ঘাসের চাষাবাদ শিখতে এবার ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে বিদেশ সফরে যাচ্ছেন ৩২ জন সরকারি কর্মকর্তা। অর্থ অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করা হবে, এমন প্রস্তাবসহ একটি প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খামারি পর্যায়ে উচ্চ উৎপাদনশীল জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয় করার মাধ্যমে গবাদি প্রাণির পুষ্টির জোগান দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই সফরের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। খামারিদের প্রাণীপুষ্টি সংক্রান্ত আধুনিক পদ্ধতি ও কৌশলবিষয়ক প্রশিক্ষণ দিতে হলে কর্মকর্তাদের বিদেশে গিয়ে বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হবে।
সূত্র জানায়, ২৫ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের প্রকল্পে আবশ্যিকভাবে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে সেটি মানা হয়নি। প্রকল্পটি সম্প্রসারণধর্মী হওয়ায় সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজন নেই বলে দাবি কর্তাব্যক্তিদের।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় ঘাস চাষে বিদেশ সফর নিয়ে তেমন কোনো আপত্তি তোলা হয়নি।
সেই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, উন্নত মানের ঘাস চাষাবাদ শিখতে বিদেশ যাবেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, পরিকল্পনা কমিশন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং এই প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মোট ৩২ জন কর্মকর্তা।
মোট ১০১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটির নামকরণ করা হয়েছে ‘প্রাণীপুষ্টির উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাসের চাষ সম্প্রসারণ ও লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর।’ আগামী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পের আওতায় সাভারে কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে স্থায়ী জার্ম প্লাজম নার্সারি স্থাপন, খামারি পর্যায়ে ৮ হাজার ৯৭০টি উচ্চ উৎপাদনশীল উন্নত জাতের স্থায়ী বা অস্থায়ী ঘাসের প্রদর্শনী প্লট স্থাপন, বিজ্ঞানসম্মত ও আধুনিক পদ্ধতিতে কাঁচাঘাস সংরক্ষণের জন্য ১৭ হাজার ৯৪০টি খামারে লাগসই প্রযুক্তি (সাইলেজসহ) হস্তান্তর, অধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ ঘাসের বীজ বিতরণ, ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স খাদ্য এবং কৃমিনাশক বিতরণ, কমিউনিটি এক্সটেনশন এজেন্ট নির্বাচন, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সাবেক সভাপতি ও পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, ঘাস চাষ এমন কোনো প্রযুক্তিগত বিষয় নয়। এটার জন্য বিদেশ যাওয়ার কোনো মানে হয় না। এই টাকা গবেষণায় ব্যয় করা উচিত। তাহলে দেশ আরো উপকৃত হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার বলেন, দেশে ঘাস চাষ জনপ্রিয় না হওয়াতে গরুর জন্য যে আলাদা ঘাসের প্রয়োজন, সেটি মানুষের ধারণার মধ্যে নেই। এ প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নত মানের ঘাস চাষ ছড়িয়ে দেয়া হবে এবং বেশি বেশি দুধ পেতে হলে এটার বিকল্প নেই। চাষাবাদ পদ্ধতি দেখতে এবং টেকনিক্যাল কিছু ব্যাপার থাকায় বিদেশ সফরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।