‘চুকিয়ে দেবো বেচাকেনা মিটিয়ে দেবো গো/ মিটিয়ে দেবো লেনাদেনা বন্ধ হবে আনাগোনা এই হাটে/ তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে/ তারার পানে চেয়ে চেয়ে, নাইবা আমায় ডাকলে/ যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে’। এভাবেই কবিতার মাধ্যমে নিজের না থাকার বেদনার ছন্দ উচ্চারণ করেছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
ঠিক কবিগুরুর কবিতার মতো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) অফিসেও শুরু হয়েছে বেদনার ছন্দ। কারণ যার হাত ধরে বদলে গেছে চট্টগ্রাম, হয়তো তিনি আর অফিস করবেন অল্প কয়েকদিন। এরপর সেই চিরচেনা করপোরেশন অফিসে মেয়রের ওই চেয়ারে হয়তো তিনি বসবেন না। সরকার যদি চায় তবে প্রশাসক হিসেবে বা চলতি দায়িত্বে থাকতে পারেন কিছুদিন। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর।
বলছি চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের কথা। করোনাকালে নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় চসিক পর্ষদের এই মেয়াদপূর্তি লগ্নে ফের নির্বাচন নিয়ে আছে নানাজনের নানান ভাবনা। তবে সেসব নিয়ে কৌতুহল নেই মেয়র নাছিরের। শেখ হাসিনার একজন কর্মী হিসেবে কেবল কাজ করেই চলেছেন তিনি।
৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট পেয়ে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিলের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী এম মনজুর আলমকে পরাজিত করে মেয়র হন আ জ ম নাছির উদ্দীন। সে বছরের ৬ মে শপথ নিলেও ২৬ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ২০১৫ সালের ৬ আগস্ট চসিকের প্রথম সাধারণ সভা হয়। সে হিসেবে মেয়র নাছিরের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৫ আগস্ট।
ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশনে প্রশাসক বসানোর কথা বলেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। যদিও পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবুজ সংকেতের উপর। এবারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন দলীয় মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীকে।
এর আগে নির্বাচিত হয়ে ‘রকেট’ গতিতে কাজ করে সারাদেশে আলোচনায় আসেন চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী দায়িত্বগ্রহণের কয়েকদিনের মধ্যেই চট্টগ্রাম নগরকে বিলবোর্ডমুক্ত করেছিলেন তিনি। যদিও এ কাজটি অন্য কারো পক্ষে সম্ভব হয়নি অতীতে।
এরপর দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের মাসোহারা নেওয়ার কথা বলে ফের আলোচনায় আসেন মেয়র নাছির। তার মেয়াদে বিভিন্ন সময় তার নিজ দলের অনেকেই তার কাজে বাধাগ্রস্থ করেছে। করেছে নানা প্রতিবন্ধকতা ও সমালোচনা। তবে সবকিছু বিবেচনা করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা করেছেন, তা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জন্য মাইলফলক।
পাঁচ বছরে ছয় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন ও সেবা খাতের প্রকল্পের কাজ করেছেন চসিক মেয়র আ জ ম নাছির, যা বিগত চল্লিশ বছরেও হয়নি। বাড়িয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা। ৩২ বছর পর চসিক অর্গানোগ্রাম অনুমোদন করালেন তিনি। নগরে বহুল প্রতীক্ষার বাস টার্মিনাল, স্লটার হাউস নির্মাণসহ অনেক প্রত্যাশা পূরণেই পথ দেখালেন তিনি। সঙ্গে করোনাযুদ্ধে চট্টগ্রাম শহরে প্রধানমন্ত্রীর সেনাপতি হিসেবে মেয়র নাছিরের প্রশংসা দলমতনির্বিশেষে মানুষের মুখে মুখে।
