চট্টগ্রাম বিভাগের ৬ জেলায় দুই কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস। অথচ এখানে করোনা শনাক্তের ল্যাব রয়েছে মাত্র ২টি। ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি ও ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে প্রতিদিন নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০টি।
জানা গেছে, বিআইটিআইডিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ১শ’ নমুনা জমা আছে। এসব নমুনার বেশিরভাগই ৫-৬ দিন আগে সংগ্রহ করা। সাতদিন পর নমুনা তার গুণাগুন হারায়। এ অবস্থায় শঙ্কা, জটবাঁধা নমুনার পরীক্ষায় সঠিক ফলাফল আসবে তো?
তবে ল্যাব সংশ্লিষ্টরা জানান, তারা নমুনাগুলো সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ করছেন। ফলে পরীক্ষায় সঠিক ফলাফলে কোনো বাঁধা হবে না। তবে তাদের নিজস্ব জনবল সংকট এবং রমজান মাসে স্বেচ্ছাসেবকরা কাজে আসতে না পারায় এই সংকট কাটাতে তাদের বেগ পেতে হচ্ছে।
এদিকে চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিদিন বেশি বেশি নমুনা পরীক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তবে চট্টগ্রামে নমুনা পরীক্ষায় ল্যাব ও জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে সক্ষমতা বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন বিভাগীর স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ল্যাব চালু হচ্ছে আগামী মাসের ৮-১০ তারিখের মধ্যে। সেখানে আমরা আরো নমুনা সংগ্রহ করতে পারবো।
এদিকে সরকারি প্রণোদনায় সিভাসু পরিপূর্ণভাবে সচল করা হচ্ছে না কেন, প্রশ্ন করলেন চট্টগ্রাম জনস্বাস্থ্য রক্ষা অধিকার কমিটির সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখনো কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। তারা শুধু নির্দেশ দিলে হবে না। সিভাসুকে বলতে হবে, সমস্ত লজিস্টিক সাপোর্টসহ আপনাদের ৬টা পিসিআর মেশিন চালু করুন। এর সঙ্গে জড়িত সবার আর্থিক ব্যয়ভারসহ সমস্ত দায়দায়িত্ব আমরা (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়) বহন করছি এবং তা আইইডিসিআরের নিয়মিত বুলেটিন থেকেই স্পষ্ট করে বলতে হবে। তাতে চট্টগ্রামের ল্যাব সংকট কমবে বলে মনে করেন তিনি।
বিএমএ সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মুইজ্জুল আকবর চৌধুরী বলেন, দ্রুত যদি রিপোর্ট না পাই, তবে স্বাস্থ্যকর্মীরা সবাই ঝুঁকির মুখে থাকছি।
এদিকে শুধু পরীক্ষা কম নয়, জমে যাচ্ছে সংগ্রহ করা নমুনার স্তূপও। গত ১৪ এপ্রিল সাতকানিয়ায় একই পরিবারের ৫ জন করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর ওই এলাকা করোনার ‘হটস্পট’ ঘোষণা করা হয়। এরপর ওই এলাকা থেকে ২০ এপ্রিল আরও ৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। দীর্ঘ ছয়দিন অপেক্ষার পরে তাদের রিপোর্টে পজিটিভ আসে। এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসকের ফলাফলও আসে ছয়দিন পর। তিনিও করোনা শনাক্ত হয়েছেন।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, প্রতিটি ল্যাবের একটি সক্ষমতা আছে। এর বাইরে নমুনা আসলে পরীক্ষা করা যায় না। আমাদের সক্ষমতার বেশি বেশি নমুনা আসছে। এই কারণে কিছুটা ধীরগতি দেখা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম ছাড়া ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও দুই পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটির রোগীদের একমাত্র ভরসা এই দুটি ল্যাব।