ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়ম এবং আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ দেওয়ায় মানিক (৩৬) নামে একজনকে কুপিয়ে যখম করেছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আবদুল্লাহ (২৫) নামের আরও এক যুবক।
শুক্রবার (২২ মে) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের গর্জনবুনিয়া গণকবর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত আবদুল্লাহ জানান, নলটোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম কবীরের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের বরাবরে জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়ম ও আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ করেন তিনিসহ মোট ৩০ জন স্থানীয় জেলে। এ ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে চেয়ারম্যানের লোকজন তাদের হুমকি দিয়ে আসছিল বলেও জানান তিনি।
আব্দুল্লাহ আরো জানান, নলটোনা ইউনিয়নের গণকবর এলাকায় তাদের ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় চেয়ারম্যান গোলাম কবীরের ভাইয়ের ছেলে মিজান ও সোহাগ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। এ ছাড়াও চেয়ারম্যানের অনুসারী শহীদ ও মুছা ‘ডিসির কাছে অভিযোগ দিয়েছিস কে’ এ কথা বলেই শহীদের নেতৃত্বে মিজান, সোহাগ, সোহেল, তানজিল, তুষার ও নিজামসহ কয়েকজন তাকে মারধর শুরু করেন। এ সময় তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে শহিদ ও মুছা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মানিককে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে যখম করে।
খবর পেয়ে স্বজনরা মানিক ও আবদুল্লাহকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে মানিককে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক নীহার রঞ্জন বৈদ্য জানান, মানিকের কাঁধ ও গলাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে যখম হয়েছে।
আবদুল্লাহর অভিযোগ, চেয়ারম্যানের ইন্ধনে তার ভাইয়ের ছেলে মিজান ও সোহাগের পরিকল্পনায় শহীদ ও মুছার নেতৃত্বে তাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে এ হামলা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কবীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার ভাইয়ের ছেলেরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না। এ ঘটনাটি মূলত মাদককেন্দ্রিক বিরোধে ঘটেছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এ ঘটনাকে পুঁজি করে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবির মোহাম্মদ হোসেন মুঠোফোনে জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ মার্চ বরগুনা সদর উপজেলার নলটোনা ইউনিয়নের নিবন্ধিত ১ হাজার ৫৮০ জন জেলের মাঝে ভিজিএফ-এর চাল বিতরণ করা হয়। নিয়মানুযায়ী প্রত্যেক জেলেকে প্রতি দুই মাসে ৮০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও ওই ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে দুই মাসে ৬০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। জনপ্রতি ২০ কেজি করে চাল কম দেওয়া হয় প্রত্যেক জেলেকে।
এ ছাড়াও মাছধরার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন অনেকে জেলেদের এই চাল পেলেও বঞ্চিত হয়েছেন তালিকাভুক্ত অনেক প্রকৃত জেলে। এসব অভিযোগে ওই ইউনিয়নের নিবন্ধিত ৩০ জেলে বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। এ অভিযোগ আমলে নিয়ে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রতিবেদন দাখিলের নিরদেশ দেন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ।