প্রাষঘাতি করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে অসংখ্য দিনমজুর, শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের মানুষ। জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, পুলিশ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের উদ্যোগে এসব অসহায় মানুষের মাঝে নিয়মিত ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।
এরপরও চট্টগ্রাম নগর ও জেলার কয়েকটি জায়গায় ত্রাণের জন্য বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে মানুষ। আর এসব মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায় কিছু ব্যক্তি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন কয়েক জনের নাম। যারা এসব মানুষকে ইন্ধন দিয়ে রাস্তায় নামিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজরদারিতে রেখেছে এসব ব্যক্তিকে।
অনুসন্ধানে উঠে আসা কয়েকজনের মধ্যে রয়েছে, বাকলিয়া এলাকায় শ্রমিকদল নেতা মো. মহিউদ্দীন রণি, সীতাকুণ্ডে শিবির ক্যাডার আজাদ, কর্নেলহাট এলাকায় যুবলীগ নেতা মনোয়ার উল আলম নোবেল।
গত ১৭ এপ্রিল ত্রাণের দাবিতে বাকলিয়া তুলাতলী এলাকায় মদিনা ক্লাবের সামনে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করে কিছু লোক। এতে ইন্ধন দেন বলে অভিযোগ রয়েছে ১৮ নম্বর বাকলিয়া ওয়ার্ড শ্রমিকদলের সভাপতি মো. মহিউদ্দীন রণির বিরুদ্ধে।
একইদিন বিকেলে সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারি ইউনিয়নের হাসনাবাদ এলাকায় ত্রাণের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে অর্ধশতাধিক লোক। এতে ইন্ধন দেন বলে অভিযোগ রয়েছে শিবির ক্যাডার আজাদের বিরুদ্ধে। তার ভাড়াটিয়াদের দিয়ে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করা হয় বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা।
১৬ এপ্রিল কর্নেলহাট এলাকায় ত্রাণের জন্য বিক্ষোভ করেন শ’খানেক মানুষ। এতে ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে যুবলীগ নেতা নামধারী মনোয়ার উল আলম নোবেলের বিরুদ্ধে। মনোয়ার উল আলম নোবেল ওই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে চসিক নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তিনি পলাতক যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অনুসারী ও সিআরবি জোড়া খুন মামলার অন্যতম আসামি। নোবেলের পরিবারের অন্য সদস্যরা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।
১৮ এপ্রিল নগরের হালিশহর বড়পোল এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ব তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েলের জন্য গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার সময় গাড়িতে থাকা খাদ্য সামগ্রী ও ফল ছিনিয়ে নেয় কিছু লোক। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে কিছু মালামাল ফেরত পাওয়া যায়।
হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, কিছু লোক সড়কে অবস্থান নিয়েছিল। তারা একটি গাড়ি থেকে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে ফেলেছিল। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে কিছু ফেরত পাওয়া যায়। যারা এসব কাজে ইন্ধন দিচ্ছে তাদের বের করতে কাজ করছি আমরা।
বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেজাম উদ্দীন বলেন, বাড়ির মালিক ভাড়া চাওয়ায় কিছু লোক সড়কে নেমে এসেছিল। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিয়েছে।
তিনি বলেন, বাকলিয়া এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। ত্রাণের জন্য মানুষের বিক্ষোভ করার প্রশ্নই আসে না।
আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ত্রাণের দাবিতে কিছু লোক বিক্ষোভ করেছে। আমরা তাদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা প্রতিদিন ত্রাণ দিচ্ছি। বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগেও ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারপরও বিক্ষোভ করেছে কিছু লোক। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে কয়েকজন ব্যক্তি এসব ঘটনায় ইন্ধন দিচ্ছে। আমরা তাদের নজরদারি করছি।