গত পাঁচবছরে দেখা গেছে, মেয়র নাছির বিভিন্ন আয়বর্ধক প্রকল্প গ্রহণ করেন। এই সময়কালের মধ্যে চসিকের ‘ম্যাচিং ফান্ড’ বেড়েছে। পুনর্মূল্যায়নের মধ্যদিয়ে বেড়েছে কর আদায়। দীর্ঘদিন ধরে অনাদায়ী কর যেমন- চট্টগ্রাম বন্দরের যথাক্রমে ১০৭ কোটি ও রেলওয়ের ৩০ কোটি টাকাসহ বিপুল নগর শুল্ক আদায় হয়েছে। করের আওতায় ছাড় দেওয়া হয়েছে নিম্নআয়ের মানুষকে। সড়ককে ঘিরে দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পও হয়। শহরের তিন চতুর্থাংশ কাঁচা রাস্তাকে পাকা করা হয়।
চসিককে স্বাবলম্বী করতে প্রকল্প গ্রহণ, শিক্ষা বিভাগে শিক্ষা নীতিমালা প্রণয়ণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ, সহশিক্ষা চালুকরণ, শিক্ষাখাতে নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরন, পাঠদানের অনুমতি লাভ, নতুন ভবন নির্মাণ ও পুরনো ভবন সংস্কার ও স্বাস্থ্য বিভাগকে ঘিরেও নেওয়া হয় প্রকল্প।
এছাড়া আবশ্যিক কাজের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর বৃহত্তম ভাস্কর্য নির্মাণ, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পে শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর স্মরণে ‘রুপালী গিটার’ ভাস্কর্য স্থাপন, মুক্তিযুদ্ধ ও মনীষী স্মারক স্থাপন, জাতীয় পর্যায়ের একুশে বইমেলা চালু, মুক্তিযোদ্ধা ও সেবকদের আবাসনসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের পাশে ছিলেন চসিক মেয়র। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হওয়ায় বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালীদের চক্ষুশূলও হয়েছিলেন তিনি।
গত পাঁচ বছরে মেয়র নাছির নগরের উন্নয়নে কি কি করেছেন, তার চুম্বক অংশ জয়নিউজের পাঠকদের জন্য তুলো ধরা হলো—
ডোর টু ডোর প্রকল্প
২০১৫ সালের আগে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে দেখা যেত উন্মুক্ত ডাস্টবিন। এছাড়া যেখানে সেখানে ফেলা হতো ময়লা-আবর্জনা। ময়লার দুর্গন্ধে অনেক স্থানে চলাচল করাও কষ্টকর ছিল নগরবাসীর জন্য। কিন্তু মেয়র নাছির দায়িত্ব গ্রহণের পর ঘোষণা দেন ডোর টু ডোর প্রকল্পের। নগরবাসীর ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয় ৯ লাখ ময়লা রাখার প্লাস্টিক বিন। এ উদ্যোগের ফলে গৃহস্থালী বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে সহজে। কেউ আর এখন ময়লা-আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলে না। একইসঙ্গে শহরের প্রধান সড়কগুলোর পাশে ময়লা ফেলার জন্য স্থাপিত কন্টেইনার এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে স্থাপিত ডাস্টবিনও অপসারণ করেছে সিটি করপোরেশন।
বিলবোর্ড উচ্ছেদে শতভাগ সফল
দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই চট্টগ্রামের হারানো সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে মাত্র এক মাসের মধ্যে প্রায় চার হাজার বিলবোর্ড, ইউনিপোল, মেগাসাইন অপসারণ করেন মেয়র নাছির। এরপর থেকে সিটি করপোরেশনের সীমার মধ্যে আর কোনো বিলবোর্ড স্থাপিত হয়নি। যা মেয়র নাছিরের সফলতাগুলোর মধ্যে অন্যতম। পরে মেয়র নাছিরকে অনুসরণ করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের মেয়রও ঢাকা শহরের বিলবোর্ড উচ্ছেদ করে। আলকরণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেক সোলেমান সেলিম বলেন, একসময় নগরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঢেকে গিয়েছিল বড় বড় বিলবোর্ডে। দায়িত্বগ্রহণের পর মেয়রের নির্দেশে শুরু হয় এসব বিলবোর্ড উচ্ছেদ। বলা যায়, নগর এখন প্রায় জঞ্জালমুক্ত।
রাতেই পরিষ্কার হচ্ছে শহর
