প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেশের সব জেলায় হলেও এখন পর্যন্ত চার জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি। এসব জেলায় সুস্থতার হারও অন্যান্য জেলার তুলনায় বেশি। এমনটাই জানিয়েছেন এসব জেলার সিভিল সার্জনরা।
তারা জানান, স্বাস্থ্যবিধি মানা, শক্তহাতে লকডাউন কার্যকর করা, বাইরের জেলা থেকে আসা মানুষকে দ্রুত শনাক্ত করে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা এবং আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত যত্ন নেওয়ায় মৃত্যুর ঘটনা এড়ানো গেছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির সহযোগিতায় এসব সম্ভব হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (২৩ জুন) সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুড়িগ্রাম ও সাতক্ষীরা জেলায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি। এছাড়া কোনো রোগীর মুমূর্ষ অবস্থাও সৃষ্টি হয়নি। আক্রান্ত রোগীদের কিভাবে নিরাপদ রেখে চিকিৎসা দিয়েছেন সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে এই চার জেলার সিভিল সার্জন। যা অন্যান্য জেলার জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে।
জয়পুরহাট:
এখন পর্যন্ত এই জেলায় ২৫৫ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, এদের মধ্যে ১৬২ জন সুস্থ হয়েছেন। কখনোই আক্রান্ত কোনও রোগীর অবস্থা উদ্বেগের বা আশঙ্কাজনক হয়নি। আক্রান্তদের মধ্যে ২২০ জনকেই হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. সেলিম মিয়া।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে আক্রান্তদের সুস্থতার হার খুব বেশি। আমরা বিশেষ কিছু করছি না। তবে আক্রান্তদের বেশিরভাগ আমাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেই।
‘আক্রান্ত হওয়ার পরই তাকে পরিবার থেকে আলাদা করে প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে নিয়ে আসি। হাসপাতালে রেখে তাদের চিকিৎসা সেবা চলে। ভালো খাবার দাবারের ব্যবস্থা করি। এতেই আমরা ভালো ফল পেয়েছি। কোনও রোগীর অবস্থা কখনোই ক্রিটিক্যাল হয়নি। আমাদের আক্রান্ত ২৫৫ জনের মধ্যে ৩০/৩৫ জনকে কেবল বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করেছি। কারো অবস্থাই আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি।’
আক্রান্তদের মধ্যে উপসর্গ তেমন ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, উপসর্গ তেমন ছিল না, তবে আমরা কোনটিকে গুরুত্ব কম দেইনি। আক্রান্তদের বেশিরভাগই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে যুক্ত ছিল। আমরা এসব রোগীদের দ্রুত শনাক্ত করেছি। তাই ভালো ফল পেয়েছি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
এখন পর্যন্ত এই জেলায় ৮৮ জন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে ৫৭ জন সুস্থ হয়েছেন। বাকিদের অবস্থাও তুলনামূলক ভালো। কেউ আশঙ্কাজনক অবস্থায় নেই। এখন পর্যন্ত মারা যায়নি কেউ। এমনটাই জানিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী।
তিনি বলেন, আমরা এলাকার প্রশাসন ও নাগরিকদের নিয়ে প্রথম থেকেই শতভাগ কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করেছি। দুইমাসে সাড়ে ৫ হাজার মানুষের মেডিকেল চেকআপ করা হয়েছে। ইতালি ও চায়না ফেরতদের আমরা কোয়ারেন্টাইনে রেখেছি। এজন্য কিছুটা সফলতা পেয়েছি। আর যারা আক্রান্ত হয়েছে,তাদের ৯০ শতাংশ মানুষ গাজীপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। আক্রান্তদের দ্রুত আইসোলেশনে নিয়েছি।
ভৌগলিক কারণেও এই জেলার সঙ্গে অন্যান্য জেলার যোগাযোগ কম রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কম ঝুঁকিপূর্ণ থাকলেও রাজশাহীতে সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে, আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে আরো ভাবতে হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম:
এখন পর্যন্ত এই জেলায় করোনায় আক্রান্ত ১২৩ জন, এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে ৭৭ জন। জেলা হিসেবে গ্রিন জোনে রয়েছে। এখানে আক্রান্ত হয়ে কেউ মৃত্যুবরণ করেননি। তবে এই জেলার একজন পুলিশ সদস্য করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে বগুড়াতে মারা গেছেন। তাকে ওই জেলার মৃত্যু তালিকায় গণনা করা হয়েছে।
জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবীবুর রহমান বলেন, আমরা জেলা হিসেবে গ্রিনজোনে রয়েছি। তবে এতে আমরা এখনই সন্তুষ্ট হচ্ছি না। কারণ জেলা গ্রিনজোনে থাকলেও আমাদের কিছু উপজেলা ও ইউনিয়নে যেহেতু সংক্রমণ ছড়িয়েছে, তাই সেগুলো আমরা রেডজোন হিসেবে ঘোষণা করবো। আমরা প্রথম থেকে লকডাউন শক্তহাতে করার চেষ্টা করেছি। সন্দেহভাজনদের দ্রুত টেস্ট করেছি। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করেছি। এতে কিছু ফল পেয়েছি, তবে আরো কাজ করতে হবে।
সাতক্ষীরা:
এখন পর্যন্ত এই জেলায় করোনায় আক্রান্ত ১০৪ জন, সুস্থ হয়েছেন ১৬ জন। কেউ মারা যাননি। জেলা হিসেবে গ্রিন জোনে রয়েছে।
আক্রান্ত কম থাকা ও মৃত্যু না থাকার জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কি-না, জানতে চাইলে জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসেইন সাফায়েত বলেন, আমরা প্রথম থেকে কঠোর লকডাউনে ছিলাম। ঈদের আগে আমাদের আক্রান্তের হার ছিল সামান্য। কিন্তু ঈদের ছুটিতে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে মানুষ আসায় আক্রান্তের হার বেড়েছে। তিনটি ইউনিয়নে আক্রান্ত বেশি। সেগুলো আমরা রেড জোন ঘোষণা করে পুরো লকডাউনের দিকে যাচ্ছি। পুলিশ আমাদের প্রথম থেকে সহযোগিতা করছে তাই এখানে মানুষের মধ্যে সচেতনতা কাজ করছে।