কৃষির নানাবিধ উন্নয়নের সঙ্গে দেশের স্বার্থরক্ষায় কাজ করার কথা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের। অথচ করোনার এ ক্রান্তিকালে ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর’ পাশে নেই সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। দেশের কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্নভাবে কৃষকের পাশে দাঁড়ালেও সমন্বিত উদ্যোগ বা উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান নেই সংগঠনটির।
এ অবস্থায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, কৃষকের প্রয়োজনে মাঠে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ’ই যদি ধান কাটে তাহলে কৃষক লীগের মূলত কাজ কী? কেন তারা করোনার এ সময়ে কৃষকের পাশে নেই?
বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধুমাত্র দেশের দুই-এক অঞ্চলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্রভাগে বিভক্ত হয়ে কৃষক লীগের নেতাকর্মীরা বোরোর এ মৌসুমে কৃষকের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, ধানও কেটে দিচ্ছেন। তবে তা এতো বড় সংগঠনের জন্য বেশ বেমানান। কৃষক লীগের প্রতি কৃষকের যে প্রত্যাশা তা পূরণে সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্ব কতটুকু সফল তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
করোনা পরিস্থিতিতে কৃষকসমাজ এমনিতেই সংকটে। আওয়ামী লীগের অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলো যেখানে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ত্রাণ তৎপরতায় ঝাপিয়ে পড়ছে, সেখানে একপ্রকার নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে কৃষক লীগ!
করোনা ক্রান্তিকালে কৃষকদের পাশে না দাঁড়াতে পারার কথা স্বীকার করেছে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম। তিনি বলেন, আমরা নির্দেশনা দিয়েছি, কোনো কৃষক শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে না পারলে, তার পাশে যেন আমাদের নেতাকর্মীরা থাকে। বড় সংগঠন হিসেবে কৃষক লীগের কাছে মানুষের প্রত্যাশা বেশি। হয়তো আমরা তাদের প্রত্যাশা মতো কাজ করতে পারছি না। তবে নেতাকর্মীরা কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাজ করছে।
সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৬ নভেম্বর কৃষক লীগের নতুন কমিটি হলেও এখনো কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি বর্তমান নেতৃত্ব। আবার জেলা কমিটি থেকে শুরু করে তৃণমুল পর্যায়ের কমিটিগুলো দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ।
এছাড়া প্রশ্ন আছে, বর্তমানে কৃষক লীগে অনেক নেতা আছেন যারা কৃষির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্তই নয়। গত কমিটিতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ছিলেন এমন ১১১ সদস্যের কমিটিতে সিংহভাগ নেতার কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল না। কেউ আইনজীবী, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ ঠিকাদারি, কেউ সাংবাদিক, কেউ শিক্ষকতায় জড়িত।
এ ব্যাপারে সংগঠনটির সভাপতি সমীর চন্দ্র বলেন, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ বা যুবলীগ ধান কাটলে সেটি খবর হয়, কিন্তু কৃষক লীগ ধান কাটলে সেটি খবর হয় না। কারণ এটি কৃষক লীগেরই কাজ। সুতরাং কৃষক লীগ কাজ করছে না সেটি সঠিক নয়।
গত ১৫ দিন ধরে বিশেষ করে ইউনিয়ন, থানা এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে বোরো ধান কাটতে সহযোগিতা করার জন্য নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে। এজন্য পুরো দেশকে ১০ অঞ্চলে ভাগ করে ১০টি মনিটরিং টিম করে কাজ করছে।- যোগ করেন তিনি।