েছে।
এদিকে প্রচারিত সংবাদটি মুছে দেওয়ার ব্যাপারে জানতে দেশরিভিউডটকম পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক অমিত কুমার বসুকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।