দিনের বেলায় শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে গেলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো পরিচ্ছন্ন কর্মীদের। মেয়র নাছির দায়িত্ব গ্রহণের পর রাতের ময়লা রাতেই অপসারণের উদ্যোগ নেন। এছাড়া শহর পরিচ্ছন্ন করতে রাতেই পরিচ্ছন্ন কর্মীদের দায়িত্ব বন্টন করে দেন। বর্তমানে এক হাজার ৯০০ জন সেবক প্রতিরাতেই নগরের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে থাকে। চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন চট্টগ্রাম শহর আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন হয়েছে।
আলোকায়ন
চসিকের বিদ্যুৎ শাখা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ১ হাজার ৫৫৬টি সুইচিং পয়েন্টের মাধ্যমে ৫১ হাজার এনার্জি, টিউব, হাই–প্রেসার সোডিয়াম, এলইডি ও অন্যান্য বাতি দিয়ে সড়ক আলোকায়নের ব্যবস্থা রয়েছে। গত পাঁচ বছরে নগরের গুরুত্বপূর্ণ প্রধান প্রধান সড়কে ৪ কোটি ৭৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকায় ৭০৫টি এলইডি বাতি স্থাপন করা হয়েছে এবং আরো ২ কোটি ৩৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকায় ৩৮১টি এলইডি বাতি স্থাপনের কাজ শেষপর্যায়ে আছে। এছাড়া ২৭ কোটি ২ লাখ ১৯ হাজার টাকা ব্যয়ে সোলার/নন-সোলার এলইডি স্ট্রিটলাইট প্রোগ্রাম ইন সিটি করপোরেশন (এস.এস.এল.পি.সি.সি.)-এর আওতায় ২ কি.মি. সড়কে ১০৩টি সোলার প্যানেলযুক্ত এলইডি লাইট এবং ৫৬ কি.মি. সড়কে ৩ হাজার ১৭টি নন-সোলার এলইডি এনার্জি সেভিং লাইট স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে জাইকার অর্থায়নে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৬ কিলোমিটার প্রধান সড়ক আলোকায়ন এবং ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ৪০০ কিলোমিটার সড়ক আলোকায়ন প্রকল্প পাস হয়েছে। যা করোনা পরিস্থিতির কারণে শুরু হতে পারেনি।
হকারদের শৃঙ্খলায় ফেরানো
ফুটপাত দখলমুক্ত করে হকারদের শৃঙ্খলায় নিয়ে আসা মেয়র নাছিরের একটি অন্যতম সাফল্য। এ বিষয়ে মেয়র নাছির বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হকাররা ফুটপাত ও সড়কে বসে ব্যবসা করতো। এটা নিয়ে তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছি। তাদের বুঝিয়েছি। তাদের ব্যবসা করার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছি। এখন তাদের মধ্যে শৃঙ্খলা এসেছে। ফলে তারা ব্যবসাও করছেন, সাধারণ পথচারীদের সমস্যাও অনেক কমে এসেছে।
নগরজুড়ে সবুজায়ন
যেসব এলাকার ফুটপাত দিয়ে দুর্গন্ধে হাঁটাচলা করা যেত না, সেখানে এসেছে নান্দনিকতার ছোঁয়া। সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় সবুজে সেজেছে নগর। এয়ারপোর্ট রোড, টাইগারপাস রোড, লালখান বাজার, কাজীর দেউরি, আউটার স্টেডিয়াম, আন্দরকিল্লা, জামালখান, চট্টেশ্বরী ও প্রবর্তক মোড়সহ নগরের সবগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে। ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কে নৌকার ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃষ্টিনন্দন ম্যুরাল তৈরি করা হয়েছে। জাতিসংঘ পার্ক সংস্কার করা হয়েছে।
এছাড়া বারিক বিল্ডিং মোড়, টাইগারপাস মোড়, কাজীর দেউরি মোড়, আন্দরকিল্লা মোড়, নিউমার্কেট মোড়, রেডিসন ব্লু মোড়, জিইসি মোড়ের মতো গোলচত্বরগুলোকে সাজানো হয়েছে ভিন্ন আঙ্গিকে। যাত্রীদের অপেক্ষার সুবিধার্থে আধুনিক যাত্রী ছাউনি স্থাপন করা হয়েছে। নিউমার্কেট থেকে পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন সড়ক, জিপিও এবং শাহ আমানত শপিং কমপ্লেক্স পর্যন্ত এলাকার প্রায় ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার রাস্তার মিড আইল্যান্ড ও ফুটপাতের সৌন্দর্যবর্ধন করা হচ্ছে। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের পূর্ব এবং উত্তর পাশের ফুটপাতসহ আউটার স্টেডিয়ামে বাগান নির্মাণ করা হয়েছে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত
