সম্প্রতি চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এই অবস্থায় করোনা টেস্ট ও চিকিৎসাসেবার পরিধি বাড়াতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
মঙ্গলবার (১২ মে) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সচিব মো. আসাদুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসকে এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন মেয়র নাছির। মেয়রের একান্ত সচিব মো. আবুল হাশেম চিঠিগুলো পাঠানোর বিষয়টি জয়নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
চিঠিতে বলা হয়, বিগত ৩-৪ দিন ধরে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত ০৪ দিনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলায় মোট ১৭৪ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছেন যার মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীর ৯৭ জন। এ চার দিনে ৮ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এটি অত্যন্ত ভয়াবহ চিত্র।
এ আশঙ্কাজনক সংক্রমণ ব্যবস্থাপনার জন্য যে পরিমাণ চিকিৎসাসেবার সুযোগ প্রয়োজন বর্তমানে চট্টগ্রামে তা হতাশাজনকভাবে অপ্রতুল বলা যায়। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউসহ মোট ১০০ শয্যা, বিআইটিআইডিতে ৫০ শয্যার আইসোলেশন ছাড়া আজ পর্যন্ত কোভিড চিকিৎসার জন্য অন্য কোনো সুবিধা নেই।
আমার (মেয়র) উদ্যোগে বেসরকারি ক্লিনিক মালিকদের উদ্বুদ্ধ করে পরিত্যক্ত হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন সম্বলিত ১১ শয্যা আইসিইউ, ৯ শয্যা এইচডিইউ ও ৪০টি সাধারণ শয্যাসহ মোট ৬০ শয্যার কোভিড হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে যা ১০০ শয্যায় উন্নীত করা যাবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক চট্টগ্রাম মহানগরীতে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে উক্ত কমিটির কয়েকটি সভায় হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে পরিচালনার জন্য সরকারি কোনো হাসপাতালকে এর দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরবর্তীতে গত ০৭ মে চট্টগ্রাম জেলায় করোনাভাইরাস জনিত উদ্ভূত পরিস্থিতি সমন্বয়ের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব মোস্তফা কামাল উদ্দিনের সমন্বয় ও সঞ্চালনায় এবং মাননীয় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিট হিসেবে পরিচালনার জন্য সিদ্ধান্ত হয় এবং প্রয়োজনীয় জনবল ও আর্থিক বরাদ্দের জন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কর্তৃক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়।
উক্ত চাহিদাপত্রের আলোকে জরুরি ভিত্তিতে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে পূর্ণরূপে ফাংশনাল করার লক্ষ্যে জনবল ও আর্থিক বরাদ্দ অনুমোদনের জন্য আপনার ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ ও সুদৃষ্টি কামনা করছি। এর বাইরেও অন্যান্য হাসপাতালে যেমন রেলওয়ে হাসপাতাল, বন্দর হাসপাতাল ও শিপ ব্রেকার্স হাসপাতালকে কোভিড আইসোলেশন হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রয়োজন।
মেয়র বলেন, ঢাকার পরে সবচেয়ে বেশি কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। বর্তমানে কোভিড টেস্টের জন্য প্রার্থিত গড়ে ১ হাজার রোগীর বিপরীতে মাত্র ৩০০-৪০০ জন রোগীর কোভিড টেস্ট করা সম্ভব হচ্ছে। রোগীর নমুনা কালেকশনের ৩-৩ দিন পর ফলাফল জানানো হচ্ছে।
এতে করে স্যাম্পলের গুণাগুণ বজায় থাকা নিয়েও সন্দেহের অবকাশ রয়ে যাচ্ছে এবং স্যাম্পল কালেকশন ও ফলাফল প্রকাশের মধ্যবর্তী সময়ে অনেক রোগী মারাও যাচ্ছেন। এতে জনমনে হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। এমতাবস্থায়, টেস্ট বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টির জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে।
সাধারণ সর্দি, জ্বর ও কাশির রোগীরা বর্তমানে কোনো বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। ক্ষেত্রবিশেষে অন্য রোগীদেরও বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে গিয়ে চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। প্রাইভেট প্র্যাকটিশনারগণ প্রায় ৯০ ভাগ চেম্বারে রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছেন।
এতে নন-কোভিড রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জরুরি নির্দেশনা জারি হলেও এর বাস্তবায়নে মনিটরিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে।