করোনা প্রার্দুভাবে নগরের মানুষ এখন দিশেহারা। প্রতিদিনই নগর তো বটেই উপজেলাগুলোতেও বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তবে সম্প্রতি একটি বিষয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধি হয়েছে অনেকবেশি। তা হলো হঠাৎ শ্বাসকষ্ট। করোনার কোনো উপসর্গ ছাড়াই হঠাৎ শ্বাসকষ্টে মৃত্যুর খবরও পাওয়া যাচ্ছে নগরের বিভিন্ন এলাকায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এমন পোস্ট হরহামেশা দেখা যাচ্ছে। আবার অনেকে শ্বাসকষ্ট থাকায় সময়মতো হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে পর্যাপ্ত চিকিৎসা পারছেন না বলে অভিযোগও আছে। ফেসবুকের বিভিন্ন পণ্যবিক্রির গ্রুপে নেবুলাইজারসহ বিভিন্ন পণ্য কেনারও একটি হিড়িক লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
শ্বাসকষ্ট অনেক সময় হঠাৎ করে শুরু হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। এনটিভিকে এক সাক্ষাতকারে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে এমন কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এ কে এম আমিনুল হক।
প্রশ্ন: শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে কী করতে হবে?
শ্বাসকষ্ট তো যেকোনো সময়, যেকোনো অবস্থায় হতে পারে। এটাই সমস্যা। দেখা গেল রাত ৩টা-৪টার সময় তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে গেল, আশপাশে কোনো ডাক্তার নেই, কোনো জায়গায় কোনো সেন্টারও খোলা নেই। যদি হাসপাতালে যেতে পারে, তাহলে ভালো। শ্বাসকষ্টের তীব্রতা দেখে আমরা ভাগ করি—অল্প, না বেশি শ্বাসকষ্ট। যদি খুব বেশি শ্বাসকষ্ট হয়, এখন অনেক ভালো চিকিৎসা আছে। নেবুলাইজেশন আছে, এটা দিয়ে যদি ওষুধ খায়, সালবিউটামল দেওয়া হয়। ইনহেলার নেওয়া যায়, আবার নেবুলাইজারও নেওয়া যায়। যদি তীব্র আকারে হয়, তাহলে নেবুলাইজারের ব্যবস্থা করতে হবে। হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে অথবা যদি হাসপাতালে জরুরি বিভাগে আসে, তাকে নেবুলাইজার দিয়ে চেষ্টা করতে হবে, তার শ্বাসকষ্ট কমানোর জন্য।
আর যদি দেখা যায়, এত বেশি শ্বাসকষ্ট নেই, শ্বাসকষ্ট আছে, সে চলাফেরা করছে, কাজকর্ম করছে, এ রকম হলে নেবুলাইজার দেওয়া হয়। নেবুলাইজার হয়তো সে দুই থেকে চারবার নিল। আমাদের দেশে অনেকে প্রাথমিক অবস্থায় নেবুলাইজার নিতে চায় না। মনে করে, আমার অসুখটা খুব কঠিন হয়ে গেছে। আসলে নেবুলাইজেশন কিন্তু ভালো। এখানে ওষুধের পরিমাণ কম। যারা নিতে চায় না, তাদের আমরা অনেক সময় ট্যাবলেট দিয়ে চিকিৎসা করে থাকি। সে ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় আমরা ট্যাবলেট দিয়ে চিকিৎসা করার চেষ্টা করি।
এছাড়া শ্বাস নিতে কষ্ট হলে ঘরের কিছু খাবারে মিলতে পারে সুফল। এক্ষেত্রে যে যে খাবরগুলি বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসুন সে সর্ম্পকে জেনে নিন-
আদা