স্বাস্থ্যখাত নিয়ে মেয়র নাছির জয়নিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন প্রতিবছর স্বাস্থ্যখাতে ১৩ কোটি এবং শিক্ষাখাতে ৪৩ কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। কিন্তু নগরবাসীর কাছ থেকে গৃহকর বাবদ এই ভর্তুকির টাকাও আসছে না। তারপরও শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে আমাদের সফলতা অনেক। ইপিআই টিকা কার্যক্রমে আমরা একাধিকবার পুরস্কার পেয়েছি। সমস্যার পাহাড় আর সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকা দেনা নিয়ে আমি দায়িত্বগ্রহণ করেছিলাম। দুর্নীতি অনিয়মে ভরা ছিল প্রতিষ্ঠানটি। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সবগুলো সেক্টরে পরিবর্তন আনতে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি। এখন রাজস্ব আয়ও বেড়েছে।
রাস্তাঘাট ও ড্রেনের সংস্কার
মেয়র নাছিরের মেয়াদে চট্টগ্রামে রাস্তাঘাট উন্নয়নে ব্যাপক সফলতা রয়েছে। পুরো চট্টগ্রামে নিজে সবকিছু তদারকি করেছেন। ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আগ্রাবাদ এক্সেস রোড ও পিসি রোডের কাজ শেষ হয়েছে। মেয়র বলেন, শহরের সড়ক সংস্কার ও নতুন নতুন রাস্তাঘাট করেছি। দুইশ কোটি টাকা ব্যয়ে রাস্তা সংস্কার এবং কার্পেটিং কাজে ব্যবহৃত কংক্রিট, পাথর ও বিটুমিন মিশ্রিত উপাদান তৈরির আধুনিক অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করেছি। শহরে প্রয়োজন বিরেচনায় ড্রেন ছিল এক চতুর্থাংশের মতো। দায়িত্বগ্রহণের পর পর্যায়ক্রমে পুরনো ড্রেনগুলো সংস্কার এবং নতুন আরসিসি ড্রেন করা হয়েছে। অনেক জায়গায় ড্রেনের ওপর স্ল্যাব দিয়ে ফুটপাত করা হয়েছে। ফুটপাতে টাইলস লাগানো হয়েচে।যানজট নিরসনে যানবাহনের জন্য সড়কে জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণে প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে।
স্বপ্নের সুইমিংপুল
একসময় আউটার স্টেডিয়াম এলাকা ছিল নোংরা এক মাদকের আখড়া। এখন সেখানে শোভা পাচ্ছে বিশ্বমানের সুইমিংপুল। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অর্থায়নে ১১ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় সুইমিংপুলটি। নগরের আউটার স্টেডিয়ামের পাশে নির্মিত এই সুইমিং কমপ্লেক্সে পুলের আয়তন ১১০০ বর্গমিটার। যার দৈর্ঘ্য ৫০ মিটার ও প্রস্থ ২২ মিটার, রয়েছে আটটি লেন। প্রায় ২০ লাখ লিটার পানি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন পুলের গড় গভীরতা ২ মিটার। আন্তর্জাতিকমানের পুলটির মূল প্রবেশপথ পূর্ব দিকে। যার পূর্ব ও পশ্চিম দুই পাশে রয়েছে গ্যালারি। যেখানে বসতে পারবে দেড় হাজার দর্শক। নিচে রয়েছে ডিপ টিউবওয়েল, ফিল্টেশন প্ল্যান্ট এবং ২৫০ কেভি সাবস্টেশন।
এছাড়া পশ্চিম পাশে রয়েছে ওয়াটার রিজার্ভার। এই সুইমিংপুলের পানি প্রসেসিং সিস্টেম হলো- ডিপ টিউবওয়েল থেকে প্রথমে পানি যাবে রিজার্ভারে। তারপর ফিল্টেশন প্ল্যান্ট হয়ে বিশুদ্ধ পানি যাবে সুইমিংপুলে। পুল থেকে আবার ওভারফ্লো হয়ে ড্রেনের মাধ্যমে পানি যাবে বেনচিং ট্যাংকে। পরে সেই পানি আবার রিসাইক্লিং হয়ে যাবে পুলে। পুলের পশ্চিম পাশে রয়েছে ড্রেসিং রুম, অফিস কক্ষ এবং টয়লেট। সবমিলিয়ে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এই সুইমিংপুলে।
