রাঙ্গুনিয়ায় বন বিভাগের প্রায় ৭৫ হাজার বিভিন্ন জাতের গাছের চারা রাতের আঁধারে কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সরকারের পরবিশে ও বন মন্ত্রণালয়রে ‘টেকসই বন ও জীবকিা (সুফল)’ প্রকল্পের আওতায় বনায়নের জন্য এসব চারা তৈরি করা হয়। সপ্তাহ খানেক ধরে নার্সারি থেকে এসব চারা তুলে রোপণ করেছিল বনবিভাগ।
কোটি টাকা মূল্যের এসব চারা রাতের আঁধারে কারা কেটে দিয়েছে, তা কেউ না দেখলেও বনের জায়গা দখল করার অংশ হিসেবে স্থানীয় এক বৌদ্ধ ভিক্ষুর দিকেই অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন বনবিভাগ। তিনি ইতোমধ্যেই প্রায় অর্ধশতাধিক একর সংরক্ষিত বনের জায়গা দখল করে সেখানে গড়ে তুলেছেন বৌদ্ধ বিহার ও আশ্রম। সেখানে বসবাস করেন ভিক্ষুসহ শতাধিক মানুষ।
শনিবার (৬ জুন) দিবাগত রাতের যেকোনো সময়ে দুর্বৃত্তরা চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন রাঙ্গুনিয়ার খুরুশিয়া রেঞ্জের ফলহারিয়ার সংরক্ষিত বনের নার্সারিতে এই তান্ডব চালায়।
সুখবিলাস বনবিটের আওতাধীন ফলহারিয়া এলাকায় বনবিভাগের এই নার্সারি সংলগ্ন প্রায় ৫০ একর বনের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে জ্ঞানশরণ মহাঅরণ্য বৌদ্ধ বিহার। ২০১১ সাল থেকে বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু শরণঙ্কর থের ধ্যান করার জন্য প্রথমে পাঁচ শতক বনের জায়গায় একটি ঘর করে দখলের সুচনা করেন বলে জানান স্থানীয়রা। ক্রমান্বয়ে সংরক্ষিত বনের জায়গা দখলের পরিধি বর্তমানে ৫০ একর ছাড়িয়ে সুপরিসর বিহার ও আশ্রম গড়ে তুলেন শরণঙ্কর থের।
বনবিভাগের রাঙ্গুনিয়ার খুরুশিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম জানান, গত বছর নতুনভাবে বনের জায়গা দখলের চেষ্টা করলে বনবিভাগ বাঁধা দিলে বৌদ্ধ ভিক্ষু শরণঙ্কর থেরসহ প্রায় অর্ধশত লোক এসে বনকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় বন বিভাগ শরণঙ্কর থেরসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুটি মামলাও করেছিলেন জায়গা দখল ঠেকাতে। কিন্তু শত বাঁধা ও মামলা কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না জায়গা দখল। বাঁধা দিতে গেলেই তারা দলবল নিয়ে হামলা করেন বনকর্মীদের উপর।
শনিবার রাতে ৭৫ হাজার চারা কেটে ফেলার ঘটনায় রোববার (৭ জুন) রাতে রাঙ্গুনিয়া থানায় অভিযোগ দিয়েছেন সুখবিলাস বনবিট কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম। পুলিশ ঘটনার তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।
জ্ঞানশরণ মহাঅরণ্য বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ দিপঙ্কর ভিক্ষু গাছের চারা কেটে ফেলার সঙ্গে তারা জড়িত নয় দাবি করে বলেন, তবে তাদের বিহারের সম্পূর্ণ জায়গা বন বিভাগের। আশপাশের অনেকেই বনের জায়গায় ঘরবাড়ি করে বসবাস করছেন, তারা যেগুলো দখল করেছেন সেগুলো ধর্মচর্চার জন্য করেছেন।
এতে অপরাধের কিছু দেখেন না জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বনের জয়গায় বসবাসকারীদের সরকার যদি উচ্ছেদ করেন তাহলে আমাদেরও করা যাবে।
খুরুশিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বলেন, বর্তমানে শরণঙ্কর ভিক্ষুর দখলীয় বনের জায়গা ৫০ একর ছাড়িয়ে যাবে। তিনি যাতে আর দখলের পরিধি বাড়াতে না পারেন সেজন্য সুফল প্রকল্পের আওতায় বনায়নের উদ্যোগ নেন তারা। কয়েকদিন ধরে বৌদ্ধ বিহারের আশপাশের জায়গায় চারা রোপন শুরু করেন বনবিভাগ। সেকারণে রাতের আঁধারে তিনি প্রায় কোটি টাকা মূল্যের ৭৫ হাজার গাছের চারা কেটে তছনছ করে দেন বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি বলেন, সরকারি বনজ সম্পদ ব্যবস্থাপনা, বন সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারে স্থানীয় জনগণরে অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং বনজ সম্পদ উজাড় রোধ ও বননর্ভির জনগোষ্ঠীর বিকল্প জীবিকা সুবধিা প্রদানসহ বেশ কিছু লক্ষ্যমাত্রা সামনে নিয়ে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ‘সুফল’ প্রকল্পের কাজ শুরু করে বনবিভাগ। এই প্রকল্পের অধীনে সুখবিলাস বনবিটের ফরহারিয়ায় শতাধিক হেক্টর ভুমিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দীর্ঘমেয়াদি বনায়ন করার জন্য ৯৫ হাজার গাছের চারার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে নার্সারি গড়ে তুলেন।
সুখবিলাস বনবিট কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, নার্সারি থেকে চারা তুলে শ্রমিকরা সপ্তাহখানেক ধরে পাহাড়ে চারা রোপণ করে আসছে। কিন্তু শনিবার রাতে নার্সারিতে থাকা প্রায় ৭৫ হাজার চারা গাছ কেটে তছনছ করে দেন দুর্বৃত্তরা। সরকার চারা রোপণ করলে আর বনের জায়গা দখল করা যাবে না, সেই চিন্তা থেকেই দখলবাজরা রাতের আঁধারে এ কাজ করতে পারেন বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে ফলহারিয়া জ্ঞানশরণ মহাঅরণ্য বৌদ্ধ বিহারের প্রতিষ্ঠাতা ভদন্ত শরণঙ্কর থের’র সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য রোববার (৭ জুন) বিকেল থেকে চেষ্টা করা হলে বিহার অধ্যক্ষ দীপঙ্কর ভিক্ষু জানান, তিনি কোনো মোবাইল ব্যবহার করেন না। রাত ৮টায় আপনার সঙ্গে সংযোগ করে দেব। রাত ৮টার পর থেকে ৯টা পর্যন্ত একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।