গবেষণায় দেখা গেছে এই প্রাকৃতিক উপাদানটির শরীরে থাকা বেশ কিছু উপকারি উপাদান শ্বাসনালীর প্রদাহ কমিয়ে অক্সিজেনের প্রবেশ যাতে ঠিক মতো হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শ্বাসকষ্ট কমতে শুরু করে। এক্ষেত্রে সম পরিমাণে আদার রস, বেদানার রস এবং মধু মিশিয়ে একটা মিশ্রন তৈরি করতে হবে। এই মিশ্রনটি দিনে ২-৩ বার খেলে দেখবেন দারুন উপকার মিলবে।
সরষের তেল
একেবারে ঠিক শুনেছেন! শ্বাসকষ্ট কমাতে বাস্তবিকই সরষের তেল দারুন কাজে আসে। আসলে এই তেলটি রেসপিরেটারি প্যাসেজকে খুলে দেয়। ফলে শ্বাস নিতে কোনও কষ্টই হয় না। তাই এবার থেকে অ্যাজমার অ্যাটাক হলেই অল্প করে সরষের তেল গরম করে নেবেন। তারপর সেটি অল্প ঠাণ্ডা করে বুকে-পিঠে ভাল করে মালিশ করতে থাকবেন। এমনটা করলেই ধীরে ধীরে লক্ষণ কমে যেতে শুরু করবে। সঙ্গে কমবে কষ্টও।
ডুমুর
এতে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। আর একবার ফুসফুস ঠিক মতো কাজ শুরু করে দিলে শ্বাস-প্রশ্বাসও স্বাভাবিকভাবে হতে শুরু করে। ফলে শ্বাসকষ্ট দূরে পালায়। এখন প্রশ্ন হল এমন পরিস্থিতিতে ডুমুরকে কাজে লাগাবেন কিভাবে? প্রথমে তিনটি ডুমুরকে সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালবেলা খালি পেটে পানি এবং ডুমুর তিনটি খেয়ে ফেলুন। ব্যাস তাহলেই কেল্লাফতে!
রসুন
হাফ কাপ দুধে পরিমাণ মতো রসুন ফেলে ভাল করে দুধটা ফোটান। তারপর হলকা ঠাণ্ডা করে দুধটা খেয়ে ফেলুন। এই পানীয়টা খাওয়ার পর দেখবেন কষ্ট কমতে সময় লাগবে না। আসলে ফুসফুস যাতে ঠিক মতো কাজ করতে পারে, সেদিকে রসুন নজর রাখে। ফলে সমস্যা কমতে সময়ই লাগে না।
কফি
কানকে বিশ্বাস করতে পারছেন না, তাই তো? তবে সত্যিই অ্যাজমার প্রকোপ কমাতে কফি দারুন কাজে আসে। কারণ গরম গরম এক পেয়ালা কফি খেলে শ্বাসনালী খুলে যায়। ফলে অক্সিজেন খুব সহজেই ফুসফুসের অন্দরে প্রবেশ করে যায়। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে কফি যত কড়া হবে, তত উপকার পাবেন। তাই এবার থেকে শ্বাস নিতে সামান্য অসুবিধা হলেই কফি খেয়ে নেবেন। দেখবেন উপকার মিলবে। তবে দিনে ৩ কাপের বেশি কফি কিন্তু ভুলেও খাবেন না। কারণ এই পানীয়টি যতটা উপকারি, বেশি মাত্রায় খেলে কিন্তু ততটাই শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর।
মধু
অ্যাজমার চিকিৎসায় মধুর ব্যবহার বহু কাল ধরে হয়ে আসছে। আসলে এই প্রকৃতিক উপাদানটির শরীরে রয়েছে বেশ কিছু উপকারি উপাদান, যা এমন রোগের প্রকোপ কমাতে দারুন কাজে আসে। এক্ষেত্রে মধুর গন্ধ নিলেও অনেকের উপকার হয়। আর যদি এমনটা করে ফল না মেলে। তাহলে দিনে তিনবার, এক গ্লাস করে গরম জলে এক চামচ করে মধু মিশিয়ে পান করলে দারুন উপকার মিলবে।
পেঁয়াজ
এতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা শ্বাসনালীর প্রদাহ কমিয়ে অ্যাজমার প্রকোপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে কাঁচা পেঁয়াজ খেলেই বেশি উপকার মেলে, অন্যভাবে নয় কিন্তু! সূত্র: বোল্ডস্কাই