করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে কক্সবাজারসহ সারাদেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। আতঙ্কে গণপরিবহণ ও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। সড়কে নেই জনসমাগম। এ পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের জনগণকে সচেতন রাখার সার্বিক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে সেনাবাহিনীর রামু সেনানিবাসের ১০ পদাতিক ডিভিশন।
সামাজিক দূরত্ব ও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে সড়কে ও বিভিন্ন জনপদে মাইকিং করে, পথচারীদের ফুল দিয়ে ঘরে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন সেনাসদস্যরা।
এ দিকে পথচারীদের ঘরে ফেরাতে সেনা সদস্যদের এ প্রশংসনীয় উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে স্থানীয় জনতা।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রচারণায় সেনাবাহিনী কোনোধরনের গুজবে কান না দিয়ে স্থানীয় জনসাধারণকে ঘরে থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন সেনা সদস্যরা।
সোমবার (৩০ মার্চ) হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম মেনে চলতে অনুরোধ জানিয়ে কক্সবাজার ও রামু উপজেলার বিভিন্ন সড়কে সেনাবাহিনীর সদস্যরা পথচারীদের হাতে ফুল দিয়ে অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা না করে বাড়ি ফিরে যেতে অনুরোধ করছেন। সেনাবাহিনীর এমন উদ্যোগকে সম্মান জানিয়ে ঘরে ফিরে যাচ্ছেন পথচারীরাও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেনা কর্মকর্তা জানান, করোনাসচেতনতায় ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে সেনাবাহিনী। অযথা বাইরে ঘোরা ফেরা করতে দেখা মানুষদের বুঝিয়ে ঘরে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এছাড়াও হোম কোয়ারেন্টাইনের নিয়ম মানাতে কাজ করছে সেনাবাহিনী।
এছাড়া প্রচারণার পাশাপাশি সেনাসদস্যরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জীবাণুনাশক পানি ছিটাচ্ছে। পরিস্থিতি অনুকূলে না আসা পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানান ওই সেনাকর্মকর্তা।
ঈদগাঁও বাস স্টেশনের রিকশাচালক মনিরুজ্জামান জয়নিউজকে বলেন, পেটের দায়ে রিকশা নিয়ে বাস স্টেশনে এসেছি। এমন সময় সেনাবাহিনীর এক সদস্য আমার দিকে এগিয়ে আসে, সেনাসদস্যকে দেখে ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছিল। কিন্তু সেনাসদস্য আমার হাতে ফুল দিয়ে সাহস দিয়ে বলেন চাচা ভয় নেই। যদি সম্ভব হয় বাড়ি থেকে একটু কম বের হবেন।
রিকশাচালক মনিরুজ্জামান বলেন, গরিবের প্রতি সেনাবাহিনীর এমন ভালোবাসা দেখে আমার চোখে পানি চলে আসে। আমি সেনা সদস্যদের সম্মান জানাতে সঙ্গে সঙ্গে রিকশা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। অনেকেই তার মত বাড়ি ফিরে গেছে বলে জানান তিনি।
আলাউদ্দীন নামে আরেক পথচারী বলেন, বাস স্টেশনে সেনাবাহিনীর গাড়ি দেখে আমি দৌড়ে পালাচ্ছিলাম। এমন সময় এহসান নামের এক সেনাসদস্য গাড়ি থেকে নেমে, পথচারীদের ফুল দিতে দেখে আমিও এগিয়ে যাই। আমার হাতেও ফুল ধরিয়ে দেন ওই সেনাসদস্য।
আলাউদ্দিন আরো বলেন, পথচারীদের সবার হাতে ফুল দিয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা করোনাভাইরাস সম্পর্কে অবগত করছেন।
রামু সেনানিবাস সূত্রে জানা যায়, সেনা সদস্যরা ক্যাম্প পর্যায়ে রোহিঙ্গা মাঝি ও স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। সহযোগী সংস্থাসমূহের মাধ্যমে বার্মিজ ও ইংরেজি ভাষায় লিফলেট বিতরণ করেন।