আমরা যুদ্ধ চাই না। কিন্তু যদি বাংলাদেশ কখনো বহিঃশত্রুর আক্রমণ দ্বারা আক্রান্ত হয় তা মোকাবিলা করার মতো সক্ষমতা আমরা অর্জন করতে চাই। তাই আমরা সমুদ্র সীমা রক্ষার জন্য নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলছি।
বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) নৌবাহিনীর জাহাজ বানৌজা ওমর ফারুক, আবু উবাইদাহ, প্রত্যাশা, দর্শক এবং তল্লাশী-এর কমিশনিং দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে বলেছেন সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরীতা নয়। আমরা সেই নীতিতেই বিশ্বাস করি। জাতির পিতা বলে গেছেন– “ভূরাজনৈতিক প্রয়োজনে একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠন করা হবে। সে লক্ষ্যে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যুদ্ধ জাহাজ সংগ্রহ এবং বিদ্যমান জাহাজ সমূহের অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আমরা বাস্তবমুখী পরিকল্পনা নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু নৌ বাহিনী বলে না, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য তিনি যে আমাদের প্রতিরক্ষা নীতিমালা করে দিয়ে গিয়েছিলেন ১৯৭৪ সালে তার আলোকে আমরা ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমরা যে ৫টি অত্যাধুনিক যুদ্ধ জাহাজ বানৌজা ওমর ফারুক, আবু উবাইদাহ, প্রত্যাশা, দর্শক এবং তল্লাশী আমরা নৌবাহিনীতে সংযোজন করতে সক্ষম হলাম। আপনারা জানেন গণচীন থেকে তৈরি করা আধুনিক সমরাস্ত্র সজ্জিত দুইটি ফ্রিগেড ও একটি অত্যাধুনিক করবেট এবং আমাদের নিজস্ব খুলনা শিপইয়ার্ডে তৈরি দুইটি আধুনিক জরিপ জাহাজ বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নৌবাহিনীর ক্ষমতাকে আরও জোরদার করবে এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
নিজস্ব ইয়ার্ডে জাহাজ তৈরির সক্ষমতা এটা আমাদের আত্মবিশ্বাসকে বলীয়ান করে। আমরা হয়তো ভবিষ্যতে অন্য দেশের জন্যও জাহাজ তৈরি করতে পারবো এবং দিতে পারবো। সেই সক্ষমতা আমরা অর্জন করবো।
সমুদ্র সীমা রক্ষার পাশাপাশি সমুদ্র সম্পদ আহরণ করে দেশকে সমৃদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সব সময় চেয়েছি আমাদের এই সমুদ্র সীমা শুধু রক্ষা করা না, সমুদ্র সম্পদটাও যেন আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাজে লাগে, তার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে আমরা ব্লু ইকোনমি এই ধারণা নিয়েছি এবং তার ওপর আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
নৌবাহিনীর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নৌবাহিনীর সদস্যরা লোক চক্ষুর অন্তরালে থেকে প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে শুরু করে সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা বিধান করে যাচ্ছেন। এটা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।
পতেঙ্গার বানৌজা ঈসা খান নৌ জেটিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জাহাজসমূহের অধিনায়কগণের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল।
নতুন কমিশনিং পাওয়া দুটি আধুনিক ফ্রিগেট বানৌজা ওমর ফারুক, আবু উবাইদাহ, একটি করভেট যুদ্ধজাহাজ প্রত্যাশা এবং দুটি জরিপ জাহাজ বানৌজা দর্শক ও তল্লাশী বাংলাদেশের জলসীমা সুরক্ষায় এবং নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
এছাড়া যুদ্ধজাহাজগুলো শত্রু বিমান, জাহাজ এবং স্থাপনায় আঘাত হানতে সক্ষম আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন কামান, ভূমি থেকে আকাশে এবং ভূমি থেকে ভূমিতে উৎক্ষেপণযোগ্য মিসাইল, অত্যাধুনিক থ্রিডি রাডার, ফায়ার কন্ট্রোল সিস্টেম, রাডার জ্যামিং সিস্টেমসহ বিভিন্ন আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জামাদিতে সুসজ্জিত। যুদ্ধজাহাজগুলো ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম।
জয়নিউজ/পিডি