বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। নিঃসন্দেহে এই সময়ে পুরো বিশ্বের সঙ্গে খারাপ সময় পার করছে বাংলাদেশও। তবে দেশের এ দুঃসময়ে গরিব-অসহায় ও করোনায় আক্রান্ত রোগীর পাশে দাঁড়িয়েছেন কমিউনিটি পুলিশিং।
দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। সেই সময় থেকে ‘পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ’- এ স্লোগানে নগর কমিউনিটি পুলিশিং-এর সদস্যরা করোনাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তারা নগরের থানা কমিটির ১৪৫টি বিট অফিসার এবং সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে নগরজুড়ে কাজ করছে। এছাড়া শুরু থেকে বিদেশফেরত ব্যক্তিদের বাসস্থান ও তাদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দিয়ে প্রতিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসিকে) সহযোগিতা করেছে।
শুধু তাই নয়, নিজের জীবন ও পরিবারের সদস্যরা সংক্রমিত হতে পারে যেকোনো সময়, এই শঙ্কা মাথায় রেখেও মানুষের জীবন রক্ষায় নগর কমিউনিটি পুলিশিং-এর সদস্যরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
নগর কমিউনিটি পুলিশিং-এর সদস্য সচিব ও জয়নিউজ সম্পাদক অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন বলেন, করোনা মোকাবিলায় কমিউনিটি পুলিশিং শুরু থেকে কাজ করছে। বিদেশফেরত ব্যক্তিদের বাসস্থান ও তাদের সস্পর্কে যাবতীয় তথ্য দিয়ে প্রতিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাতে (ওসিকে) নানাভাবে সহযোগিতা করেছে। এছাড়া অসহায়দের মাঝে ত্রাণ-সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ এবং হাসপাতালের জন্য অক্সিজেন এবং ওষুধ সামগ্রী প্রদানসহ বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে।
এসব কর্মকাণ্ড সফলভাবে সম্পন্নে কমিউনিটি পুলিশিং-এর উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান সর্বাত্মক সহায়তা করছেন- যোগ করেন অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন।
জানা যায়, জনগণকে করোনা সম্পর্কে সচেতন করতে শুরু থেকে নগরের অলি-গলিতে কমিউনিটি পুলিশিং-এর নিজস্ব পরিবহনে ১ লাখ লিফলেট বিতরণ করা হয়ে। যেকোনো মূল্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় মাইকিং করে মানুষকে ঘরে থাকার বিষয়ে সচেতন করার পাশাপাশি মাস্কও বিতরণ করে কমিউনিটি পুলিশিং।
এছাড়া তারা দেশে অঘোষিত লকডাউনে জীবন বাজি রেখে নগরের দেড় হাজার পরিবারের ঘরে ওষুধ ও খাদ্যমগ্রী পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছে।
সিএমপি ও কমিউনিটি পুলিশিং-এর উদ্যোগে ওয়াটার ক্যানন দিয়ে জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি ছিঁটানো হয়। প্রথম দিন দামপাড়া পুলিশ লাইন্স গেইট, পুনাক মোড়, ওয়াসার মোড় ও আশপাশের এলাকায় জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি ছিঁটানো হয়।
সুবিধাভোগীরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে খেটে খাওয়া, হতদরিদ্রের পাশে দাঁড়িয়ে নগর কমিউনিটি পুলিশিং মানবিকতার অনন্য এক নজির সৃষ্টি করেছে। শুধু তাই নয়, করোনা শনাক্ত রোগীর বাড়িসহ আশপাশের লকডাউনে থাকা বাড়িতে খাদ্য সরবরাহ করে খেটে খাওয়া মানুষের কঠিন জনজীবনকে সহজ করেছে নগর কমিউনিটি পুলিশিং। করোনাযুদ্ধে শ্রমজীবী মানুষের পাশে কমিউনিটি পুলিশিং দাঁড়ানোয় তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে বলে মনে করেন তারা।
এদিকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রথমে চট্টগ্রামে ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেন চিকিৎসক ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। আধুনিক সুবিধার হাসপাতালটিতে শুধু করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে এটিই প্রথম ফিল্ড হাসপাতাল। হাসপাতালটি চালু হওয়ার কিছুদিন পর নগর কমিউনিটি পুলিশিং এই হাসপাতালের করোনা রোগীদের সেবার জন্য ১৫ সেট অক্সিজেন এবং ওষুধ উপহার দেয়।
ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কমকর্তা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়ার কাছে অক্সিজেন এবং ওষুধ তুলে দেওয়া হয়। নগর কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্য সচিব অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপনের মাধ্যমে এগুলো হস্তান্তর করেন কমিউনিটি পুলিশিং-এর উপদেষ্টা ও সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালেও করোনা রোগীদের সেবার জন্য ১৫ সেট অক্সিজেন এবং ওষুধ উপহার দেয় কমিউনিটি পুলিশিং।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন ও সৎকার করে যাচ্ছে আল মানাহিল ফাউন্ডেশন। সেই মানবিক প্রতিষ্ঠানটিকে সহযোগিতা করছে নগর কমিউনিটি পুলিশিং-এর সদস্য সচিব ও জয়নিউজ সম্পাদক অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন।
আল মানাহিল ফাউন্ডেশন সদস্যদের সুরক্ষায় ৫শ’ পিপিই, হাতের গ্লাভস, মাস্ক এবং চশমা হস্তান্তর করেছে কমিউনিটি পুলিশিং। এছাড়া পবিত্র রমজান মাসজুড়ে ইফতারের সময় ১ থেকে ৩ হাজার সাধারণ মানুষকে ইফতারি তুলে দিয়েছে তারা।
কমিউনিটি পুলিশিং ও আল মানাহিল ফাউন্ডেশনের সদস্যরা যৌথভাবে নগরের প্রতিটি এলাকায়, প্রতিষ্ঠান কিংবা বাড়ি লকডাউন ঘোষিত হলে তা নিশ্চিত করা, বিদেশফেরত কিংবা অন্যভাবে কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষকে ঘরে থাকা নিশ্চিত করা, আইসোলেশন নিশ্চিত করা, অসুস্থ ব্যক্তিকে হাসপাতালে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, গর্ভবতী মহিলাদের হাসপাতালে আনা-নেওয়া, করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির লাশ পরিবহন ও যথাযথ মর্যাদায় দাফনের ব্যবস্থা করেছে।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকষর্ণ করা হলে আল মানাহিল ফাউন্ডেশনের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন জয়নিউজকে বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় শুরু থেকে নগর কমিউনিটি পুলিশিং-এর সদস্য সচিব অহীদ সিরাজ চৌধুরী স্বশরীরে উপস্থিত থেকে আমাদের সহযোগিতা করেছেন। আল মানাহিলের সদস্যদের সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করেছেন।
এছাড়া হালিশহর এলাকায় আল মানাহিল ফাউন্ডেশন ১০০ বেডের জেনারেল হাসপাতালে নির্মাণ করেছে। সেই হাসপাতালে নগর কমিউনিটি পুলিশিং-এর সদস্য সচিব অহীদ সিরাজ চৌধুরী সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন- যোগ করেন তিনি।