জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু ছন্দ ধরে রাখতে পারেননি তিনি। ৭১ রানে শান্ত ফেরার পর দায়িত্ব নেন মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম। তৃতীয় উইকেটে এই জুটিতে ভর করে ২৪০ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
টাইগারদের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২৬৫ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে। আর তাদের করা ইনিংস থেকে দিন শেষে ২৫ রানে পিছিয়ে রয়েছে টাইগাররা। তবে পিছিয়ে থাকলেও টাইগাররা স্বপ্ন দেখাচ্ছে বড় লিডের।
আট উইকেট হাতে নিয়ে আগামীকাল সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) তৃতীয় দিন শুরু করবেন মুমিনুল হক। ৭৯ রান করে উইকেটে আছেন মুমিনুল হক। তাঁর সঙ্গে ৩২ রানে অপরাজিত আছেন মুশফিক।
আজ প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে হারায় ওপেনার সাইফ হাসানের উইকেট। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে সাইফের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল চলে যায় চাকাভার গ্লাভসে। সাইফ ফেরেন আট রানে।
সাইফকে হারানোর ধাক্কা কাটিয়ে প্রতিরোধ গড়েন তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত। এই জুটিতে দ্বিতীয় সেশনের অনেকটা সময় পার করে স্বাগতিকরা। কিন্তু আশা দেখিয়েও দলকে বেশি দূর নিতে পারলেন না তামিম ইকবাল। ফিরে যান ৪১ রানে। এর মধ্যে ব্যক্তিগত ২৭ রানের মাথায় অনন্য রেকর্ড গড়েন তামিম। প্রথম বাংলাদেশি হিসেব প্রবেশ করেন ১৩ হাজার রানের ঘরে। তবে ইতিহাস গড়ার দিন বেশিদূর যেতে পারলেন না বাঁহাতি ওপেনার।
তামিম ফিরলেও উইকেটে থিতু হয়ে ছিলেন শান্ত। ১০৮ বলে তুলে নেন নিজে ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি। আস্থার সঙ্গে খেলতে থাকা শান্তর প্রতিরোধ ভাঙেন চার্লটন। ৪৯.৪তম ওভারে উইকেটকিপার চাকাভার হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে যান শান্ত। ফেরার আগে ১৩৯ বলে সাত বাউন্ডারিতে ৭১ রান করেন তিনি।
শান্ত-তামিমকে হারানোর পর জুটি বাঁধেন মুমিনুল হক ও মুশফিক। এই জুটিতে দিনের শেষ সেশন পার করে দেয় বাংলাদেশ। এরমধ্যে ৭৮ বলে চার বাউন্ডারিতে ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। টেস্ট ক্রিকেট সাত ইনিংস পর হাফসেঞ্চুরির দেখান পান তিনি। মুমিনুল-মুশফিকে ভর করে শেষ পর্যন্ত তিন উইকেটে ২৪০ রানে দিন শেষ করে স্বাগতিকরা।
বাংলাদেশের ১ম ইনিংস: ২৪০/৩ (তামিম ৪১, শান্ত ৭১, মুমিনুল ৭৯*, মুশফিক ৩২* ; ট্রিপিয়ানো ১৫-৩-৪০-১, নাইছু ১৩-২-৪১-১, তসুমা ১২-০-৪৬-১)।
এর আগে আজ সকালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় দিন দারুণ শুরু করে বাংলাদেশ। দিনের প্রথম ঘণ্টাতেই চমক দেখান পেসার আবু জায়েদ রাহি। দ্রুত তুলে নেন দুই উইকেট। তাঁর সঙ্গে দুটি উইকেট পান তাইজুল ইসলামও। ফলে দ্বিতীয় দিনের প্রথম দেড় ঘণ্টাতেই ২৬৫ রানেই অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে।
গতকাল শনিবার প্রথম দিন দারুণ করেছে জিম্বাবুয়ে। খারাপ কাটেনি বাংলাদেশেরও। স্পোর্টিং উইকেটে বড় সংগ্রহ গড়তে যাওয়া জিম্বাবুয়ের ছন্দ ভাঙেন অফস্পিনার নাঈম হাসান। লম্বা স্পেলে বোলিংয়ে শেষ বিকেলে চমক দেখান নাঈম, ফেরান সেঞ্চুরিয়ান ক্রেইগ আরভিনকে। ফলে স্বস্তি নিয়ে মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন শেষ করে বাংলাদেশ।
প্রথম দিন শেষে ছয় উইকেটে ২২৮ রান সংগ্রহ করে জিম্বাবুয়ে। দিন শেষে শূন্য রানে উইকেটে ছিলেন ট্রিপিয়ানো ও ৯ রানে অপরাজিত ছিলেন চাকাভা। পাঁচ উইকেট হাতে নিয়ে আজ রোববার দ্বিতীয় দিন শুরু করে জিম্বাবুয়ে। তবে দিনের শুরুতেই ট্রিপিয়ানোকে হারায় সফরকারীরা। তাঁকে ফেরান আবু জায়েদ রাহি। উইকেট হারালেও অতিথিদের লক্ষ্য ছিল ইনিংসটাকে লম্বা করার।
অন্যদিকে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল জিম্বাবুয়েকে দ্রুত অলআউট করার। কিন্তু সেই দিক দিয়ে সফল বাংলাদেশ। দিনের শুরুতেই অতিথিদের ২৬৫ রানে অলআউট করে স্বাগতিকরা।
এর আগে গতকাল টস জিতে আগে ব্যাট করার সুবিধা বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগায় সফরকারীরা। উইকেটে কিছুটা ঘাস থাকায় প্রথম দিকে বেশ সুবিধা ছিল বাংলাদেশি পেসারদের জন্য। কিন্তু সেই সুবিধা নিতে পারেননি স্বাগতিকরা।
ইনিংসের শুরুটা বেশ সাবধানে করে জিম্বাবুয়ে। রানের দিকে না তাকিয়ে উইকেটে থিতু হতে চেয়েছেন দুই ওপেনার কেভিন কাসুজা ও প্রিন্স মাসভরে। প্রথম ছয় ওভারে তাঁরা নিয়েছেন কেবল এক রান। সেই রানটিও এসেছে ওয়াইড থেকে। অষ্টম ওভারে এসে প্রথম উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন আবু জায়েদ রাহি। অষ্টম ওভারে রাহির বলে নাঈম হাসানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান কেভিন কাসুজা। ফেরার আগে ২৪ বলে দুই রান করেন তিনি।
অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন ও মাসভরের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দারুণভাবে এগিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় জুটি ভাঙতে বেশ ধুঁকতে হয়েছে বাংলাদেশের বোলারদের। দুজন মিলে এ জুটিতে তোলেন ১১১ রান। শেষ পর্যন্ত অফস্পিনার নাঈম ভাঙেন শতরানের এই জুটি।
এরপর ব্যাটিং করতে নামা ব্রেন্ডন টেইলরকেও টিকতে দেননি নাঈম। ১০ রান করা টেইলরকে সরাসরি বোল্ড করেন তিনি। প্রথম সেশনে দাপট দেখানো জিম্বাবুয়ে শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন তরুণ এই অফস্পিনার। টিকতে দেননি সিকান্দার রাজাকেও। নাঈমের বল কাট করতে গিয়ে উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন সিকান্দার।
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ২৬৫/১০ (মাসাভরে ৬৪, আরভিন ১০৭, চাকাভা ৩০; রাহি ২৪-৬-৭১-৪, নাঈম ৩৮-৯-৭০-৪, তাইজুল ২৭.৩-১-৯০-২)।