চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে চার পুলিশ সদস্যসহ মোট ১৬ জন আহত হয়েছেন। রোববার (১২ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
বহিরাগতদের সঙ্গেই মূলত সমস্যা সৃষ্টি হয় চমেক ছাত্রলীগের। পরে বহিরাগত ও চমেক ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। এমনটাই জানিয়েছেন চমেক ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল মহোদয় হাসপাতালে এসেছিলেন। তিনি যাওয়ার পর চমেক ছাত্রলীগ পরিচয়ে কয়েকজন এবং বহিরাগতরা আমাদের উপর হামলা চালায়। এতে আমাদের ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
জানা যায়, রোববার সকালে চমেক হাসপাতাল পরিদর্শনে যান শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান নওফেল। তার সঙ্গে সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীও ছিলেন। এছাড়া নগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরসহ এমইএস কলেজ, মহসিন কলেজ ও চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্রলীগ কর্মীরাও সেখানে যায়। পরিদর্শন শেষে নওফেল মেডিকেল থেকে বের হওয়ার সময় চমেক ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ পাল্টাপাল্টি স্লোগান দেয়; এক পক্ষ নওফেলের নামে, আরেক পক্ষ মেয়র আ জ ম নাছিরের নামে। পরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন উভয় গ্রুপ।
আরও পড়ুন: চমেক ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ
চমেক ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, এক সময় ছাত্রশিবিরের ঘাঁটি ছিল চমেক হাসপাতাল। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এটি পূর্ণ দখলে নেন। গত ১২ বছরে শিবিরের শেকড় উপড়ে ফেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। চমেকে কোনো সংঘর্ষ ও সংঘাত ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল শিক্ষা কার্যক্রম। এটি চট্টগ্রামের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে নিয়মিত ছাত্রদের দিয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন ও ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। ৮০ দশক থেকে চমেক হাসপাতাল সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন সময়ে নানা রাজনৈতিক পালাবদলেও আ জ ম নাছিরের কাছ থেকে কেউ ছিনিয়ে নিতে পারেনি এ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু গত ১ বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে চমেক হাসপাতালে। এভাবে হাসপাতালের মতো এলাকায় সংঘর্ষ হলে তা সবার জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে হামলায় এক পক্ষের আহতরা হলেন- খোরশেদ বিন মেহেদী, ইমন সিকদার, অভিজিৎ দাশ, ফাহাদুল ইসলাম, হোজাইফা বিন কবির, কনক দেবনাথ ও সাজেদুল ইসলাম হৃদয়।
অপর পক্ষের আহতরা হলেন- সানি হাসনাত প্রান্তিক, ডা. ফয়সাল আহমেদ, ডা. মাসুম বিল্লাহ মাহিন, মাহতাব বিন হাসিম ও ডা. নুর মোহাম্মদ তানজিম।
চমেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহোদয় হাসপাতালের পরিচালকের রুম থেকে বের হওয়ার সময় ছাত্রলীগের দু’গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে পাঁচলাইশ থানার এসআই খালেক, ডিবির দুই পুলিশ সদস্য ও আমি সামান্য আহত হয়েছি। এখন পরস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, চমেক ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। মারামারি থামাতে গিয়ে আমাদের চার পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।