করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সন্দেহ হলে যেকেউ বাসা–বাড়ি থেকেই পরীক্ষা করাতে পারবেন। তবে এজন্য দিতে হবে নির্ধারিত ফি। সরকারি হাসপাতাল ও বুথে গিয়েও নমুনা পরীক্ষা করানো যাবে আগের মতো। দুই ক্ষেত্রেই ফি দিতে হবে। চলতি সপ্তাহের মধ্যে ফি নির্ধারণ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
দেশে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের শুরু থেকে সরকার এখন পর্যন্ত বিনা পয়সায় এই স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছিল। কিন্তু এবার এর পরিবর্তন হচ্ছে। অর্থাৎ আগের মতো বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষা করানো যাবে না।
কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশ থেকে আমদানি করা প্রতিটি কিটের দাম পড়ছে তিন হাজার টাকা। যদি বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয় সেক্ষেত্রে সবমিলিয়ে একটি পরীক্ষার পেছনে সরকারের খরচ পড়ে যায় পাঁচ হাজার টাকার মতো। তাই ফি যেটা নেওয়া হবে তাকে নামমাত্রই বলতে চাইছে কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে,সরকারি হাসপাতাল ও বুথে গিয়ে নমুনা পরীক্ষা করালে ফি দিতে হবে ২০০ টাকা। আর বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করালে ৫০০ টাকা ফি দিতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিয়ে এই ফি নির্ধারণ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করবে বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: বন্ধ হচ্ছে সরকারি খরচে করোনা পরীক্ষা!
জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নান বলেন, কারো শরীরে করোনাভাইরাস আছে কি-না, তা জানার জন্য আমরা এখন যে নমুনা পরীক্ষা (আরটি-পিসিআর টেস্ট) করছি, তাতে কোনো টাকা নেওয়া হয় না। তবে নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে আমরা একটি ফি নির্ধারণ করেছি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। আশা করছি, চলতি সপ্তাহের মধ্যে ফি নির্ধারণ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
করোনা পরীক্ষার জন্য কেন ফি নির্ধারণ করা হচ্ছে— এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, দুই কারণে ফি নির্ধারণের পথে হাঁটছে সরকার।
একাধিক কর্মকর্তা জানান, করোনার কারণে সরকারের আয় কমে গেছে। একেকটি নমুনা পরীক্ষার পেছনে যে টাকা খরচ হয়, বাংলাদেশের মতো দেশে এটি দুই থেকে তিন মাস বিনামূল্যে করা সম্ভব। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সম্ভব নয়। দেশে যে হারে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদে নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। এজন্য সরকার একটি ফি নির্ধারণ করতে যাচ্ছে।
দ্বিতীয় কারণ হলো, নমুনা পরীক্ষা করতে গিয়ে এর অপব্যবহার হচ্ছে। অনেকের শরীরে করোনার উপসর্গ না থাকলেও সন্দেহ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করাচ্ছে। সন্দেহ হলে পরীক্ষা নিরুৎসাহ করার জন্যও সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
তবে ফি নেওয়া ঠিক হবে না বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, অসম্ভব, হতেই পারে না। এখানে যদি টাকার বিষয়টা আসে, তাহলে দরিদ্র শ্রেণির মানুষ পরীক্ষা করাতে আসবে না। বড়লোকেরা যাদের দরকার, তারা আসবে। তিনি প্রশ্ন করেন, টাকা নেওয়ার বিষয়টা কি আমাদের সংবিধানের সঙ্গে যায়?