শরীরকে সুস্থ রাখা এবং অসুস্থ শরীরকে ফিজিওথেরাপীর মাধ্যমে পুনর্বাসন করার একটি অন্যতম উপায় হচ্ছে নামাজ। শারীরিক পুনর্বাসন একটি নিয়মিত হালকা ব্যায়াম কর্মসূচি যা আমাদের হাঁটাচলা ও শারীরিক নাড়াচাড়াকে শক্তিশালী করে। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের মাংসপেশি ও জয়েন্টগুলিতে অসাড়তা হ্রাস করতে সহায়তা করে।
যাদের হাঁটাচলা বা নাড়াচাড়ায় সমস্যা বা ব্যথা অনুভব হয়, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পাদন করার জন্য। সেক্ষেত্রে নামাজ ফিজিওথেরাপির গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম বলে মন্তব্য করেছেন নগর বিএনপি সভাপতি ও স্পোর্টস মেডিসিন স্পেশালিস্ট ডা.শাহাদাত হোসেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে বৃহস্পতিবার ( ২১ মে) রাতে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি ফেসবুকে লাইভে টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে জনগণকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি লাইভ সেশনে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে দর্শকদের থেকে ফিজিওথেরাপির বিষয়ে কিছু প্রশ্ন পান। তার উত্তরে তিনি জানান কিভাবে আমাদের প্রাত্যহিক নামাজের মাধ্যমেই ফিজিওথেরাপির ব্যায়াম করা যায়।
তিনি আরো বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার মধ্যেই পড়ে। আমাদের দেহ এবং রুহ একদিন আল্লাহর কাছেই ফেরত যাবে। তাই আমাদের দেহের যত্ন নেওয়া আমাদের দায়িত্ব। বিশ্বাসের পরে, স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা হচ্ছে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সবচাইতে বড় আশীর্বাদ। এবং এর জন্য আল্লাহ্র কাছে আমাদের জবাবদিহি থাকতে হবে।
ফেসবুক লাইভে ফিজিওথেরাপিউটিক বেনেফিট হয় তা কি বলছেন চলুন জেনে নিই।
তাকবির: তাকবিরের সময় কনুই বাঁকানো থাকে ও কাঁধের জয়েন্টটি আলতোভাবে প্রসারিত থাকে। তার পরে কাঁধের শোল্ডার ব্লেড এবং পিঠের নিচের অংশ তাদের স্বাভাবিক শিথিল অবস্থায় ফিরে আসে কেন্দ্রীয় মাংসপেশীর (কোর মাসল) সাহায্যে। এই মাংসপেশীগুলো মেরুদণ্ড সোজা রাখতে ও সোজা হয়ে দাঁড়াতে সাহায্য করে। তাকবিরের এই ব্যায়াম বারবার করার ফলে কেন্দ্রীয় মাংসপেশী
আরো শক্তিশালী হয়।
কিয়াম: কিয়ামের সময় আমাদের হাত পেটের উপর কোমরের কাছে নামানো থাকে ও আমাদের কাঁধ শিথিল অবস্থায় থাকে। তখন শ্বাসপ্রশ্বাসও থাকে স্বাচ্ছন্দ্যময়। দুপায়ের উপর সমান ভর পড়ে, যাতে কেন্দ্রীয় মাংসপেশী সক্রিয় থাকে।
রুকু: রুকুর সময় কোমর বাঁকানোর ফলে পিঠের নিম্নাংশের মাংসপেশী, উরুর ও পায়ের পেশী সম্পূর্ণরূপে প্রসারিত থাকে। কোমর ও পিঠ বাঁকানো নিয়ন্ত্রন করার ফলে কেন্দ্রীয় পেশীগুলোর ব্যায়াম হয়, রুকুতে যাওয়ার সময় ও রুকু থেকে উঠার সময়।
সিজদা: সিজদার সময় পিঠের নিম্নাংশের মাংসপেশী সংকুচিত থাকে ও ঘাড়ের পেশীগুলো আমাদের মাথাকে নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় মাটিতে অবনত করতে ও মাটি থেকে উঠাতে সাহায্য করে। এসময় হাতেও শরীরের ওজন পড়ার ফলে, কাঁধের শোল্ডার ব্লেডেকেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। এতে কাঁধ ও কাঁধের রোটেটর কাফকে শক্তিশালী করে স্থিতিশীল রাখে।
তাশাহহুদ: তাশাহহুদ বা সালাম ফিরানোর আগে বসে থাকার সময় পায়ের পাতা ও পায়ের গোড়ালির পেশী প্রসারিত থাকে, পায়ের আঙ্গুলগুলো সম্প্রসারিত হয়, এবং হাঁটু ও কোমর সংকুচিত থাকে। পিঠের নিম্নাংশ ভালো পশ্চারে (অবস্থানে) থাকার ফলে কেন্দ্রীয় মাংসপেশী আরো শক্তিশালী হয়।
সালাম ফিরানো: সালাম ফিরানোর সময় মাথা ঘুরানোর ফলে ঘাড়ের রেইঞ্জ অফ মোশন বৃদ্ধি পায়। বারবার এই ব্যায়াম করার ফলে, ঘাড়ের পেশীগুলোও প্রসারিত হয়।
ফিজিওথেরাপির ভাষায় নামাজ বা সালাহ একটি হালকা থেকে মাঝারি ধরণের ব্যায়াম যা প্রতিদিন পাঁচবার ১০ থেকে ২০ মিনিট পর্যন্ত করা হয়ে থাকে। এতে হৃদস্পন্দন বাড়ে, শরীরের রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং হৃৎপিণ্ডের পেশীগুলির শক্তি এবং সহনশক্তি (স্ট্যামিনা) উন্নত হয়। এই ব্যায়াম শরীরের প্রাকৃতিক ব্যথানাশক (পেইনকিলার) এন্ডোরফিন নিঃসরিত হয় যা ভাল থাকার অনুভূতি দেয় ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ২০০০ সঙ্গে প্বেরকাসজিত বেনসন এবং ক্লিপারের রিসার্চে দেখা গেছে যে নামাজ বা প্রার্থনা একতি প্রাকৃতিক ‘শিথিলকরণ প্রতিক্রিয়া’ যা শরীরকে হালকা করে। এটি মানসিক চাপকে হ্রাস করে যা প্রায়শই আমাদেরকে অসুস্থ করে ফেলে এবং ব্যথার বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে অ্যাড্রেনালিনের মতো হরমোনগুলিও কম সক্রিয় থাকে যা এবং স্নায়ুতন্ত্রকে শিথিল করে রক্তচাপ ও মানসিক উদ্বেগের উপর উপকারী প্রভাব ফেলে।