প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে (চসিক) স্বনির্ভর করতে পেট্রোল পাম্প স্থাপন করেছিলেন। এতে করে নিজস্ব ফিলিং স্টেশন থেকে জ্বালানি নিলে একদিকে খরচ কমবে, পাশাপাশি সেই টাকা ঘুরে ফিরেই আবার চসিকে আসবে— এ ধারা অব্যাহত ছিল পরবর্তী মেয়রদের সময়ও।
কিন্তু নতুন প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন সেই নিয়ম থেকে সরে এসেছেন। তিনি বাড়তি দামে হাক্কানী ফিলিং স্টেশন থেকে জ্বালানি তেল নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন, তাও আবার বিনা টেন্ডারে।
অভিযোগ উঠেছে, হাক্কানী ফিলিং স্টেশনের মালিক চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের মালিকানাধীন মেয়র হজ্ব কাফেলার পরিচালক। মেয়র হজ্ব কাফেলাও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
জানা যায়, বেসরকারি ফিলিং স্টেশনে প্রতি লিটার ডিজেল ৬৫ টাকা, পেট্রোল ৮৬ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা, মবিল (লুব) ২৩০ টাকা, সুপার ভি (৫ লিটার ক্যান) ৪৭০ টাকা, সুপার ভি (৫ লিটার ক্যান) ২ হাজার ২০০ টাকা, সুপার ভি (১৫ বালতি) ৬২৩০ টাকা, ভিসকো বাইক (১ লিটার ক্যান) ৪৭০ টাকা, ব্রেক অয়েল (৫০০ মি.লি.) ২২০ টাকা, ব্রেক অয়েল (পাওয়ার এর জন্য) ৫০০ মি.লি. ৫৩০ টাকা, হাইড্রোলিক ১ লিটার ২৩০ টাকা ও গ্রীস (প্রতি পাউন্ড) ১৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে চসিকের ফিলিং স্টেশনে ডিজেল প্রতি লিটার ৬২ দশমিক ৫১ টাকা, পেট্রোল ৮১ দশমিক ৫৬ টাকা, অকটেন ৮৪ দশমিক ৪৬ টাকা, মবিল ২১৪ দশমিক ২৬ টাকা, ব্রেক অয়েল ২০৫ টাকা নেওয়া হয়।
সেই হিসেবে চসিকের ফিলিং স্টেশনের দামের চেয়ে লিটার প্রতি ডিজেলে বাড়তি ৩ টাকা, পেট্রোলে ৫ টাকা, অকটেনে ৫ টাকা, মবিল (লুবে) ও ব্রেক অয়েলে ১৫ টাকা করে দিতে হবে হাক্কানী ফিলিং স্টেশনকে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে নিজস্ব ফিলিং স্টেশন থাকতে বেসরকারি ফিলিং স্টেশন থেকে কেন জ্বালানি নেওয়া হচ্ছে? তাও টেন্ডার প্রক্রিয়া ছাড়াই।
এ ব্যাপারে জানতে জয়নিউজ কথা বলে হাক্কানী ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার প্রণব দে’র সঙ্গে। তিনি বলেন, বুধবার (১৯ আগস্ট) থেকে সিটি করপোরেশনকে চারটি শর্তে আমরা জ্বালানি দিচ্ছি।
‘শর্তগুলো হলো— বিল থেকে ট্যাক্স ও ভ্যাট কাটা যাবে না, ক্রেডিট মেমোতে স্বাক্ষরকারীদের নমুনা স্বাক্ষর ও সীলসহ নির্দিষ্ট গাড়ির নাম্বার প্রেরণ করা, ক্রেডিট মেমো বই যথাযথ সংরক্ষণ করতে হবে, যেন কেউ অপব্যবহার করতে না পারে এবং প্রতিদিন বিল দেওয়া হবে, ওই বিল তিনদিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। হাক্কানী ফিলিং স্টেশনের মালিক কে— এমন প্রশ্নে প্রণব বলেন, আবদুল কাদের সাহেব।
এদিকে সিটি করপোরেশন কোনো মালামাল ক্রয় করলে তার টেন্ডার হওয়ার নিয়ম থাকলেও সে নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন হাক্কানী ফিলিং স্টেশন থেকে জ্বালানি সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে অভিযোগ কর্মকর্তাদের। এতে করপোরেশনের জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি চসিকের ফিলিং স্টেশন ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন জয়নিউজকে বলেন, আমরা এক সপ্তাহের জন্য হাক্কানী থেকে তেল নিচ্ছি। মূলত সপ্তাহে কতগুলো তেল প্রয়োজন, সেটি জানার জন্যই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখানে দুর্নীতি করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। আর হাক্কানী ফিলিং স্টেশন বাকিতে তেল দিবে তাই তাদের কাছ থেকে নিয়েছি।