নগরের প্রতিবছর রাস্তা মেরামত করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। তবে শত চেষ্টার পরেও রাস্তা বেশিদিন টিকছে না। কারণ বর্ষায় জলে ডুবছে নগর। এতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বিটুমিনের রাস্তা। কারণ পানি যে বিটুমিনের শত্রু!
অপরদিকে পানির সঙ্গে থাকতে ভালোবাসে কংক্রিট। সিমেন্টের শক্তিও পানিতে বাড়ে। তাই টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি রাস্তা নির্মাণের জন্য কংক্রিট বা সিসি ব্লক জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ব্যাপারে চসিকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি রেজাউল করিম জয়নিউজকে বলেন, বিটুমিনের রাস্তা পানিতে বেশি দিন টিকে না। তাই প্রতিবছর বিটুমিনের রাস্তা মেরামত করতে হয়। এতে একদিকে জনদুর্ভোগ হয়, অন্যদিকে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। রাস্তা মেরামত থেকে মুক্তি পেতে হলে কংক্রিট বা সিসি ব্লক দিয়ে রাস্তা তৈরি করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন অথবা জলজটের কারণে রাস্তাগুলা পানিতে ডুবে যায়। অথচ বিটুমিনের শত্রু পানি। তাই নগরের নিম্ঞ্চনালের রাস্তাগুলো বিটুমিনে না করে সিসি ব্লক দিয়ে করা যায়। তাহলে রাস্তাগুলো অনেক টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী হবে। সিসি ব্লকের রাস্তা প্রতিবছর মেরামত করতে হয় না। তবে সিসি ব্লকে কাজের শুরুতে ব্যয় একটু বেশি। কিন্তু রাস্তা নির্মাণের পর আর ব্যয় হবে না। একবার সিসি ব্লকের রাস্তা তৈরি করা গেলে বিশ বছরেও আর সেই রাস্তায় কোনো কাজ করতে হবে না।
তিনি বলেন, নগরে দেখা যায় সেবা সংস্থাগুলো প্রতিনিয়ত রাস্তা কাটছে। অথচ সিসি ব্লক দিয়ে করলে রাস্তা কাটতে হয় না। পুনরায় রাস্তায় সিসি ব্লকগুলো বসানো যায়। ভবিষ্যতে জলবদ্ধতা বাড়ার শঙ্কা থাকায় নগরের নিম্ঞ্চনালে সিসি ব্লক করা জরুরি।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরনগরী এবং ট্রাকের শহর। এখানে ভারি গাড়ির চলাচল বেশি। হেভিওয়েট যানবাহনের কারণেও বিটুমিনের রাস্তা উঠে যায়। তাই সিসি ব্লক দিয়ে রাস্তা তৈরি জরুরি হয়ে পড়েছে। সিসি ব্লক তৈরি করতে প্রয়োজন বালি, সিমেন্ট ও সিলেটের নুডিপাথর। তবে লবণাক্ত বালি দিয়ে সিসি ব্লক তৈরি করা যাবে না বলে সতর্ক করেন চসিকের এ প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, কংক্রিটের রাস্তায় যেহেতু বছরের পর বছর কাজ করতে হয় না তাই এটি সাশ্রয়ী। সিসি ব্লকে ব্যবহার করা যাবে দেশে উৎপাদিত সিমেন্ট। এটি দেশের অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করবে। একইসঙ্গে পাল্টে দিবে নগরের রাস্তার চেহারা।
সবচেয়ে বড় কথা, সিসি ব্লকের রাস্তায় দূর হবে নগরবাসীর দুর্ভোগ। এ সড়ক শতভাগ পুনর্ব্যবহারযোগ্য। এটি ২০ শতাংশ জ্বালানিসাশ্রয়ী। এ সড়ক বিটুমিন সড়কের তুলনায় সাড়ে পাঁচ গুণ জ্বালানিসাশ্রয়ী। আবার কংক্রিটের সড়কে দুর্ঘটনার শঙ্কাও কম।
এ ব্যাপারে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্ণেল মহিউদ্দিন আহমেদ জয়নিউজকে বলেন, সিসি ব্লক দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করলে প্রথমদিকে বেশি অর্থ ব্যয় হবে। তবে পরবর্তীতে কমে যাবে। সিসি ব্লক রাস্তার জন্য টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী বলে তিনি স্বীকার করেন।