প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের এই সময়ে সুখবর হয়ে এসেছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের তৈরি ভ্যাকসিন। সোমবার (২০ জুলাই) ভ্যাকসিনটি মানুষের জন্য নিরাপদ এবং করোনার বিরুদ্ধে কাজ করতে সক্ষম বলে জানানো হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঠিক কিভাবে এই ভ্যাকসিন মানুষের শরীরে কাজ করবে? কতগুলো ডোজ উৎপাদন করা হবে? কারা আগে পাবে? দাম কেমন পড়বে? চলুন প্রশ্নের উত্তরগুলো জানার চেষ্টা করি।
যেভাবে কাজ করবে
অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিনটির নাম ChAdOx1 nCoV-19. অভুতপূর্ব গতিতে এটার উন্নতি সাধিত হয়েছে। এটি তৈরি করা হয়েছে শিম্পাঞ্জির ঠাণ্ডা লাগার জন্য যে মৌলিক বিষয়টি দায়ী সেটার জীন নিয়ে গবেষণা করে। গবেষণার মাধ্যমে প্রচুর পরিমার্জন ও পরিবর্ধন শেষে মানুষের শরীরে প্রয়োগযোগ্য করে তৈরি করা হয়েছে ভ্যাকসিনটি। সে কারণে একটি মানুষের শরীরে কোনো সংক্রমণ ঘটতে দিবে না এবং একই প্রক্রিয়ায় এটি করোনাভাইরাকেও রুখে দিতে পারবে।
করোনাভাইরাসের যে স্পাইক প্রোটিন মানবদেহের কোষকে আক্রমণ করে সেটা নিয়ে গবেষণা করে সেটার ভিত্তিতে জেনেটিক নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে। সুতরং এটি করোনাভাইরাস রুখে দিতে পারবে এবং করোনাভাইরাসকে রুখে দেওয়ার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারবে।
আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমের মাধ্যমে যে প্রোটিন উৎপাদিত হয় (এন্টিবডি) এবং যে প্রোটিনটি করোনাভাইরাসের উপরিভাগে থাকে সেটাকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে সক্ষম এই ভ্যাকসিন। এন্টিবডিকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার মাধ্যমে ভাইরাসটিকেও অক্ষম করে দেওয়া সম্ভব।
পাশাপাশি আমাদের শরীরের যে টি-সেল রয়েছে (এক ধরনের লোহিত রক্ত কণিকা) যেটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সহায়তা করে এবং ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ ও ধ্বংস করে সেটার সক্ষমতা বাড়াবে এই ভ্যাকসিন।
এটা কতটা নিরাপদ?
অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিনটি মানবদেহের জন্য নিরাপদ। তবে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রীয়া রয়েছে। যেমন এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পর জ্বর কিংবা মাথাব্যাথা হতে পারে। যেটা প্যারাসিটামল সেবনে সেরে যাবে। এই ভ্যাকসিনের আবিস্কারক প্রফেসর সারাহ গিলবার্ট বলেছেন এখনো তাদের অনেক কাজ ও গবেষণা বাকি রয়েছে। সেগুলো সম্পন্ন করে পুরোপুরিভাবে ভ্যাকসিনটিকে প্রস্তুত করেই বাজারে ছাড়া হবে।
শিগগিরই বড় পরিসরে এটার ট্রায়াল শুরু হবে। যেখানে যুক্তরাজ্যের ১০ হাজার, যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ হাজার, ব্রাজিলের ৫ হাজার ও দক্ষিণ আফ্রিকা ২ হাজার স্বেচ্ছাসেবী অংশ নিবেন।
কবে নাগাদ পাওয়া যাবে এই ভ্যাকসিন?
সমস্ত গবেষণা ও প্রক্রিয়া শেষে আশা করা যাচ্ছে চলতি বছরের শেষ দিকেই এই ভ্যাকসিন সীমিত আকারে বাজারে পাওয়া যাবে। পরবর্তী বছরের শুরুতে বড় আকারে পাওয়া যাবে।
কাদের প্রথম দেওয়া হবে এই ভ্যাকসিন?
প্রথমদিকে স্বাস্থ্যকর্মীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এরপর আগামী বছর বিস্তৃতভাবে দেওয়া শুরু হবে।
কতগুলো ডোজ উৎপাদন করা হবে?
যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি ভ্যাকসিনের ১০০ মিলিয়ন ডোজ অর্ডার দিয়ে রেখেছে। নতুন বছরে হয়তো এটার উৎপাদনের সংখ্যা বিলিয়ন ডোজ ছাড়িয়ে যাবে।
দাম কত পড়বে?
এখনো অবশ্য দাম নির্ধারণ করা হয়নি। এটার এখনো অনেক গবেষণা বাকি রয়েছে, ট্রায়াল বাকি রয়েছে। পার্শ্বপ্রতিক্রীয়াগুলো কিভাবে সমাধান করা যায়, সেই বিষয়টি নিয়ে আরো কাজ করতে হবে। এসব কিছু ঠিকঠাকভাবে করার পরেই বাজারে ছাড়া হবে।