দেশে সর্ববৃহৎ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন
মুজিববর্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সর্ববৃহৎ ভাস্কর্য স্থাপন করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখতে মেয়র আ জ ম নাছিরের উদ্যোগে এ ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (সাবেক পোর্ট কানেকটিং) সড়কে ভাস্কর্যটি স্থাপন করার কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে। সাদা কংক্রিটের তৈরি ভাস্কর্যটির কাজ ইতোমধ্যে কাজ শেষ পর্যায়ে। বেইজসহ ভাস্কর্যটির উচ্চতা সাড়ে ২৭ ফুট। আর ভাস্কর্যটির উচ্চতা সাড়ে ২২ ফুট।
৫ বছর সম্মানি তুলে দিয়েছেন অসহায়দের হাতে
মেয়র নাছির মাসে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা সম্মানি ও অন্যান্যসহ ২ লাখ টাকা পেলেও গত পাঁচবছর এক টাকাও নিজের পকেটে নেননি। সম্মানির সেই টাকা তিনি দান করেন অটিজম স্কুল, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অসহায় শিক্ষার্থী ও অসুস্থ রোগীদের জন্য। এ পর্যন্ত নাছিরের মেয়াদের পুরো সম্মানির টাকা অসহায়দের মাঝে বিতরণ করেন তিনি। এছাড়া তিনি সিটি করপোরেশনের গাড়ি ব্যবহার করেন না। জ্বালানি খরচও বহন করেন নিজের পকেট থেকে।
করোনাকালে চট্টগ্রামে ছিলেন কেবল আ জ ম নাছির
করোনাকালে নগরের সব জনপ্রতিনিধি যখন ঘরবন্ধি ছিলেন তখন মৃত্যুঝুঁকি উপেক্ষা করে সাধারণ মানুষের কাতারে ছিলেন কেবল সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। করোনা শুরু হওয়ার দিন থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেকটি দিন তার কেটেছে মানুষের সেবায়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চট্টগ্রামে ঘুরে ঘুরে মানুষকে সচেতন করেছেন। অসহায় ও মধ্যবিত্তদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত অফিস করে দাপ্তরিক সব কাজ সম্পন্ন করেছেন। শুধু নিজ দল নয় সবদলের মানুষের প্রশংসা চেয়েছেন মেয়র নাছির। যদিও নিজ দলের একটি গোষ্ঠীর সমালোচনা তার পিছু ছাড়েনি।
শুধু এসব প্রকল্প নয়, গত পাঁচ বছরে মেয়র নাছির চট্টগ্রামকে যেভাবে বদলে দিয়েছেন চট্টগ্রামবাসী তাকে আজীবন মনে রাখবেন।
আবার ফিরে আসি কবিগুরুর সেই কবিতার ছন্দে। ‘তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে/ তারার পানে চেয়ে চেয়ে, নাইবা আমায় ডাকলে/ যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে’।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের জন্ম চট্টগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। বাবা সৈয়দ মঈনুদ্দিন হোসাইন ছিলেন একজন শিক্ষানুরাগী এবং মা ফাতেমা জোহরা বেগম গৃহিনী। মেয়র নাছির ১৯৭৩ সালে সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ডিগ্রি পাস করেন। স্কুলজীবন থেকেই তিনি ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে জড়িত হন। স্কুলশিক্ষার্থী হিসেবে যোগ দেন উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মিছিলে। ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও নগর ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৮০ ও ১৯৮২ সালে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৮৩ ও ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি হন। তিনি পর পর দুইবার মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৩ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন।
রাজনীতির বাইরে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক ফোরামের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।